Subscribe Us

হাদিস অস্বীকারকারীরা কাফের নয়


হাদিস অস্বীকারকারীরা কাফের নয়

লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ

আজ আমি এমন এক ফতোয়া নিয়ে দাঁড়িয়েছি। যেটা সাংঘাতিক হাস্যকর, এই ফতোয়া যদি সাধারণ মানুষ দেয় তাহলে তা অন্য বিষয়। কিন্তু যখন নামধারী আলেমরা এই ফতোয়া দেয় তখন ধরে নিতেই হয় যে, বাংলাদেশের মাদরাসা গুলো আলেম নয় বরং  মুর্খ আর ভন্ড জন্ম দিচ্ছে।
এ কেমন ফতোয়া—
“হাদিস অস্বীকারকারীরা নাকি কাফির?”

ওহে মানবসমাজ! ওহে ধর্মপ্রাণ মানুষ!
আমি আজ এমন এক আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি যেখানে সবসময় শুধু কাফের দেখা যায়।
সেখানে তুমি দাড়ালে,
তোমার চেহারাও ফুটে উঠবে,
আমি দাড়ালে,
আমার চেহারাও ফুটে উঠবে।
কে বানালো এই ফতোয়া,
আমি চাই সে আগে দেখুক তার চেহারা,
কারণ এই প্রশ্ন এমন এক জ্বলন্ত বজ্র,
যা আঘাত করলে সব মুখোশ ছিঁড়ে যায়।

আল্লাহ কিতাব দিয়েছেন—কুরআন।
তাতে ঘোষণা করেছেন—
“আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণ করলাম।
দীন পরিপূর্ণ হলে আর কী দরকার?
তুমি কিভাবে বল, “কুরআন যথেষ্ট নয়”?
তুমি কোন সাহসে বল, “কুরআনের সাথে বুখারী, মুসলিমও ফরজ”?

বন্ধুগণ, ভাবো—
যদি কুরআন অপূর্ণ হয় তবে আল্লাহর বাণী অপূর্ণ!
যদি কুরআন যথেষ্ট না হয় তবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ!
তাহলে আসল কাফের কে? শোন! তার পরিচয়,
যে কুরআনকে পূর্ণ মনে করেনা সে আসল কাফের।
যে কুরআনকে অসম্পূর্ণ ঘোষণা দেয় সেই হলো আসল কাফের।।
যে আল্লাহর কিতাবকে ব্যার্থ প্রমান করতে চায়,
যে আল্লাহর কিতাবের সাথে মানব রচিত কিতাবকে সমকক্ষ দাড় করায়, সে হলো আসল মুশরিক।।

আহা মুসলিম সমাজ!
তুমি আজ কত বিভক্ত!
হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি, হাম্বলি, আহলে হাদিস—
তুমি আজ মাজহাবের বেড়াজালে বন্দী।
প্রতিটি দল হাতে নিয়েছে কিছু সহীহ হাদিস,
আর বাকিগুলো ছুড়ে ফেলেছে আবর্জনার ঝুড়িতে।

তুমি নামাজ পড়ছ?
কেউ হাত বেঁধেছে বুকে,
কেউ বেঁধেছে নাভির নিচে,
কেউ দাঁড়িয়েছে খোলা হাতে।
প্রতিটি কায়দার জন্য সহীহ হাদিস আছে।
তাহলে কোনটা মানবে? আর কোনটা ছুঁড়ে ফেলবে?
যদি কেউ হাদিস না মানলে কাফের হয়,
তাহলে সব হানাফিরা কাফের,
কারণ তারা রফউল ইয়াদাইনের সহীহ হাদিস মানে না।
আহলে হাদিসরাও কাফির,
কারণ তারা হানাফিদের নাভিতে হাত বাধা, 
রফউল ইয়াদাইন না করা সহ,  
আরো অনেক সহীহ হাদিস মানে না।
তাহলে দেখ— আহলে হাদিসরাও হাদিস না মানায় কাফের।
এবার বলো-- পৃথিবীতে আর মুসলমান থাকলো কোথায়?

সহীহ হাদিস বলে—
রাসুল আস্তে আমিন বলতেন।
অন্য আরেক সহীহ হাদিস বলে—
রাসুল জোরে আমিন বলতেন।
তাহলে কারটা নেবে?
তুমি যদি আস্তে আমিন বলো,
তাহলে জোরে আমিন বলার সহীহ হাদিস অমান্য করলে।
তুমি হয়ে গেলে হাদিস অসীকারকারী কাফের।
তুমি যদি জোরে বলো,
তাহলে চুপচাপ আমিনের হাদিস ছুঁড়ে ফেললে, ও অমান্য করলে।
উভয় পক্ষ একে অন্যকে কাফির বানাচ্ছে।
তাহলে বলো—কোন মসজিদে দাঁড়ালে নিরাপদ?
প্রতিটি কাতারে কাফের আর কাফের দাঁড়িয়ে আছে!

সহীহ হাদিসে নারীর খাতনার কথা বলা আছে।
আজ মুসলিম সমাজের অধিকাংশ নারী খাতনা করে না।
তাহলে কি আজ পুরো দুনিয়ার মুসলিম নারীরা কাফের?
তাদের ভাই, স্বামী, পিতা যারা খাতনা করালো না,
তারা কি সবাই কাফের?
হায়রে মোল্লা, হায়রে ফতোয়াবাজ!
তাহলেতো তোমার ঘরটাও কাফেরের ঘর!

বন্ধুগণ!
চলো! সেই হাদিসের কথা শুনি, যেটা শুনলে বিবেক কেঁপে ওঠে, মনুষ্যত্ব লজ্জায় ডুবে যায়। সেই হাদিস হল— “রাসূল নাকি উটের প্রসাব পান করতে বলেছিলেন”!
হায়রে ফতোয়াবাজ! একবার আয়নায় তাকাও তো! আল্লাহর কিতাবে কি কোথাও আছে—উটের প্রসাব খাও ওষুধ হিসেবে?
"قَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ"
“তিনি তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।” (সুরা আনয়াম ৬ঃ১১৯)
বলো তো, কোথায় আছে সেখানে—“উটের প্রসাব হালাল”?

আজ মুসলিম দুনিয়ার কেউ কি উটের প্রসাব পান করে? মক্কা-মদিনার বাদশাহ, আলেম, মুফতি—তাদের ঘরে কি প্রসাব ভর্তি বোতল চলে? যদি না চলে, তবে কি তারা সবাই কাফের? যদি তোমাদের যুক্তি হয় “হাদিস না মানা মানেই কাফের”—তাহলে সবার আগে তোমার ঘর ঘর নয় ওটা একটা কাফেরখানা!

বন্ধুগণ!
এটাই হাদিসের ব্যবসা! একেকটা হাদিস বানিয়ে দিয়েছে শয়তানের বাজার। কোথাও নারীর খাতনা, কোথাও উটের প্রসাব—যা মানবতার সঙ্গে, কুরআনের সঙ্গে, বিবেকের সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। কিন্তু মোল্লারা এসবকে বানিয়েছে ঈমানের শর্ত। প্রশ্ন করি—ওহে ফতোয়াবাজ! আল্লাহ কি আমাদের এমন অপমানজনক দ্বীন দিয়েছেন? আল্লাহর দ্বীন কি উটের প্রসাবের বোতলে বন্দী?

বন্ধুগণ!
আজকে আমরা যদি হাদিসের দোকানদারদের প্রশ্ন করি—“তোমার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে কি উটের প্রসাব খাওয়াও?”—তারা চুপ হয়ে যায়। কারণ তারাও জানে, এটা অমানবিক, অযৌক্তিক, আর কুরআনের বিরুদ্ধে।

বন্ধুগণ!
তাহলে আসল প্রশ্ন—আজ যারা উটের প্রসাবের হাদিসে ঈমান আনে, অথচ নিজের জীবনে তা মানে না, তারা কি দ্বিমুখী নয়? তারা কি আসলেই কুরআনের অনুসারী, নাকি হাদিস অমান্যকারী কাফের?

মুসলিম শরিফের হাদিস বলে—
সূর্য প্রতিদিন আরশের নিচে গিয়ে সিজদা দেয়।
কিন্তু কুরআন বলে—
“সূর্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলমান।” (৩৬:৩৮)
আহা, এ কোন দ্বন্দ্ব?
তুমি যদি বলো সূর্য মাথা ঠেকিয়ে সিজদা দেয়,
তাহলে কুরআনকে অমান্য করলে।
তুমি যদি বলো সূর্য নিজ কক্ষপথেই ঘোরে,
তাহলে হাদিসকে অমান্য করলে।
তাহলে যেদিকেই দাঁড়াও, যে পক্ষই নাও,
অন্যদিক থেকে তোমাকে কাফের ঘোষণা করা হবে।

সহীহ বর্ণনায় আছে—
রাসুল মানুষের জাদুর কবলে পড়েছিলেন,
নামাজ পড়েছেন কি পড়েননি—তা ভুলে যেতেন।
আল্লাহর রাসুল কি ভুলে যান?
যে রাসুলকে আল্লাহ বলেছেন—
“আমি আপনাকে মানুষের প্রভাব থেকে রক্ষা করব।” (৫:৬৭)
যদি বল তিনি জাদুর কবলে পড়েছিলেন তাহলে তুমি কুরআনকে মিথ্যা বললে!
আর যদি বল তিনি জাদুর কবলে পড়েননি তবে হাদিসকে মিথ্যা বললে!
তুমি যেটাই মানো, অন্যটাকে অস্বীকার করতেই হবে।
তাহলে তোমার ফতোয়ায় কাফেরের তলোয়ার  তোমার গলাতেই আসবে!

চলো! এবার দেখি আসল কাফের কে?
ওহে ফতোয়াবাজ,
তুমি বলো—“হাদিস অস্বীকারকারীরা কাফের।”
আমি বলি—তাহলে তুমিই কাফের,
কারণ তুমি হাজারো সহীহ হাদিস মানো না।
তুমি যে মাজহাবের, তুমি যে মানহাজের,
অন্য মানহাজ ও মাজহাবের সহীহ হাদিসগুলোক তুমি বর্জন করো।
তাহলে তুমি নিজের ফতোয়ার ফাঁসিতে নিজেই ঝুলে আছো।

বন্ধুগণ,
সত্যি কথা হলো—
কাফির বানানোর এই খেলায় মুসলিম সমাজ ডুবে গেছে।
হানাফি আহলে হাদিসকে কাফির বানায়,
আহলে হাদিস হানাফিকে কাফির বানায়।
শিয়া সুন্নিকে কাফির বানায়,
সুন্নি শিয়াকে কাফির বানায়।
তাহলে দুনিয়ায় মুসলমান আর থাকলো কোথায়?
সবাই কাফেরের খাতা পূর্ণ করেছে!

বন্ধুগণ,
হাদিসকে পুরোপুরি অস্বীকার করা ঠিক নয়,
আবার অন্ধভাবে মানাও ঠিক নয়।
কুরআনের সাথে মিলে গেলে হাদিস গ্রহণযোগ্য,
না মিললে তা রাসুলের হাদিস হতে পারে না।
কারণ আল্লাহ কখনো নিজ বাণীর সাথে বিরোধী
কিছু তাঁর রাসুলের মুখে তুলবেন না।
এটাই প্রকৃত ইসলাম।

আমি আজ জোড় গলায় ঘোষনা করছি—
হে মুসলিম সমাজ!
হাদিসের নামে বিভেদ ছুড়ে ফেলে দাও।
তুমি কুরআনকেই একমাত্র দলীল বানাও, কুরআনকেই আঁকড়ে ধরো।
কারণ কুরআনেই আল্লাহর ঘোষণা—
“এ কিতাবে কিছু বাদ পড়েনি।” (৬:৩৮)
তাহলে তুমি কেন বিভ্রান্ত হবে?
কেন কাফিরের লেবেল নিয়ে খেলবে?

ওহে ফতোয়াবাজ,
তোমার ফতোয়া তোমাকেই গিলে খাচ্ছে।
ওহে মুসলিম সমাজ,
তুমি যদি হাদিসের দ্বন্দ্বে আটকে যাও,
তাহলে সবাই কাফের, কেউ মুসলিম নয়!
তুমি যদি কুরআনকেই শেষ বিচারক বানাও,
তাহলে বিভক্তি মুছে যাবে,
ঐক্য আসবে, আলো আসবে।

বন্ধুগণ,
আমার বক্তব্য স্পষ্ট,
আগুনের মতো তপ্ত, বজ্রের মতো কঠিন।
আমি স্পষ্ট করে বললাম—
হাদিস অস্বীকারকারীরা কাফির নয়,, বরং
কুরআন অস্বীকারকারীরাই কাফির।
হাদিস যদি কুরআনের সাথে মেলে, তাহলে গ্রহণ কর।
না মিললে ফেলে দাও। কারণ যা কুরআনের সাথে মিলেনা তা নবীর হাদিস নয়। নবীর কথা কখনো কুরআনের বিপরিতে যাবেনা।
এটাই ইসলাম, এটাই তাওহীদ, এটাই মুক্তি।
তাই বলছি,
ভন্ডামি ছেড়ে দিয়ে কুরআনের সঙ্গী হয়ে যাও,
তওবা করে কুরআনের বন্ধু হয়ে যাও।
Become a friend of the Quran.
Become a friend of the Quran.
Become a friend of the Quran.
---

Post a Comment

0 Comments