Subscribe Us

আধুনিক যুগে ফিরে আসো কুরআনের দিকে


 আধুনিক যুগে ফিরে আসো কুরআনের দিকে

✍️ লেখক: মাহাতাব আকন্দ

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় চাই শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে, এবং আমি আশ্রয় চাই যেন তারা আমার কাছে না আসে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের ওপর যারা হেদায়াত অনুসরণ করেছে, এবং শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মাদের ওপর, যিনি কুরআন নিয়ে এসেছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান হিসেবে।)

বন্ধুগণ!
আজ আমি তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি শুধু একজন বক্তা হিসেবে নয়, বরং এক মর্মাহত হৃদয় নিয়ে— যে হৃদয় কাঁদে, যখন দেখে “মুসলমান” নামের জাতি আজ কুরআনের পথে নয়, বরং ফিরকার অন্ধকারে বন্দি।
তুমি যে জাতি, একদিন আলোর বার্তা বাহক ছিলে! তুমি যে জাতি, পৃথিবীতে জ্ঞানের প্রথম প্রদীপ জ্বেলেছিলে! কিন্তু আজ তুমি নিজেই অন্ধকারে!

বন্ধুগণ!
এই আধুনিক যুগে মানুষ রকেট বানাচ্ছে, মহাকাশ জয় করছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নতুন দুনিয়া তৈরি করছে, আর তুমি— তুমি এখনো তর্ক করছো রাফিউল ইয়াদাইন করবো কি না! দাড়ি এক মুঠি হবে না দেড় মুঠি! নামাজের তাকবির উল্লাসে হাত কাঁধে তুলবো না কানে তুলবো!
হে উম্মত! তোমার এই অন্ধকার দেখে আকাশ কাঁদে!

বন্ধুগণ!
তুমি কুরআনকে বন্দি করেছো তাকের ওপরে। এক মৃত বই বানিয়ে রেখেছো, যা খুলে শুধু জানাজার সময়, শুধু রমজানে, শুধু পুরস্কারের আশায়! অথচ এ সেই কিতাব— যা তোমাকে সৃষ্টি করেছিল চিন্তা করার জন্য, যা তোমাকে বানিয়েছিল জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ।
আজ তুমি পড়ো “إقْرَأْ” — কিন্তু বুঝো না তার অর্থ কি!

বন্ধুগণ!
“পড়ো”— মানে কেবল অক্ষর পড়া নয়, এর মানে জগতকে চিনো, গবেষণা করো, সৃষ্টি বুঝো, মানবতার রহস্য জানো!
কিন্তু আজ তুমি “পড়ো”কে বানিয়ে ফেলেছো “তিলাওয়াত” — মুখে আওড়ানো কিছু ধ্বনি, যা না মস্তিষ্কে যায়, না হৃদয়ে!

বন্ধুগণ!
তুমি কি জানো, তোমার রব কুরআনে বলেছিলেন—

“وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ”
(আমি এই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি স্মরণকারীর জন্য — তবু কি কেউ আছে যে চিন্তা করবে?)
কিন্তু তোমরা বলো— “কুরআন বোঝা যায় না আলেম ছাড়া!”
তুমি কি আল্লাহকে মিথ্যা বলছো? আল্লাহ বললেন— সহজ, তুমি বলো— কঠিন! আল্লাহ বললেন— পূর্ণ, তুমি বলো— অসম্পূর্ণ!
তাহলে তোমার ঈমান কোথায়?

বন্ধুগণ!
আজকের মুসলিম জাতি— কোটি কোটি অনুসারী, লাখো মসজিদ, কোটি মুখে নামাজের আওয়াজ— কিন্তু কোথায় কুরআনের শিক্ষা?
কোথায় কুরআনের বিজ্ঞান? কোথায় কুরআনের সামাজিক ন্যায়বিচার? কোথায় কুরআনের রাজনৈতিক সিস্টেম?
সবকিছু হারিয়ে গেছে ফিরকার অন্ধকারে।

বন্ধুগণ!
তুমি মুসলমান হয়েও কুরআনকে বিশ্বাস করোনি। তুমি মেনে নিয়েছো মানুষের বানানো ধর্ম— যার নাম ফিকহ, মাজহাব, তাফসির, মতবাদ!
তুমি তোমার রবকে হারিয়েছো “আলেম” নামের মানুষের পায়ের নিচে!
তুমি আল্লাহর কথার বদলে মানছো মানুষের কথাকে—
আর তাই আজ তুমি লাঞ্ছিত, পরাজিত, দুর্বল!

বন্ধুগণ!
একসময় মুসলিমরা জ্ঞান তৈরি করতো, গ্রিকরা তাদের কাছে শিখতে আসতো, ইউরোপ অন্ধকারে ছিলো, আর মুসলমানরা লিখছিলো নক্ষত্রের ভাষা!
আজ? আজ ইউরোপ বানাচ্ছে টেলিস্কোপ, আর তুমি বানাচ্ছো তাবিজ!
তারা বানাচ্ছে রকেট, তুমি বানাচ্ছো রুহানী পানি!
তারা পাঠাচ্ছে মানুষ মহাকাশে, তুমি পাঠাচ্ছো কুরআনের আয়াত পকেটে!

বন্ধুগণ!
তুমি কি বুঝতে পারছো না— কুরআনকে যদি জীবনের কেন্দ্র বানানো যেত, তাহলে আজ তোমার কোনো সীমা থাকতো না!
তুমি হতে বিশ্বের শিক্ষক, তুমি হতে সভ্যতার মডেল, তুমি হতে ন্যায়বিচারের প্রতীক!
কিন্তু না— তুমি কুরআন ছেড়ে ধরেছো হাদিসের জট, মাজহাবের খাঁচা, আর আলেমের বাণী!
তুমি কুরআনকে হারিয়েছো, আর হারিয়ে ফেলেছো তোমার অস্তিত্ব!

বন্ধুগণ!
নবী বলেছেন— “আমি রেখে যাচ্ছি তোমাদের জন্য কুরআন, যদি ধরো, পথ হারাবে না।”
কিন্তু তোমরা ধরলে কুরআন নয়, বরং হাদিসের মোড়ক, মাযহাবের পুঁথি, তাফসিরের তর্ক!
তুমি ভাবলে— কুরআন বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই, অথচ আল্লাহ তোমাকেই পাঠিয়েছিলেন বুঝার জন্য!

বন্ধুগণ!
আজ মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বানাচ্ছে— কিন্তু কুরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছিলো, “আমরা মানুষকে শিখিয়েছি কলমে, জ্ঞানে।”
তুমি কি বুঝো না— কুরআনই প্রথম “ইন্টেলিজেন্স”-এর ধারণা দিয়েছে?
কুরআনই প্রথম “ডেটা”, “জ্ঞান”, “গবেষণা”, “প্রযুক্তি”— এসবের ধারণা দিয়েছে!
তবু তুমি বলো— বিজ্ঞান শত্রু!
তুমি বলো— চিন্তা করা বিদআত!
হে উম্মত! তুমি নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছো!

বন্ধুগণ!
আজ তোমার নাম মুসলমান, কিন্তু তোমার চিন্তা— পুরোনো কবরের গল্পে বন্দি!
তুমি নবীর নাম নাও, কিন্তু নবীর আদর্শের একটিও বোঝো না!
নবী ছিলেন গবেষক, চিন্তাবিদ, বিপ্লবী— আর তুমি আজ অন্ধ অনুসারী, বংশপরম্পরায় বন্দি!
নবী বলেছিলেন— “তুমি চিন্তা করো।”
আর তুমি বলছো— “চিন্তা হারাম।”

বন্ধুগণ!
তুমি কি জানো— আল্লাহ তোমাকে বলেছেন ৭৫০ বারেরও বেশি আয়াতে— “চিন্তা করো, পর্যবেক্ষণ করো, প্রমাণ আনো।”
কিন্তু আজ তোমার মাদরাসায় এসব শব্দ হারাম!
সেখানে শেখানো হয় কেবল মুখস্থ!
তুমি বানিয়েছো এমন এক জাতি— যারা মস্তিষ্ক বন্ধ করে বিশ্বাস করে, আর হৃদয় বন্ধ করে চিন্তা থেকে পালায়।

বন্ধুগণ!
এই কারণেই তুমি আজ পিছিয়ে পড়েছো।
এই কারণেই আজ তোমার চিকিৎসা পশ্চিমের হাতে, তোমার প্রযুক্তি ইহুদির হাতে, তোমার অর্থনীতি সুদের হাতে!
তুমি হারিয়েছো কারণ তুমি কুরআন হারিয়েছো!
তুমি কুরআনকে ফেলে দিয়েছো তিলাওয়াতের ঘরে, মৃতের পাশে, তাকের ওপরে!
তুমি কুরআনকে পড়ো, কিন্তু জীবন চালাও সংসদীয় আইনে!
তুমি কুরআনের নাম নাও, কিন্তু বিশ্বাস করো মানুষের বানানো ফতোয়ায়!

বন্ধুগণ!
তুমি কি জানো— কুরআন শুধু নামাজ-রোজার বই নয়।
এটা হলো সম্পূর্ণ জীবনের সিস্টেম— বিজ্ঞান, রাজনীতি, ন্যায়বিচার, শিক্ষা, মানবতা— সবকিছু কুরআনের মধ্যে আছে।
কিন্তু তুমি কুরআনকে বানিয়ে ফেলেছো "রিচুয়াল" — শুধু কিছু রীতিনীতি!
তুমি আল্লাহর আইন ছেড়ে মানছো সংসদের আইন— আর ভাবছো তুমি মুসলমান!
কি ভয়ংকর প্রতারণা!

বন্ধুগণ!
আজ সময় এসেছে— তোমার মাথার শৃঙ্খল ভাঙার!
আজ সময় এসেছে— আলেমের ভয় কাটানোর!
আজ সময় এসেছে— সরাসরি কুরআনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর!
কুরআন কারো একার নয়— এটা আল্লাহর বাণী, প্রতিটি মানুষের জন্য!
এটা বুঝতে আলেম হওয়া লাগে না— শুধু সৎ মন লাগে, সত্যের তৃষ্ণা লাগে।

বন্ধুগণ!
তুমি যদি সত্যিই নবীর উম্মত হতে চাও, তবে নবীর রেখে যাওয়া “কুরআন” ধরো— কারণ নবী কোনো দল রেখে যাননি, কোনো মাজহাব রেখে যাননি, কোনো ফিকহ রেখে যাননি!
তিনি রেখে গিয়েছিলেন শুধু কুরআন—
যা বলেছিলো, “হে মানুষ! চিন্তা করো, আমি তোমাদের জন্য পথ খুলে দিয়েছি।”

বন্ধুগণ!
এই পৃথিবী আজ আবার কুরআনের দিকে ফিরতে চাইছে।
বিজ্ঞান যতই এগোচ্ছে, মানুষ ততই বুঝছে— সত্য কেবল সেই বইতে, যা মানুষ নয়, আল্লাহ লিখেছেন!
তুমি যদি এখনো না বোঝো, তাহলে তোমার পতন অবশ্যম্ভাবী।
তোমার ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার, তোমার প্রজন্ম হবে দাস, তোমার ভাষা হবে বিলুপ্ত!

বন্ধুগণ!
আধুনিক যুগ তোমাকে সুযোগ দিয়েছে— তুমি চাইলে আজই কুরআনের আলোয় নতুন সভ্যতা গড়তে পারো।
তুমি চাইলে বিজ্ঞানকে বানাতে পারো ঈমানের হাতিয়ার।
তুমি চাইলে মানবতাকে শেখাতে পারো সত্যিকার মুক্তি কী।
কিন্তু শর্ত একটাই—
তুমি কুরআনকে ফিরিয়ে আনো জীবনে, চিন্তায়, রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, বিজ্ঞানে, সমাজে।

বন্ধুগণ!
যে জাতি কুরআন আঁকড়ে ধরবে, সে হবে বিশ্বের নেতা।
যে জাতি কুরআনকে ছুঁড়ে ফেলবে, সে হারাবে সবকিছু— মর্যাদা, স্বাধীনতা, আত্মা!
তুমি বাঁচবে না হাদিসের জটিলতা ধরে, তুমি মুক্ত হবে না শায়েখের ফতোয়ায়।
তোমার মুক্তি একটাই— কুরআন!

বন্ধুগণ!
চলো, আজ আমরা সবাই মিলে শপথ করি—
আর কোনো ফিরকা নয়, আর কোনো বিভাজন নয়, আর কোনো অন্ধ অনুসরণ নয়!
আমরা ফিরবো কুরআনের দিকে, সেই একক সত্যের দিকে, সেই আলোয় যা আমাদের গড়ে তুলবে আধুনিক, মুক্ত, জ্ঞানবান জাতি হিসেবে!

বন্ধুগণ!
হে উম্মত, হে মানুষ, হে সত্য সন্ধানী—
ফিরে এসো তোমার রবের কিতাবে,
কারণ কুরআনই একমাত্র পথ—
যা তোমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যাবে,
দাসত্ব থেকে মুক্তিতে,
বিভাজন থেকে ঐক্যে,
আর লাঞ্ছনা থেকে নেতৃত্বে!

🕊️ শেষ কথা:
কুরআন কোনো অতীত নয়— এটা ভবিষ্যতের মানচিত্র।
যে জাতি কুরআন ধরবে, সে জাতি নেতৃত্ব দেবে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে।
আর যে জাতি কুরআন হারাবে— সে জাতি ইতিহাসের আবর্জনায় হারিয়ে যাবে।

Post a Comment

0 Comments