Subscribe Us

যখন পাহাড়ও সিজদা করে, অথচ মানুষ অবাধ্য”

 


“যখন পাহাড়ও সিজদা করে, অথচ মানুষ অবাধ্য”

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(হে প্রভু! আমি আশ্রয় চাই শয়তানদের প্ররোচনা থেকে, আর তাদের উপস্থিতি থেকেও আশ্রয় চাই। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের পালনকর্তা। সালাম সেই সকলের জন্য যারা হেদায়েত অনুসরণ করে। আর সালাম সেই মুহাম্মদের জন্য, যিনি কুরআন নিয়ে এসেছিলেন সকল কিতাবের নিয়ামক হয়ে।)

বন্ধুগণ!
আজ আমি এমন কিছু আয়াতের দরজা খুলতে চাই, যে আয়াতগুলো নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই!—
“وَسَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ”
অর্থাৎ— “আমি দাউদের সঙ্গে পাহাড়সমূহকে তাসবিহ করতে বাধ্য করেছি, সকাল ও সন্ধ্যায়।” (সাদ ৩৮ঃ১৮)
তোমরা বুঝে দেখো, পাহাড়ের তো মুখ নেই, জিহ্বা নেই, ভাষা নেই—
তবুও তারা আল্লাহর “তাসবিহ” করে!
কীভাবে?
তাদের অস্তিত্বের নিয়মে, তাদের স্থিরতায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত গতিতে
তারা যেন চিৎকার করে বলছে, “হে মানুষ! আমরা আল্লাহর নিয়মে স্থির আছি, আর তুমি?”

বন্ধুগণ!
যখন পৃথিবী কাঁপে, সেটাও আল্লাহর আদেশে।
যখন পর্বত ধ্বসে পড়ে, সেটাও আল্লাহর বিধানে।
অর্থাৎ পাহাড়ের সিজদা মানে—
“নিজেকে আল্লাহর নিয়মে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করা।”
এই সিজদা রিচুয়ালের নয়, বরং অস্তিত্বের আনুগত্য।
যেমনটা সুরা হাজ্জের ১৮ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—
“তুমি কি দেখ না যে, আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পর্বত, বৃক্ষ, জীবজন্তু ও বহু মানুষ আল্লাহর কাছে সিজদা করে।”
দেখো! এখানে শুধু মানুষ নয়—
সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্র, পর্বত, বৃক্ষ, জীবজন্তু—সবাই সিজদা করে!
কারণ তারা সবাই আল্লাহর বিধানের অধীন।
সূর্য সময়মতো ওঠে, চাঁদ তার কক্ষপথে ঘোরে, বৃক্ষ তার শিকড়ে অবিচল থাকে—
এই অনুগত চলাই তাদের “সিজদা”।

বন্ধুগণ!
তোমরা কি ভাবো, সিজদা মানেই শুধু মাটিতে কপাল রাখা?
তাহলে সূর্য কীভাবে সিজদা করে?
চাঁদ কীভাবে করে?
বৃক্ষ, পাখি, পাহাড়—তাদের শরীরই নেই, তবুও তারা সিজদায়!
কারণ সিজদা মানে “আল্লাহর বিধান মেনে নেয়া”।
যা সে বানিয়েছে, সেটাই তার বিধান।
যা সে ঠিক করেছে, সেটাই “কানুনুল্লাহ”—
সেই আইনই হচ্ছে প্রকৃত সালাত, প্রকৃত ইবাদত, প্রকৃত আনুগত্য।

বন্ধুগণ!
আল্লাহ বলেন—
“وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ
অর্থাৎ “তৃণলতা ও বৃক্ষ—তারা সিজদা করে।” (আর রহমান ৬)
তাদের সিজদা কীভাবে হয় জানো?
যখন তারা আকাশের দিকে মুখ করে বাড়ে, আলো খোঁজে, পানি খোঁজে,
যখন তারা আল্লাহর বানানো ফটোসিনথেসিসের নিয়মে চলে,
তখন তারা বলে—
“হে প্রভু! আমরা তোমার নিয়ম মেনে চলি, আমরা তোমার আদেশে বাঁচি।”
এটাই সিজদা!
অথচ মানুষ—যার বিবেক আছে, চেতনা আছে, জ্ঞান আছে—
সে আজ সিজদা করে না বিধানে, বরং সিজদা করে মোল্লার ফতোয়ায়!

বন্ধুগণ!
একটা আয়াত আছে—
“أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّؤُا ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِّلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ”
অর্থাৎ— “তারা কি দেখে না, আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার ছায়া ডানে-বামে সিজদা করে, আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ করে।” (আন নাহল ১৬ঃ৪৮)
তুমি কি কল্পনা করতে পারো, এমনকি ছায়াও সিজদায় থাকে?
অর্থাৎ আলো যখন আসে, ছায়া তার নিয়মে সরে যায়—
কোন অহংকার নেই, কোন বিদ্রোহ নেই—
এই আত্মসমর্পণই সিজদা!

বন্ধুগণ!
আরও শুনো—
সুরা মরিয়ম ১৯:৫৮ বলছে—
“এরা সেইসব নবী, যাদের আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন আদমের বংশ থেকে, নূহের সঙ্গে যারা নৌকায় ছিল, ইব্রাহিম ও ইসরাঈলের সন্তানদের মধ্য থেকে, এবং যাদের আমরা পথ দেখিয়েছি ও মনোনীত করেছি। যখন তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত পাঠ করা হতো, তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত এবং কান্না করত।”
দেখো!
এখানে সিজদা মানে কী?
মাটিতে লুটিয়ে কান্না নয়—
বরং আল্লাহর আয়াত শুনে হৃদয়ের আত্মসমর্পণ!
তারা কেঁদেছিল কারণ তারা সত্যকে মেনে নিয়েছিল,
তাদের আত্মা আল্লাহর কাছে নত হয়েছিল।

বন্ধুগণ!
এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায়—
সিজদা এক ভেতরের বিপ্লব!
এটা শরীরের ভাঁজ নয়, আত্মার নতি।
যে আল্লাহর বিধান মানে না, সে যতবারই মাটিতে কপাল রাখুক,
সে কখনও “সাজিদ” নয়!
কারণ সিজদা মানে মেনে নেয়া,
আর অমান্য করা মানে বিদ্রোহ করা।

বন্ধুগণ!
পাহাড়ের মতো দৃঢ় সিজদা আজ কোথায়?
মানুষের বুকে কেন এই কঠিন অহংকার?
যখন প্রকৃতি সিজদায় নিমগ্ন, মানুষ তখন রাজনীতির কাদা মেখে ধর্ম বিক্রি করছে।
যে কুরআন আমাদের পাহাড়ের মতো শক্ত বানানোর কথা বলেছিল,
আজ সেই কুরআন মসজিদের তাকের ফুলদানি হয়ে গেছে!
তুমি ভাবো, তাসবিহ শুধু জপমালা দিয়ে হয়?
না, পাহাড়ের তাসবিহ তার নীরব স্থিরতায়—
বৃক্ষের তাসবিহ তার ছায়ায়—
চাঁদের তাসবিহ তার নির্ভুল কক্ষপথে—
আর তোমার তাসবিহ কোথায়, হে মানুষ?
তুমি কি আল্লাহর বিধান মানছো, নাকি তার বিকল্প বানিয়ে নিচ্ছো?

বন্ধুগণ!
আজ মানুষ বিজ্ঞানের নামে আল্লাহর আইন ভুলে গেছে,
কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতিটি সূত্রই তো “সিজদাকারী”!
নিউটনের সূত্র, আইনস্টাইনের সমীকরণ—
সবই তো আল্লাহর সৃষ্টি করা নিয়মের প্রকাশ!
এগুলোই তো বলে, “হে মানুষ! জ্ঞানও একপ্রকার সিজদা।”
যে জ্ঞানে আল্লাহর সৃষ্টি বোঝা যায়, সেটাই ইবাদত।
কিন্তু তুমি আল্লাহর কিতাব ছেড়ে গেছ,
হাদিসের দোকানে, মাজারের কবরস্থানে, মোল্লার রাজনীতিতে হারিয়ে গেছো।

বন্ধুগণ!
যদি পাহাড় আল্লাহর আদেশে দাউদের সাথে সিজদা করতে পারে,
তবে তুমি কেন পারো না?
তুমি কি পাহাড়ের চেয়ে কঠিন?
তুমি কি বৃক্ষের চেয়ে কম বুদ্ধিমান?
যদি তারা আল্লাহর বিধান মেনে চলে,
তবে তুমি কেন তোমার সংসদ, তোমার দল, তোমার মাযহাবের বিধান মানো?
যখন প্রকৃতি আনুগত্যে শান্ত, তখন মানুষ বিদ্রোহে অশান্ত!

বন্ধুগণ!
যখন সিজদা হয় সত্যের সামনে, তখন মানুষ মুক্ত হয়।
আর যখন সিজদা হয় ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীর সামনে, তখন মানুষ দাস হয়।
আজ পৃথিবী দাসে ভরে গেছে,
কারণ মানুষ কুরআনের আইন ছেড়ে মানুষের আইন মানছে।
কিন্তু পর্বত এখনো সিজদায়—
বৃক্ষ এখনো তাসবিহে—
সূর্য এখনো বিধানমতে ওঠে—
চাঁদ এখনো কক্ষপথে ঘোরে—
কেবল মানুষই পথ হারিয়েছে।

বন্ধুগণ!
এই আয়াতগুলো আমাদের সামনে আয়না তুলে দেয়।
তুমি যদি সিজদা করতে চাও,
তবে প্রথমে আল্লাহর বিধানকে মেনে নাও।
তুমি যদি সালাত কায়েম করতে চাও,
তবে তোমার জীবনকে কুরআনের শৃঙ্খলায় আনো।
তুমি যদি তাসবিহ করতে চাও,
তবে তোমার কর্মকে সৃষ্টিকর্তার বিধানের সাথে মিলিয়ে নাও।

বন্ধুগণ!
সিজদা কখনও “লুটিয়ে পড়া” নয়, বরং “উঠে দাঁড়ানো”—
সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, আল্লাহর বিধানের পক্ষে দাঁড়ানো।
যেদিন তুমি বলবে,
“আমি সংসদের আইন নয়, কুরআনের আইন মানবো,”
সেদিন তুমি প্রকৃত সিজদায় থাকবে।
যেদিন তুমি বলবে,
“আমি মোল্লার ফতোয়া নয়, আল্লাহর বাণী মানবো,”
সেদিন তোমার আত্মা তাসবিহে কাঁপবে।

বন্ধুগণ!
আজ পাহাড়ও সিজদায়, বৃক্ষও সিজদায়,
কিন্তু মানুষ এখনো নিজের অহংকারে বন্দি।
তুমি কি দেখো না, প্রকৃতি কুরআনের আয়াত?
তুমি কি শুনো না, বাতাসের তাসবিহ?
তুমি কি বোঝো না, ছায়ার সিজদা?
যদি বোঝো, তবে জাগো—
কারণ তুমি মানুষের মধ্যে একমাত্র প্রাণী,
যে সচেতনভাবে সিজদা অস্বীকার করতে পারে।
আর সেই অস্বীকৃতিই আজকের সমস্ত বিপর্যয়ের মূল।

বন্ধুগণ!
মানুষ আজ সিজদা ভুলে গেছে।
মাটিতে কপাল রাখে, অথচ আল্লাহর বিধান অস্বীকার করে!
জোড়হাতে তাসবিহ ঘোরায়, অথচ কুরআনের আয়াতের উল্টো চলে!
পাহাড় তাসবিহ করে, বৃক্ষ সিজদায়, আকাশ আল্লাহর আদেশে টিকে আছে—
শুধু মানুষই আজ “নিজের আইন” বানিয়েছে!

আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিটি কণাই আনুগত্যে মগ্ন,
কেবল মানুষই বিদ্রোহে মত্ত।
এ কারণেই কুরআন মানুষকে বারবার বলেছে—
“أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ” (হাজ ২২:১৮)
অর্থাৎ “তুমি কি দেখো না, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর কাছে সিজদা করে?”

কিন্তু হে মানুষ!
তুমি একমাত্র প্রাণী যে সচেতনভাবে অবাধ্য হতে পারে।
তুমি ইচ্ছায় আল্লাহর বিধান ছেড়ে সংসদের বিধান মানতে পারো,
তুমি ইচ্ছায় কুরআনের বদলে ফতোয়ার পিছে ছুটতে পারো—
এবং সেই সুযোগই তোমাকে দিয়েছে পরীক্ষার মর্যাদা।

বন্ধুগণ!
প্রকৃতি আজও কুরআনের তাফসির করছে,
কিন্তু আমরা সেই কুরআন খুলে দেখি না।
দেখো, পাহাড় কীভাবে স্থির—
তারা বলে, “আমরা আমাদের প্রভুর বিধান মেনে আছি।”
দেখো, বৃক্ষের শিকড়—
কেমন দৃঢ়ভাবে জমিনে প্রোথিত—
তারা বলে, “আমরা আমাদের সীমা অতিক্রম করি না।”
দেখো, আকাশের তারা—
যেভাবে বিন্দুমাত্র সংঘর্ষ ছাড়াই ঘুরে—
তারা বলে, “আমরা আমাদের নির্ধারিত পথে আছি।”

এই হচ্ছে সিজদা!
এক নিঃশব্দ আনুগত্য,
এক সৃষ্টির অন্তঃস্থ আত্মসমর্পণ।

বন্ধুগণ!
কিন্তু আজ মানুষ সেই সিজদাকে বানিয়ে ফেলেছে এক ধর্মীয় নাচ,
এক রিচুয়াল, এক অভ্যাস,
যেখানে হৃদয়ের পরিবর্তে শুধু শরীর নত হয়।
সে ভাবে, মাটিতে কপাল রাখলেই সিজদা পূর্ণ হলো!
কিন্তু কুরআন বলছে—
“وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَٰنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا” (মরিয়ম ১৯:৫৮)
অর্থাৎ “যখন দয়াময়ের আয়াত তাদের সামনে তেলাওয়াত করা হয়, তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং কাঁদে।”
এই কান্না কপালের ঘর্ষণে নয়,
এই কান্না সত্যের সামনে আত্মসমর্পণে!

বন্ধুগণ!
আজকের মানুষ “লুটিয়ে পড়ে” শরীর দিয়ে,
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকে হৃদয়ে।
সে মাথা ঝুঁকায় মসজিদে,
কিন্তু বিদ্রোহ করে সংসদে!
সে কোরআন পড়ে তিলাওয়াতের তালে,
কিন্তু জীবনে কোরআনের এক আয়াতও বাস্তবায়ন করে না!
এটাই আজকের সিজদা—
একটি খালি খোলস,
যার ভেতর আত্মা নেই, চেতনা নেই, কুরআন নেই!

বন্ধুগণ!
তুমি কি জানো কেন পাহাড়কে সিজদা বলা হলো?
কারণ সে স্থির, ধৈর্যশীল, বিধানমুখী।
দাউদের সাথে পাহাড় তাসবিহ করেছিল—
অর্থাৎ নবীর সাথে একই সুরে সমর্পিত হয়েছিল।
তুমি কি দাউদের মতো সুরে গাইতে পারো?
তুমি কি কুরআনের ছন্দে তোমার জীবন সাজাতে পারো?
না, তুমি এখন ব্যস্ত—
হুজুরের বক্তৃতায়, শায়েখের ফতোয়ায়,
আর দলীয় ব্যানারে নামাজের রাজনীতিতে!

বন্ধুগণ!
প্রকৃতি তো আজও আল্লাহর নাম পাঠ করছে—
বৃষ্টি নামে “বিসমিল্লাহ” বলে,
বাতাস বয় “আল্লাহু আকবর” বলে,
সূর্য ওঠে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে,
আর তুমি বলো—
“নামাজ পড়লাম”, অথচ নামাজের অর্থও জানো না!
তুমি নামাজে কুরআন পাঠ করো,
কিন্তু কুরআনের কথা মানো না—
এই ভণ্ডামি কি আল্লাহর কাছে সিজদা?

বন্ধুগণ!
সিজদা মানে কুরআনকে মেনে নেওয়া—
আর তুমি যদি কুরআন অমান্য করো,
তবে তোমার প্রতিটি রুকু, প্রতিটি সিজদা, প্রতিটি তাসবিহ—
সবই এক প্রতারণা!
আজ তুমি সিজদা করো প্রথায়,
কিন্তু বিদ্রোহ করো বিধানে।
তুমি সালাত পড়ো সময়ের ঘড়িতে,
কিন্তু জীবনভর সালাত থেকে দূরে থাকো!

বন্ধুগণ!
দেখো!
সূর্য এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর বিধান ভঙ্গ করে না,
চাঁদ তার গতি ছাড়ে না,
বৃক্ষ তার দিক পরিবর্তন করে না।
তারা সবাই সালাতে, তারা সবাই সিজদায়।
আর মানুষ?
সে বিধান ভেঙে আইন বানায়,
আল্লাহর রাস্তা ছেড়ে দল বানায়,
তাসবিহ ছেড়ে রাজনীতি করে!
তুমি কি ভাবো না, এই হলো প্রকৃত অবাধ্যতা?

বন্ধুগণ!
একবার ভেবে দেখো,
আল্লাহ পাহাড়কে স্থিরতা দিয়েছেন,
বৃক্ষকে শেকড় দিয়েছেন,
মানুষকে দিয়েছেন বিবেক—
কিন্তু মানুষ সেই বিবেককে ব্যবহার করছে
আল্লাহর বিধানকে প্রশ্ন করতে!
সে বলে— “কুরআন যথেষ্ট নয়!”
সে বলে— “আমার শায়েখের ব্যাখ্যা দরকার!”
সে বলে— “আমার মাজহাবের ফতোয়া চাই!”
হে মানুষ! তুমি কি বোঝো না,
তুমি যখন এ কথা বলো,
তুমি তখন বলছো— “আল্লাহ অসম্পূর্ণ বলেছেন!”

বন্ধুগণ!
আজ মানুষ আল্লাহর আয়াতের চেয়ে মানুষের ব্যাখ্যা বড় মনে করে,
তাই পৃথিবীতে অন্যায়, দুর্নীতি, রক্তপাত—
সবই সেই বিদ্রোহের ফল।
তুমি যদি পাহাড়ের মতো স্থির হতে,
বৃক্ষের মতো নত হতে,
সূর্যের মতো নিয়মে চলতে—
তবে আজ পৃথিবী জান্নাতের মতো হতো।

বন্ধুগণ!
দেখো, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন বিশৃঙ্খলা নেই।
“لَا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَٰنِ مِن تَفَاوُتٍ” (মূলক ৬৭:৩)
অর্থাৎ “দয়াময়ের সৃষ্টিতে কোনো বৈষম্য দেখবে না।”
অর্থাৎ পুরো সৃষ্টি আল্লাহর বিধানে চলে,
সুতরাং সৃষ্টি নিজেই এক “সালাত”,
এক অবিরাম সিজদা।
আর মানুষ যদি সেই সালাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়,
তবে সে আল্লাহর জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়!

বন্ধুগণ!
সিজদা কেবল ইবাদত নয়—
এটা এক ঘোষণা:
“আমি আল্লাহর বিধান মেনে নিচ্ছি!”
যে এই ঘোষণা দেয়, সে নবীদের উত্তরসূরি।
আর যে অস্বীকার করে, সে ফেরাউনের উত্তরসূরি।
কারণ ফেরাউনও সিজদা করেনি,
সে বলেছিল— “আমি নিজেই রব!”
আজ তুমি যদি আল্লাহর কিতাব ছেড়ে মানুষের বিধান মানো,
তবে তুমিও বলছো— “আমিই রব!”
বুঝে দেখো, এটা কেমন সূক্ষ্ম শিরক!

বন্ধুগণ!
পাহাড় আজও নত,
বৃক্ষ আজও শান্ত,
চাঁদ আজও বিনম্র—
শুধু মানুষই উন্মত্ত!
আর তাই মানুষই আজ দুর্ভোগে, দুঃখে, দ্বন্দ্বে।
কারণ সে আল্লাহর বিধান থেকে পালিয়েছে,
যে বিধানকে মেনে প্রকৃতি শান্তিতে আছে।

বন্ধুগণ!
যে দিন তুমি কুরআনের বিধান মেনে নিবে,
সে দিন তুমি পৃথিবীর সুরে গাইবে।
তোমার হৃদয়ের স্পন্দন মিলবে পাহাড়ের স্থিরতায়,
তোমার আত্মা মিলবে বৃক্ষের শিকড়ে,
তোমার চেতনা মিলবে আকাশের সুবিন্যস্ত কক্ষপথে।
তখন তুমি বুঝবে—
সিজদা মানে কেবল মাটিতে পড়া নয়,
বরং অহংকার ভেঙে সত্যের সামনে দাঁড়ানো।

বন্ধুগণ!
তাই বলি—
যখন পাহাড় সিজদায়, তখন তুমি কেন নয়?
যখন ছায়াও সিজদায়, তখন তোমার আত্মা কেন বিদ্রোহে?
যখন সূর্য আল্লাহর বিধান মেনে ওঠে,
তুমি কেন সংসদের আইন মানো?
যখন বৃক্ষ তার সীমা জানে,
তুমি কেন সীমা ভাঙো?

তুমি কি ভাবো, তুমি প্রকৃতির চেয়ে বড়?
না!
তুমি যদি কুরআনকে অমান্য করো,
তবে তুমি পাহাড়ের চেয়ে ক্ষুদ্র,
বৃক্ষের চেয়ে নিকৃষ্ট,
আর ছায়ার চেয়েও তুচ্ছ!

বন্ধুগণ!
আসো, আজ নতুন করে সিজদা শিখি।
মাটিতে নয়, সত্যে লুটিয়ে পড়ি!
আল্লাহর বাণীর সামনে, কুরআনের বিধানের সামনে,
আমাদের অহংকার ভেঙে ফেলি।
তখন আমরা হবো প্রকৃত “সাজিদ”, প্রকৃত “মুসলিম”—
যার সিজদা মানে মেনে নেওয়া,
যার তাসবিহ মানে বোঝা,
যার সালাত মানে জীবনযাপন কুরআনের আলোয়।

বন্ধুগণ!
স্মরণ রেখো—
পাহাড়ের সিজদা তোমার আয়না,
বৃক্ষের তাসবিহ তোমার পাঠশালা,
সূর্যের সালাত তোমার নির্দেশক।
তুমি যদি সত্যি মুসলিম হতে চাও,
তবে প্রকৃতির মতো হও—
আল্লাহর বিধানে, চির অনুগত, চির বিনয়ী, চির সিজদাকারী।

শেষ কথা
আমি বলি না—“আমি বিদ্রোহী”,
আমি বলি—“আমি কুরআনের পক্ষে সাক্ষী।”
আমি সে দলের, যারা সিজদা বোঝে বিধানে,
যারা সালাত বোঝে কর্মে,
যারা তাসবিহ বোঝে জীবনে।
হে মানুষ!
ফিরে এসো সেই সিজদায়—
যেখানে মাটিতে নয়, আত্মা নত হয়।
যেখানে বিধান মানাই মুক্তি,
যেখানে কুরআনই একমাত্র দিশা।

Post a Comment

0 Comments