কুরআনের বিয়ে কেমন আর প্রচলিত বিয়ে কেমন
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
বন্ধুগণ!
বিবাহ—একটি ছোট শব্দ, অথচ এর ভেতরে লুকিয়ে আছে মানব জীবনের শান্তি, প্রশান্তি, ভালোবাসা, দয়ার সব আয়োজন। মহান আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন—“আমি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী বানালাম, যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি পাও, এবং আমি তোমাদের মাঝে রাখলাম ভালোবাসা ও দয়া।” কিন্তু আফসোস! সেই বিবাহকেই মানুষ বানিয়েছে এক দুঃসহ কারাগার। কুরআনের বিবাহ যেখানে ভালোবাসা আর মমতার নিদর্শন, সেখানে প্রচলিত বিয়ে হয়ে গেছে বাণিজ্য, প্রতিযোগিতা আর শোষণের বাজার।
বিবাহের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—শান্তি, মমতা আর দয়ার বন্ধন। এটি কোনো প্রদর্শনী নয়, কোনো দম্ভ নয়, কোনো লেনদেনের খেলা নয়। কুরআন বিবাহকে বানিয়েছে জীবনের প্রশান্তির উৎস, অথচ আমরা বানিয়েছি সামাজিক আতঙ্কের উৎস। আমাদের সমাজে বিয়ে মানেই খরচের পাহাড়, আতঙ্কের বোঝা, দানদক্ষিণার প্রতিযোগিতা। প্রশ্ন করি—এ কিসের বিবাহ? এটা কি আল্লাহর বানানো সহজ দ্বীন? না কি মানুষের বানানো কষ্টকর ধর্ম?
আল্লাহর কুরআন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে—“তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। এক মুমিন দাসী একজন মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম। আর তোমরা মুশরিক পুরুষদেরও বিয়ে দিও না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। এক মুমিন দাস একজন মুশরিকের চেয়ে উত্তম।” এখানে বিধান একেবারে পরিষ্কার—বিবাহ হবে ঈমানের বন্ধনে, বিশ্বাসের বন্ধনে। কিন্তু আমরা কী করেছি? আমরা তাকিয়েছি বংশে, তাকিয়েছি জাত-পাতের ভেদে, তাকিয়েছি টাকার অঙ্কে, ডিগ্রির কাগজে। সমাজ প্রশ্ন করে—“সে কত টাকা উপার্জন করে? তার পরিবার কত জমির মালিক? সে কোন কুলের?” অথচ কুরআন জিজ্ঞেস করছে—“সে কি মুমিন?” বন্ধুগন, এই হলো আসল ফারাক—কুরআনের বিবাহ বনাম প্রচলিত বিয়ে।
কুরআনের বিবাহ সহজ। সেখানে মূল হলো মোহর—যেটা নারীকে সম্মান জানানোর প্রতীক। আল্লাহ বললেন—“তোমরা নারীদের মোহর দাও আনন্দের সাথে।” কিন্তু আমরা কী করেছি? মোহর ভুলে গিয়েছি, তার জায়গায় বসিয়েছি পণ। কুরআন বলছে, বিয়ে মানে নারীর অধিকারকে স্বীকার করা; সমাজ বলছে, বিয়ে মানে মেয়ের বাবাকে নিঃস্ব করে ফেলা। কুরআন বলছে, মোহর দিয়ে সম্মান দাও; সমাজ বলছে, পণ নিয়ে দাসত্ব করাও। বলুন তো বন্ধুগণ—এটা কি আল্লাহর দ্বীন, নাকি শয়তানের তৈরি বাজার?
আরেকটি শর্ত দিয়েছেন আল্লাহ—সাক্ষী। বিবাহ হতে হবে প্রকাশ্যে, সমাজের সামনে, দুই পক্ষের সম্মতিতে। এখানে কোনো গোপনতা নেই, কোনো লুকোচুরি নেই, কোনো জোরজবরদস্তি নেই। নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়। কিন্তু সমাজ কী করছে? তারা নারীর মুখ বন্ধ করে দিয়ে তার অভিভাবকের হাতে বিয়ে নামক কারাগারের চাবি তুলে দিয়েছে। কুরআন বলছে—“নারীর সম্মতি ছাড়া নয়।” সমাজ বলছে—“নারীর মুখ বন্ধ থাকলেই সম্মতি।” বন্ধুগণ! এটা কিসের ইসলাম? এটা তো ইসলাম নয়, এটা তো পুরুষতান্ত্রিক শোষণ, যা কুরআনের সরল পথ থেকে বহুদূরে।
এবার আসি মোল্লা, কাজি, খুতবার প্রশ্নে। কুরআন কোথায় বলেছে—“তোমাদের বিয়েতে অবশ্যই কাজি আসবে, খুতবা পড়বে, সিলমোহর বসাবে”? কোথায় লেখা আছে—“বিয়ে মানে মঞ্চ সাজাতে হবে, হাজার মানুষের ভোজ দিতে হবে”? কুরআন এসব কিছু বলেনি। কুরআন বলেছে—মোহর দাও, সম্মতি নাও, সাক্ষীর সামনে ঘোষণা করো। এটাই যথেষ্ট। কিন্তু সমাজ বানিয়েছে এক বিশাল আমলাতন্ত্র—কাজি, মোল্লা, দলিল, ফরম, ফতোয়া। যেন আল্লাহর সহজ দ্বীনকে তারা নিজের হাতে কঠিন করে তুলতে পেরেছে।
আমাদের চোখ খুলে দিতে হবে। কুরআনের বিবাহ হলো দয়া ও সহজতার চুক্তি, আর প্রচলিত বিয়ে হলো কষ্ট আর দম্ভের আয়োজন। কুরআনের বিবাহ বানায় ভালোবাসা, প্রচলিত বিয়ে বানায় ঋণের পাহাড়। কুরআনের বিবাহ সম্মান দেয় নারীকে, প্রচলিত বিয়ে পণ দিয়ে লাঞ্ছিত করে নারীকে। কুরআনের বিবাহ প্রশান্তি আনে, প্রচলিত বিয়ে ভোগান্তি আনে।
আজকের সমাজে বিয়ে হয়ে গেছে এক দুঃস্বপ্ন। মেয়ে পক্ষ আতঙ্কে থাকে—“ছেলের পরিবার কত চাহিদা তুলবে?” ছেলে পক্ষ দম্ভে থাকে—“আমরা এত খরচ করেছি, এখন বউকে দাসী বানাবো।” অথচ কুরআন বলছে—“তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছি।” বলুন তো বন্ধুগণ, দাসত্বে কি ভালোবাসা জন্মায়? অপমানে কি দয়া জন্মায়? শোষণে কি শান্তি জন্মায়? জন্মায় না। তাই আজকের প্রচলিত বিয়ে কুরআনের বিবাহ নয়, বরং আল্লাহর সরল দ্বীনকে বিকৃত করার নাম।
আজ আমি আপনাদের সামনে কুরআনের বিবাহের মূল কাঠামো তুলে ধরলাম। আমরা দেখলাম—কুরআনের বিবাহ সহজ, মানবিক, দয়ার প্রতীক। আর প্রচলিত বিয়ে হলো ঋণের ফাঁস, প্রদর্শনীর মঞ্চ, দাসত্বের শৃঙ্খল। এ দ্বন্দ্ব পরিষ্কার।
0 Comments