Subscribe Us

আজকের উম্মতের ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী

 আজকের উম্মতের ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী

✍️ লেখক: মাহাতাব আকন্দ

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় চাই শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে এবং আশ্রয় চাই যেন তারা আমার কাছে না আসে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের ওপর যারা হেদায়াত অনুসরণ করেছে, এবং শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মাদের ওপর যিনি কুরআন নিয়ে এসেছিলেন সর্বোচ্চ বিধান হিসেবে।)

ধর্ম যখন পেশা হলো
বন্ধুগণ!
আজ আমি এক কঠিন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছি— ধর্ম নয়, ধর্মের ব্যবসা! ঈমান নয়, ঈমানের বাজার!
এই বাজারে বিক্রি হয় আল্লাহর নাম,
এই বাজারে বিক্রি হয় জান্নাতের টিকিট,
এই বাজারে বিক্রি হয় হুজুরের ফতোয়া,
আর ক্রেতা হলো— অন্ধ মুসলমান, যে ভাবে সে “নেকি” কিনছে, অথচ সে কিনছে নিজের ধ্বংস!

বন্ধুগণ!
এই উম্মত একসময় ছিল জ্ঞানের জাতি, চিন্তার জাতি, গবেষণার জাতি— কিন্তু আজ তারা “মোল্লার ফতোয়া”র জাতি!
আজ ইসলামের ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা—
মঞ্চে মাওলানা সাহেবের, হাতে মাইক, মুখে “সওয়াব”
জিব্বায় তাওহিদী ঝংকার,
আর ভেতরে শুধুই ডলারের গন্ধ।
আজ দীন শেখানো হয় মজুরি নিয়ে, দোয়া বিক্রি হয় টাকা দিয়ে, জানাজা পড়াতে লাগে রেট কার্ড!
এই কি ছিল নবীর ইসলাম?

বন্ধুগণ!
নবী মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন দাসত্ব ভাঙতে— আর আজ আলেমরাই বানিয়েছে নতুন দাসত্বের সাম্রাজ্য!
একসময় ফেরাউন দাস বানাতো চাবুক দিয়ে, এখন মোল্লা বানায় ভয় দেখিয়ে!
তারা বলে— “তুমি আমাদের ছাড়া কুরআন বুঝবে না।”
তারা বলে— “আমরা আল্লাহর প্রতিনিধি।”
তারা বলে— “আমাদের বিরোধিতা মানে ইসলামের বিরোধিতা।”
কি ভয়ংকর মিথ্যা! আল্লাহর প্রতিনিধি সে নয়, যে আল্লাহর বাণী বিক্রি করে পয়সার বিনিময়ে!

বন্ধুগণ!
তারা মঞ্চে বলে— “এই আমল করো, ওই দোয়া পড়ো, তবেই জান্নাত”— কিন্তু বলে না, “চিন্তা করো, গবেষণা করো, কুরআন পড়ো।”
কারণ তারা জানে, মানুষ যদি কুরআন বোঝে, তাহলে তাদের বাজার বন্ধ হয়ে যাবে!
তারা জানে, মানুষ যদি চিন্তা করতে শেখে, তাহলে কেউ তাদের হাতে গলা বাঁধবে না, কেউ তাদের হাতে জান্নাত কিনবে না!

বন্ধুগণ!
এই ধর্মব্যবসা শুরু হয়েছিল যখন দীনকে বানানো হলো “উৎসব”, আর আলেমকে বানানো হলো “পুরোহিত”!
কুরআন বলেছিল— “তোমাদের মধ্যে কোনো পুরোহিত নেই।”
কুরআন বলেছিল— “সরাসরি তোমার রবকে ডাকো।”
কিন্তু আলেমরা বানালো নিজেদের “মধ্যস্থ”, যেন ইসলামও হয় খ্রিস্টানদের মতো— পাদ্রি ছাড়া মুক্তি নাই, হুজুর ছাড়া জান্নাত নাই!

বন্ধুগণ!
এই আলেমশ্রেণি আজ ধর্মের নামেই করছে রাজনীতি, করছে বাণিজ্য, করছে দমননীতি।
তাদের দরকার নয় আল্লাহর আইন, দরকার শুধু তাদের আধিপত্য!
তারা মসজিদকে বানিয়েছে ক্ষমতার আসন, মাদরাসাকে বানিয়েছে ব্যবসার কারখানা, আর মিম্বরকে বানিয়েছে রাজনীতির হাতিয়ার।
তারা এক হাতে তসবীহ ধরে, আরেক হাতে ভোটের ব্যালট, এক মুখে দোয়া পড়ে, আরেক মুখে মিথ্যা বলে!

বন্ধুগণ!
তুমি কি ভাবো না, নবী (সা.) যদি আজ ফিরে আসতেন, এই আলেমদের দেখে কী করতেন?
তিনি কি হাসতেন? না! তিনি কাঁদতেন!
কারণ তিনি রেখে গিয়েছিলেন কুরআনের দীন, তারা বানিয়েছে ফিকহের দীন; তিনি দিয়েছিলেন মুক্তি, তারা দিয়েছে ভয়!
তিনি বলেছিলেন— “কুরআন ধরলে পথ হারাবে না”, তারা বলে— “কুরআন ধরলে ভ্রষ্ট হবে!”

বন্ধুগণ!
আজ দীনকে করা হয়েছে একটা প্রতিষ্ঠান, একটা পেশা।
হুজুর চাকরি করে আল্লাহর নামে! মাদরাসা চলে চাঁদা দিয়ে! ওয়াজ চলে স্পনসর দিয়ে!
এমনকি মৃত্যুর পর জান্নাতের জন্যও “প্যাকেজ অফার”— এক কোরআনখানি ৫০০০ টাকা!
ধর্ম এখন মঞ্চে গাওয়া গান, টিকটকে তাসবীহ, ইউটিউবে ফতোয়া—
এই হলো “আধুনিক ইসলাম ব্যবসা লিমিটেড”!

বন্ধুগণ!
তুমি হয়তো ভাবছো— আমি হুজুরদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। না!
আমি বলছি তাদের বিরুদ্ধে, যারা আল্লাহর বাণী বিক্রি করে!
যারা জানে সত্য, তবুও মানুষকে মিথ্যা খাওয়ায় নিজের সুবিধার জন্য!
যারা বলে “বুদ্ধি দিয়ে বোঝো না, আমাদের মতো বিশ্বাস করো”—
তারা তোমার শত্রু, তোমার শিকল, তোমার জাহান্নামের দরজা!

বন্ধুগণ!
এই উম্মতের পতনের মূলেই আছে এই ধর্মব্যবসা।
যেখানে মানুষ আল্লাহর জন্য নয়, মোল্লার জন্য কাজ করে; যেখানে ঈমান নয়, ফতোয়া চলে; যেখানে সত্য নয়, দলে দলে বিভাজন চলে!
তুমি মসজিদে যেও, কিন্তু সত্য খোঁজো না।
তুমি কুরআন পড়ো, কিন্তু বুঝো না।
তুমি নামাজ পড়ো, কিন্তু সিজদায় মেনে নাও না সত্যকে!
এই হলো আজকের উম্মত— বাহ্যিক ইসলাম, অন্তরে ব্যবসা!

বন্ধুগণ
একসময় ফেরাউন মানুষকে দাস বানাতো বলপ্রয়োগে, আর আজ ধর্মব্যবসায়ী বানায় মানসিকভাবে।
সে বলে— “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না যদি আমি না চাই।”
সে বলে— “তুমি আমার মাযহাব ছাড়লে কাফির।”
সে বলে— “তুমি হাদিসের চেয়ে কুরআনকে মানলে ভ্রষ্ট।”
এ যেন এক নতুন ফেরাউনত্ব— ধর্মের পোশাকে মোড়ানো শয়তানি রাজত্ব!

বন্ধুগণ!
এই আলেমরা এখন কুরআনের চেয়ে বড়!
তারা আয়াতকে কাটে, নিজের ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা দেয়, আয়াতের জায়গায় “ইমামের কথা” বসায়,
আর মানুষ ভাবে— “এটাই ইসলাম”!
তুমি কি বুঝো না, আল্লাহ বলেননি— “ইমাম মানো”,
আল্লাহ বলেছেন— “তুমি কুরআন মানো।”
তুমি কি আল্লাহর জায়গায় মানুষ বসিয়ে দিয়েছো?

বন্ধুগণ!
আজ এই উম্মত বিভক্ত হয়েছে দলীয় নামে— আহলে হাদিস, আহলে সুন্নাত, আহলে কুরআন, আহলে বিডাত—
কিন্তু কুরআন বলেছিল— “তোমরা দল দিও না।”
তোমরা দিলাে! কারণ দল থাকলে ব্যবসা থাকে, ঘৃণা থাকে, যুদ্ধ থাকে— আর সেই যুদ্ধেই তারা খায়, তারা বাঁচে, তারা রাজনীতি করে!
তারা ইসলামের নামে মানুষের রক্ত চুষে নেয়, মসজিদের দান খায়, আর নাম দেয় “খিদমতে দ্বীন”!

বন্ধুগণ!
তুমি কি দেখোনি— তারা রাজপথে ঝাঁপায়, কিন্তু কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করে না!
তারা সরকার গড়তে চায়, কিন্তু সমাজ গড়তে চায় না!
তারা চায় ক্ষমতা, না চায় আল্লাহর আইন!
কারণ সত্যের কথা বললে তাদের পকেট শুকিয়ে যায়,
কুরআনের ব্যাখ্যা দিলে তাদের দরবার ফাঁকা হয়ে যায়!

বন্ধুগণ!
এই ধর্মব্যবসায় এখন নতুন কৌশল এসেছে— ইউটিউবে আলেম, লাইভে ফতোয়া, টিকটকে তাসবীহ!
তারা প্রতিটি দোয়া বিক্রি করে বিজ্ঞাপনের মতো— “এই দোয়া পড়লে ধনী হবেন”, “এই সূরা পড়লে বিয়ে হবে”—
যেন আল্লাহর কিতাব কোনো ম্যাজিকের বই!
তুমি কি ভাবো, আল্লাহর বাণী তাবিজ?
না! এটা এক বিপ্লবী দিকনির্দেশনা— যা মানুষকে চিন্তা শেখায়, মুক্তি শেখায়, দায়িত্ব শেখায়!

বন্ধুগণ!
আজকের উম্মত ঈমান হারিয়েছে, কারণ তারা ঈমান বানিয়েছে পণ্য।
হুজুরের দরবারে গিয়ে দোয়া কেনে, আলেমের লাইভে গিয়ে তাসবীহ কেনে,
কিন্তু নিজের ভেতরে ঈমান গড়ে না।
তারা আল্লাহকে ভয় করে না, বরং “হুজুর”কে ভয় করে।
তারা কুরআন পড়ে না, বরং “ফতোয়া বই” মুখস্থ করে।

বন্ধুগণ!
এই অবস্থা যদি না বদলায়, তাহলে তোমাদের ভবিষ্যৎ একটাই— ধ্বংস।
তুমি হারাবে সন্তান, হারাবে চিন্তা, হারাবে আত্মা।
তোমার প্রজন্ম হবে ধর্মীয় রোবট— যারা নামাজ পড়ে, কিন্তু বোঝে না কেন পড়ে;
যারা সিজদা করে, কিন্তু মেনে নেয় না সত্যকে!
এই হলো সেই বিপর্যয়, যা আল্লাহ নিজেই বলেছিলেন—

“তারা তাদের আলেম ও পুরোহিতদের করেছে প্রভু।” (৯:৩১)

বন্ধুগণ!
তোমরা এখন সেই উম্মত— যারা আল্লাহর চেয়ে মোল্লাকে বড় বানিয়েছে!
কুরআনের চেয়ে ফিকহকে পবিত্র বানিয়েছে!
হেদায়াতের চেয়ে মাজারকে পছন্দ করেছে!
তুমি নামাজে আল্লাহকে ডাকো, কিন্তু কাজ করো হুজুরের নামে!
তুমি রোজা রাখো, কিন্তু বিশ্বাস রাখো অলৌকিক গল্পে!
তুমি মুসলমান, কিন্তু মুসলমানের কোনো চেতনা নেই তোমার মধ্যে!

বন্ধুগণ!
আজ যদি বাঁচতে চাও— তাহলে এই ধর্মব্যবসায় না বলো!
এই মিথ্যা হুজুরতন্ত্র ভাঙো!
এই ভয়, এই দাসত্ব, এই প্রতারণা শেষ করো!
ফিরে এসো তোমার রবের কিতাবে— কুরআনে,
যে কুরআন কোনো দল নয়, কোনো আলেম নয়, কোনো ফেরাউন নয়—
এটা আল্লাহর নিজস্ব আলো, যা কখনো নিভে যায় না!

বন্ধুগণ!
আজ শপথ নাও—
আমরা আর কাউকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবো না!
না কোনো আলেমকে, না কোনো ফতোয়াকে, না কোনো মাযহাবকে!
আমরা ফিরবো সেই একক সত্যে— “لا إله إلا الله”
যেখানে কোনো দালাল নেই, কোনো ব্যবসা নেই, শুধু আল্লাহ ও মানুষ— সরাসরি সম্পর্ক!

বন্ধুগণ!
হে উম্মত! সময় এসেছে— তোমার জ্ঞান ফিরিয়ে আনো, তোমার ঈমান ফিরিয়ে আনো, তোমার সাহস ফিরিয়ে আনো।
যে কুরআন মানুষকে মুক্তি দেয়, সেটিকে পড়ো বোঝার জন্য, না যে তোমাকে ভয় দেখায়!
যে নবী দাসত্ব ভাঙতে এসেছিলেন, তাঁর দীনকে মুক্তির পথ বানাও— ব্যবসার নয়!

বন্ধুগণ!
হে ভ্রান্ত জাতি! জাগো!
ধর্মকে পেশা বানিও না, দীনকে ব্যবসা বানিও না!
তুমি যে ইসলাম পেয়েছো, সেটা কোনো হুজুরের দান নয়—
এটা তোমার রবের পাঠানো এক মুক্তির বিপ্লব!

বন্ধুগণ!
ফিরে এসো সেই বিপ্লবে—
যেখানে আল্লাহর বাণীই চূড়ান্ত,
যেখানে মানুষ নয়, কুরআনই নেতা,
যেখানে দীন মানে আল্লাহর আইন,
আর ইসলাম মানে স্বাধীনতা— চিন্তার, সত্যের, ন্যায়ের, জ্ঞানের!

🕊️ শেষ আহ্বান:

“তারা আল্লাহর বাণী বিক্রি করে সামান্য দামে। তাদের জন্য ধ্বংস!” — (২:১৭৪)
হে উম্মত! তাদের মতো হয়ো না।
কারণ আল্লাহর বাণী বিক্রির এই ধর্মব্যবসাই তোমার পতনের কারণ,
আর কুরআনের আলোয় ফিরে আসাই তোমার একমাত্র মুক্তি।

Post a Comment

0 Comments