Subscribe Us

দাজ্জাল, মাহদী কাহিনী — কুরআন বনাম লোককথা

 


দাজ্জাল, মাহদী কাহিনী — কুরআন বনাম লোককথা

✍️ লেখক: মাহাতাব আকন্দ


رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا

বন্ধুগণ!
তোমরা কি জানো, আজকের সবচেয়ে বড় দানব কে?
একচোখা কোনো দৈত্য নয়—
বরং একচোখা সমাজ!
যে এক চোখে দেখে ধর্ম, আরেক চোখে দেখে ভয়।

বন্ধুগণ!
দাজ্জাল আজ জন্ম নেয়নি কোনো গুহায়,
সে জন্ম নিয়েছে তোমার কানে,
যখন হুজুররা ভয় বিক্রি করে মঞ্চে!
যখন বলে—
"দাজ্জাল আসবে, চোখে লেখা হবে কাফের!"
তুমি তখন ভয়ে কাঁপো,
আর ভুলে যাও, কুরআন বলেছে—
“لا خوف عليهم ولا هم يحزنون”
যারা আল্লাহর পথে চলে, তাদের কোনো ভয় নেই!

বন্ধুগণ!
এই যে ভয়ের ধর্ম, এই যে আতঙ্কের ইসলাম —
এটা কুরআনের ইসলাম নয়!
এটা মঞ্চের ইসলাম,
বক্তৃতার ইসলাম,
যেখানে ভয় দিয়ে ভক্ত বানানো হয়!

বন্ধুগণ!
মাহদী আসবে?
কোথা থেকে? কবে? কেমন করে?
তুমি কি ভাবো, একদিন এক নায়ক আসবে,
আর সব অন্যায় মুছে দেবে এক ঝটকায়?
তুমি কি বুঝো না—
এটা সেই অলস মুমিনের স্বপ্ন,
যে নিজের দায়িত্ব থেকে পালাতে চায়!

কুরআন বলে—
“إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ”
“আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না,
যতক্ষণ না তারা নিজেরা পরিবর্তন করে নিজেদের।”

বন্ধুগণ!
তাহলে বলো—
যদি মাহদী এসে সব বদলে দেয়,
তবে এই আয়াত কার জন্য?
কুরআন কি ভুল বলেছে,
না তোমার হুজুররা বানিয়েছে নতুন কিতাব?

বন্ধুগণ!
মাহদী নয়, বদলাতে হবে তোমাকেই!
দাজ্জাল নয়, হারাতে হবে তোমার ভিতরের শয়তানকেই!

বন্ধুগণ!
তুমি ভাবো দাজ্জাল এক দৈত্য,
যে হাতে যাদুর লাঠি নিয়ে আসবে,
কিন্তু আমি বলি—
দাজ্জাল হলো সেই ব্যবস্থা,
যে মানুষকে করে বান্দা—মালিক নয়!
যে তোমার চোখে পর্দা লাগায়,
যাতে তুমি দেখতে না পাও সত্য!

বন্ধুগণ!
দাজ্জাল আজ লুকিয়ে আছে তোমার পর্দায়,
তোমার মোবাইলে, তোমার স্ক্রিনে,
যেখানে সত্যকে বিকৃত করে মিথ্যা বানানো হয়।
যেখানে দাড়িওয়ালা মিথ্যাবাদী,
কুরআনের আয়াত দিয়ে ব্যবসা চালায়!

বন্ধুগণ!
মাহদী আসবে না,
তোমাকেই হতে হবে মাহদী!
তোমার ভিতরের আলোকই হবে সেই পথপ্রদর্শক,
যে আলো জ্বলে কুরআনের আয়াতে।

বন্ধুগণ!
তোমাকে হতে হবে সেই বিদ্রোহী—
যে ভয় মানে না,
যে গল্পের ফাঁদে পড়ে না,
যে বলে— “আমার রবই যথেষ্ট।”

বন্ধুগণ!
তুমি জানো কুরআনে দাজ্জালের নাম নেই!
তুমি জানো, মাহদীর নামও নেই!
তাহলে কেন তুমি এমন কিছুর অপেক্ষায়,
যার কথা তোমার রব বলেননি কখনও?

বন্ধুগণ!
এটা সেই ধর্মব্যবসায়ীর কৌশল,
যে তোমাকে ব্যস্ত রাখে ভবিষ্যতের আতঙ্কে,
যাতে আজকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তুমি চুপ থাকো!

বন্ধুগণ!
তুমি ভেবে দেখো,
যদি দাজ্জাল এত বড় বিপদ হতো,
তবে আল্লাহ কি তা গোপন রাখতেন?
যিনি মশার ডানার কথাও ভুলে যাননি,
তিনি কি এই দানবের কথা বলতে ভুলে যেতেন?

বন্ধুগণ!
তুমি মিথ্যার বন্দী হয়েছো!
তুমি আতঙ্কে কাঁপছো এমন এক যুদ্ধের জন্য,
যার অস্তিত্বই কুরআনে নেই!

বন্ধুগণ!
এই ভয়, এই আতঙ্ক, এই দাজ্জাল-মাহদীর গল্প—
এগুলোই দাজ্জালের আসল কারখানা!
যে কারখানায় তৈরি হয় বোকা মুসলিম,
যে কুরআন না পড়ে গল্প শুনে ঈমান বানায়!

বন্ধুগণ!
তুমি জেগে ওঠো!
তুমি দাঁড়াও!
তুমি প্রশ্ন করো—
“হুজুর! এই গল্পের প্রমাণ কোথায়?”
তুমি বলো— “আমরা চাই কুরআনের দলিল,
ভয় নয়, যুক্তি চাই!”

বন্ধুগণ!
যে মুহূর্তে তুমি প্রশ্ন করবে,
দাজ্জাল কেঁপে উঠবে!
কারণ দাজ্জাল ভয় পায় প্রশ্নকে,
ভয় পায় জ্ঞানকে,
ভয় পায় কুরআনের আলোকে!
তুমি কি দেখছনা দাজ্জাল রোধ করতে চায় কুরআনে আলোকে,
দাজ্জালের কন্ঠ কি শোননি? সে চিতকার বলছে-
শুধু কুরআন না কিছুইনা, কোরআন নাকি পাইকারী বই,

বন্ধুগণ!
তুমি আজকের দাজ্জাল চেনো না—
সে টেলিভিশনের ক্যামেরায়,
সে ইউটিউবের বক্তৃতায়,
সে রাজনীতির বাণীতে!
সে ভয়ের ব্যবসায়ী,
যে কুরআনকে ঢেকে দেয় গালাগালির অন্ধকারে!

বন্ধুগণ!
এই দাজ্জালকে হারাতে যুদ্ধ লাগে না,
লাগে কুরআনের এক আয়াত,
একটা চিন্তা, একটা সাহসী প্রশ্ন।
যে প্রশ্ন ভেদ করে ভণ্ডদের দেয়াল।

বন্ধুগণ!
মাহদীর অপেক্ষা করো না,
মাহদীর যদি তোমার দরকারই হয়,
তাহলে নিজের ভিতরের মাহদীকে জাগাও!
যে মাহদী মিথ্যার বিরুদ্ধে কথা বলে,
যে মাহদী কুরআন হাতে নেয়,
যে মাহদী মঞ্চে নয়, মনের জগতে রাজত্ব করে!

বন্ধুগণ!
তুমি যখন বলবে—
“আমি কুরআন ছাড়া কিছু মানি না,”
তুমি তখনই হবে সত্যের সৈনিক,
তুমি তখনই হবে সেই মাহদী,
যার জন্য পৃথিবী অপেক্ষা করছিল!

বন্ধুগণ!
তুমি ভাবো, মাহদী আসবে ঘোড়ায় চড়ে,
হাতে তলোয়ার নিয়ে?
না বন্ধু!
সে আসবে চিন্তায়,
সে আসবে জ্ঞানে,
সে আসবে কুরআনের আলোয়।
তুমি সেই আলোকই তো!

বন্ধুগণ!
তুমি যদি আলো জ্বালাও সত্যের পক্ষে,
তুমি যদি মিথ্যার বিরুদ্ধে কলম ধরো—
তাহলে তুমিই মাহদী!
তুমি যদি ভয় না পাও মঞ্চের হুজুরকে,
তুমি যদি প্রশ্ন করো আল্লাহর আয়াত দিয়ে—
তাহলে তুমিই মাহদী!

বন্ধুগণ!
তুমি দাজ্জালকে ভয় পেও না।
সে আসবে না আকাশ ফুঁড়ে,
সে আসবে তোমার চিন্তায়,
তোমার লোভে, তোমার মিথ্যায়!

বন্ধুগণ!
দাজ্জাল হল সেইসব মিডিয়া,
যারা মানুষকে মানুষ থেকে বিভক্ত করে,
দাজ্জাল সেই নেতারা,
যারা ধর্মের নামে বিভাজন ছড়ায়!
দাজ্জাল সেই অর্থব্যবস্থা,
যে তোমার শ্রম খেয়ে বাঁচে!
দাজ্জাল সেই বক্তা,
যে কুরআনকে বানায় রসিকতার উপকরণ!

বন্ধুগণ!
তুমি যদি সত্যিই কুরআন জানো,
তবে দাজ্জালকে চিনতে তোমার কিসের ভয়?
যেখানে আল্লাহ বলেন—
“قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ”
“সত্য ও মিথ্যা স্পষ্ট হয়ে গেছে।”

বন্ধুগণ!
দাজ্জাল-মাহদীর গল্প ইসলামকে করেছে দুর্বল।
মানুষ আজ কর্মহীন, কারণ তারা অপেক্ষায় আছে—
মাহদী আসবে উদ্ধার করবে জাতিকে,
দাজ্জাল এসে তান্ডব করবে, কুরআন ছুড়ে ফেলবে,
আরেকজন এসে মারবে দাজ্জালকে!
হায়! কী নির্মম প্রতারণা! হায় কি আজব অপেক্ষা,
যে জাতি একসময় আকাশে উড়েছিল জ্ঞানের পাখায়,
আজ তারা গল্পে ভাসছে অজ্ঞতার জলে!

বন্ধুগণ!
এই অজ্ঞতার নদী শুকাতে হবে।
এই মিথ্যার স্রোত থামাতে হবে।
এই দাজ্জাল-মাহদীর গল্প ছিন্ন করতে হবে।

আমরা সেই জাতি হব,
যারা ভয় পাবে না একচোখা দৈত্যকে,
বরং ভয় পাবে একচোখা চিন্তাকে।
যে চিন্তা দেখে কেবল ফতোয়া আর হাদিস,
দেখে না মানুষকে! দেখেনা সত্যকে।

বন্ধুগণ!
আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি—
আমরা দাজ্জালের ধর্ম চাই না!
আমরা মাহদীর নামধারী অলস বিশ্বাস চাই না!
আমরা চাই কর্মের ইসলাম,
চাই চিন্তার ইসলাম,
চাই কুরআনের ইসলাম!

বন্ধুগণ!
যারা বলবে “তুমি আহলে কুরআন”,
তাদের বলো—
“হ্যাঁ! আমি কুরআনের আহবান শুনেছি!”
যারা বলবে “তুমি নাস্তিক”,
তাদের বলো—
“না, আমি চিন্তাশীল মুমিন!”

বন্ধুগণ!
আমরা ফ্রেন্ডস অফ কুরআন।
আমরা হব আগুনের মতো,
যে আগুন জ্বলে অন্ধকার ভেদ করে!
আমরা হব বজ্রের মতো,
যে গর্জে ওঠে মিথ্যার আকাশে!
আমরা হব কলমের মতো,
যে কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেয় মনের ভেতর!

বন্ধুগণ!
আজ আমরা বিদ্রহ করছি—
গল্পের বিরুদ্ধে, মিথ্যার বিরুদ্ধে, ভয় বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে!
এই বিদ্রোহের নাম— “কুরআনই আমার দিশা!”

বন্ধুগণ!
এই বিদ্রোহ শেষ হবে না মঞ্চে,
এই বিদ্রোহ চলবে তোমার হৃদয়ে, তোমার ঘরে, তোমার কলমে।
যতদিন মানুষ দাজ্জাল-মাহদীর কল্পনায় বন্দী থাকবে,
ততদিন আমরা কলম চালাবো আগুনের মতো।

বন্ধুগণ!
তুমি যদি সত্যি মুসলিম হও,
তবে উঠো!
কুরআন হাতে নাও,
গল্প ফেলে দাও,
ভয় পুড়িয়ে দাও,
আর বলো—
“حسبنا الله ونعم الوكيل”
আল্লাহই আমার ভরসা, তিনিই যথেষ্ট!

বন্ধুগণ!
আমরা সেই জাতি,
যারা সত্যকে মঞ্চে ফিরিয়ে আনবে।
যারা বলবে—
“দাজ্জাল-মাহদী গল্প নয়,
সত্য হলো কর্ম, সত্য হলো কুরআন!”

বন্ধুগণ!
এই কথাই ছড়িয়ে দাও স্রোতের মতো—
দাজ্জালকে ভয় নয়, চিনে নাও!
মাহদীর অপেক্ষা নয়, নিজেকে বদলাও!
এটাই বিদ্রোহের ইসলাম,
এটাই সত্যের আহ্বান,
এটাই কুরআনের বাণী।

🔥 শেষ কথা:
বন্ধুগণ!
এই বিদ্রোহ কোনো গালাগাল নয়,
এই বিদ্রোহ কোনো বিদ্বেষ নয়,
এই বিদ্রোহ কেবল আলোর আহ্বান—
যাতে মানুষ ফেরে কুরআনের কাছে,
যেখানে নেই দাজ্জাল, নেই মাহদীর গল্প,
আছে কেবল সত্য, যুক্তি, আর আল্লাহর বাণী।

Post a Comment

0 Comments