উই আর ফ্রেন্ডস অফ কুরআন
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ،
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى،
وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا।
বন্ধুগণ!
আজ আমি তোমাদের সামনে দাঁড়ালাম কোনো মোল্লার টুপি পরে নয়, কোনো পীরের আসন ধরে নয়, কোনো গোষ্ঠীর পতাকা উড়িয়ে নয়—বরং দাঁড়ালাম নগ্ন সত্যকে বুক পেতে বলার জন্য। কারণ সত্যের ভাষা কখনো ভীরু নয়, সত্যের শব্দ কখনো কোমল নয়, সত্যের ডাক সবসময় বজ্রের মতন গর্জে ওঠে।
বন্ধুগণ!
অনেকে আমাকে বলে—“তুমি আহলে কুরআন!” কেউ আবার বলে—“তুমি আহলে হাদিস নও, আহলে সুন্নাত নও, আহলে মাজহাব নও।” আমি বলি, ধিক্কার তোমাদের এই নামের রাজনীতিকে! আমি কোনো আহলেই নই, আমি শুধু সেই আহলে, যে আল্লাহর আহল—যে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে মানে, যে কুরআনের সাথে মিথ্যা মিশায় না, যে কুরআনের সত্যকে কোনো দলিলের আড়ালে চাপা দেয় না।
বন্ধুগণ!
তোমরা আমাকে কটাক্ষ করো, বলো—“কুরআন একা বুঝা যায় না!” অথচ আল্লাহ নিজেই তো ঘোষণা করেছেন—هَٰذَا بَيَانٌ لِلنَّاسِ وَهُدًى—“এটা মানুষের জন্য স্পষ্ট বিবৃতি ও পথনির্দেশ।” তাহলে কিসের জন্য তোমাদের মোল্লা দরকার? কিসের জন্য তোমাদের অন্ধ মাজহাব দরকার? কিসের জন্য তোমাদের কবরের ফাজায়েল দরকার?
বন্ধুগণ!
তোমরা বলো, আমরা আহলে হাদিস। কেউ বলে, আমরা আহলে মাজহাব। কিন্তু আমি দেখি—তোমরা আসলে আহলে বইয়ের দোকান, আহলে ব্যবসা, আহলে রাজনীতি! তোমাদের নামের আড়ালে লুকানো আছে ক্ষমতার খেলা, মসজিদের নিয়ন্ত্রণ, মানুষের মস্তিষ্কের তালা। তোমরা সত্যকে বিক্রি করো, মিথ্যাকে সাজিয়ে কুরআনের উপর চাপিয়ে দাও।
বন্ধুগণ!
মোল্লা বলে—আমার হাদিস না মানলে ইসলাম অসম্পূর্ণ। অপর পীর বলে—আমার সিলসিলা না মানলে জান্নাত বন্ধ। আরেক দল বলে—আমার ইমাম ছাড়া দ্বীন নেই। হায়রে মানুষ! তোমরা কি কুরআনকে এতটুকু পাত্তা দাও না? তোমাদের এইসব বাহানা দেখে মনে হয়, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেরাই আল্লাহ হয়ে বসে গেছো।
বন্ধুগণ!
আমি বলি—কুরআন একাই যথেষ্ট। কুরআন একাই পূর্ণ। কুরআন একাই চূড়ান্ত। যে কুরআন বলে—ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ—“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম।” তাহলে তোমরা কাকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করছো? আল্লাহকে? নাকি কুরআনকে?
বন্ধুগণ!
তোমাদের এই দলবাজি, তোমাদের এই নামকরণ, তোমাদের এই অহংকার—সব মিলে ইসলামকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। মুসলমানরা আজ বিভক্ত, একে অপরের রক্ত ঝরাচ্ছে। কেন? কারণ তোমরা নিজেদের নামকে কুরআনের ওপরে বসিয়ে দিয়েছো। কেউ হাদিসের আহলে, কেউ মাজহাবের আহলে, কেউ তরিকতের আহলে। অথচ কেউ নেই, যে শুধু বলবে—“আমি আহলে কুরআন, আমি আল্লাহর বান্দা।”
বন্ধুগণ!
আজ আমি শপথ নিয়ে বলি—আমি কোনো আহলে নই। আমি শুধু সেই আহলে, যে আল্লাহর কিতাবের পথে হাঁটে। আমি কোনো মোল্লার চাকর নই, কোনো ইমামের অন্ধ অনুগত নই, কোনো দলের ভাড়াটে সৈনিক নই। আমি শুধু সেই সত্যের সৈনিক, যে বলবে—“لا إِلٰهَ إِلَّا الله”—আল্লাহ ছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন নেই, আল্লাহ ছাড়া আর কারো দ্বীন নেই।
বন্ধুগণ!
আজ আমি দাঁড়ালাম সেই দেয়ালের সামনে, যেখানে একদিকে লেখা—“আহলে হাদিস”, আরেকদিকে লেখা—“আহলে মাজহাব।” দুই দিকেই দাবি—আমরাই সঠিক! দুই দিকেই গর্জন—আমাদের ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না! অথচ কুরআন হাসছে তোমাদের দাবির কথা শুনে, কুরআন কাঁদছে তোমার অজ্ঞতা দেখে, কুরআন ডাকছে—“হে মানুষ! তোমরা এক হও আমার ছায়াতলে, বিভক্ত হয়ো না।”
বন্ধুগণ!
আহলে হাদিসরা গলা ফাটিয়ে বলে—“শুধু কুরআন নয়, হাদিস ছাড়া দ্বীন চলবে না।” তাদের মুখে শুধু সনদ, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম! অথচ তারা ভুলে গেছে, রাসুলের মুখে কোনো বুখারী ছিল না, কোনো মুসলিম ছিল না, কোনো আবু দাউদ ছিল না। রাসুলের হাতে ছিল শুধু একটিই কিতাব—কুরআন।
বন্ধুগণ!
আহলে মাজহাবরা আবার অন্য ঢংয়ে বলে—“আমাদের ইমামদের ছাড়া দ্বীন অচল!” কেউ বলে—হানাফী না হলে তুমি গোমরাহ। কেউ বলে—শাফেয়ী না হলে জান্নাত বন্ধ। কেউ বলে—মালিকী বা হাম্বলী ছাড়া কোনো মুক্তি নেই। হায়রে মানুষ! আল্লাহর কিতাবকে ফেলে তোমরা ইমামদের নামে নতুন ধর্ম বানালে! অথচ আল্লাহ তো কুরআনে বলে দিয়েছেন—ٱتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُم وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوۡلِيَآءَ—“তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, সেটাই অনুসরণ করো; তার বাইরে কাউকে অনুসরণ কোরো না।”
বন্ধুগণ!
একদল বলে—আমরা হাদিস মানি, ইমাম মানি না। আরেকদল বলে—আমরা ইমাম মানি, হাদিস ছাড়া চলি না। দুই দিকেই স্ববিরোধী খেলা, দুই দিকেই কুরআনকে পাশ কাটিয়ে মানুষকে মাঝখানে রেখে গুলিয়ে দেওয়া। অথচ কুরআনই স্পষ্ট ঘোষণা করছে—مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٍ—“আমরা কিতাবে কিছুই বাদ দিইনি।”
বন্ধুগণ!
হাদিসের দল বলে—আমরা রাসুলকে ভালোবাসি। কিন্তু তাদের ভালোবাসা রাসুলের আনা কুরআনের প্রতি নয়, বরং রাসুলের নামে বানানো গল্পগাথায়। মাজহাবের দল বলে—আমরা ইমামকে মানি। অথচ তারা ইমামদের কাঁধে চাপিয়ে এমন ফতোয়া চালায়, যা কুরআনের স্পষ্ট আয়াতের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
বন্ধুগণ!
এই দুই দিকের যুদ্ধ দেখে আমি প্রশ্ন করি—তাহলে দ্বীন আসলে কার? আল্লাহর, না ইমামদের? দ্বীন আসলে কার? আল্লাহর, না হাদিস ব্যবসায়ীদের? দ্বীন আসলে কার? আল্লাহর, না মোল্লা-মুফতির দালালি করা গোষ্ঠীর?
বন্ধুগণ!
তোমরা দল বানালে, নাম বানালে, শিরোনাম বানালে। অথচ আল্লাহর রাসুল কখনো বলেননি—“আমার পরে তোমরা আহলে হাদিস হবে।” তিনি কখনো বলেননি—“তোমরা হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী হবে।” তিনি শুধু বলেছিলেন—“إِنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُ”—“এটাই আমার সোজা পথ, তোমরা একে অনুসরণ করো।”
বন্ধুগণ!
আমি আজ বিদ্রোহের ভাষায় ঘোষণা দিচ্ছি—
আমি আহলে হাদিস নই, আমি আহলে মাজহাব নই। আমি শুধু আহলে কুরআন নই—আমি আহলে হক, আহলে আল্লাহ! আমি সেই আহলে, যে বলবে—আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। আমি সেই আহলে, যে মোল্লার দাসত্ব ভেঙে ফেলবে। আমি সেই আহলে, যে কুরআনের শব্দকে মানুষের শব্দের উপর উঠিয়ে দেবে।
বন্ধুগণ!
আজ তোমাদের সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলি—
যতক্ষণ তোমরা দলীয় নামের আড়ালে দ্বীনকে টুকরো টুকরো করবে, ততক্ষণ ইসলাম হবে রক্তাক্ত, মুসলমান হবে ভ্রান্ত। আর যতক্ষণ তোমরা কুরআনকে একমাত্র সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করবে না, ততক্ষণ তোমাদের নামাজ হবে ভণ্ডামি, তোমাদের মসজিদ হবে ব্যবসা, তোমাদের ইমামত হবে শয়তানি রাজনীতি।
বন্ধুগণ!
তাই এসো, আজ আমরা শপথ করি—
না আহলে হাদিস, না আহলে মাজহাব, না আহলে সুন্নাত, না আহলে জামাআত। আমরা হবো শুধু এক আহলে—“আহলে আল্লাহ”, “আহলে কুরআন”, “আহলে তাওহীদ।” আর এই বিদ্রোহী শপথ নিয়েই আমরা বলবো—
لا حكم إلا لله — “আইন কেবল আল্লাহরই।”
আমরা মুসলিম। আমরা কুরআনের সঙ্গী। আমরা আল্লাহর বাণীর বাহক। উই আর ফ্রেন্ডস অফ কুরআন। আই এম ফ্রেন্ড অফ কুরআন।।
0 Comments