Subscribe Us

জিজিয়া কর কি! ও কিভাবে দিতে হয়?

 


জিজিয়া কর কি! ও কিভাবে দিতে হয়?
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ

আজ আমরা দাঁড়িয়েছি এক ভয়ংকর অভিযোগের সামনে।
কিছু লোক—নিজেদের আহলে হাদিস বলে পরিচয় দেয়—
তারা বলে, “কুরআন অসম্পূর্ণ।”
তাদের দাবি— সূরা তাওবা ৯:২৯ আয়াত হাদিস ছাড়া ব্যাখ্যা করা যায় না।
আমি আজ তাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি—
তাদের যুক্তি শুধু দুর্বল নয়,
বরং আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ,
কুরআনের পূর্ণতাকে অস্বীকার,
আল্লাহর ঘোষণাকে অমান্য করা।
আল্লাহর কিতাবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।


আল্লাহ তাআলা বলেন—
“قَاتِلُوا ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلْحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ حَتَّىٰ يُعْطُوا۟ ٱلْجِزْيَةَ عَن يَدٍۢ وَهُمْ صَـٰغِرُونَ”
(সূরা আত-তাওবা ৯:২৯)

“তাদের সাথে যুদ্ধ করো যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না—যারা আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত—যতক্ষণ না তারা জিজিয়া দেয় নিজেদের হাতে এবং অপমানিত অবস্থায়।”

আহলে হাদিসদের অভিযোগ
আহলে হাদিসরা বলে—
এই আয়াত বোঝার জন্য হাদিস লাগবেই।
নাহলে বোঝা যাবে না জিজিয়া কিভাবে ও কত দিতে হবে,
যুদ্ধ কার সাথে হবে, কখন হবে,
কাকে “আহলে কিতাব” বলা হবে।
তাদের যুক্তি হলো— কুরআন শুধু হেডলাইন দিয়েছে, বিস্তারিত দেয়নি।
তাহলে কুরআন অসম্পূর্ণ।

বন্ধুগণ! শুনে রাখো—
এই যুক্তি শুধু ভ্রান্ত নয়, বরং শয়তানের তৈরি ফাঁদ।
শয়তান তাদের মুখ দিয়ে কথা বলে।
তার চায় কুরআনের আলো মুখের ফুতকারে নিভিয়ে দিতে।
কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পুর্ণ করবেনই।

কুরআনের ঘোষণা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
“ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ” (৫:৩)
“আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীন পূর্ণ করলাম।”

আল্লাহ বলেছেন—
“مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَـٰبِ مِن شَىْءٍۢ” (৬:৩৮)
“আমি কিতাবে কিছুই অবহেলা করিনি।”

আল্লাহ বলেছেন—
“وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ تِبْيَـٰنًۭا لِّكُلِّ شَىْءٍۢ” (১৬:৮৯)
“আমি এ কিতাব নাজিল করেছি সবকিছুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসেবে।”

তাহলে কার সাহস হলো কুরআনকে অসম্পূর্ণ বলার?
কার সাহস হলো আল্লাহর ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করার?
এই সাহস শয়তানের সাহস!

আয়াতের ব্যাখ্যা (হাদিস ছাড়া)
চলুন দেখি আয়াত নিজেই কি বলে—

১️⃣ “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না”
👉 স্পষ্ট। অবিশ্বাসীদের চিহ্নিত করা হলো।

২️⃣ “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না”
👉 অর্থাৎ তারা আল্লাহর সীমারেখা মানে না।

৩️⃣ “যারা সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না”
👉 সত্য দ্বীন মানে ইসলাম। কুরআন নিজেই বলেছে—
“إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَـٰمُ” (৩:১৯)
“আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন শুধু ইসলাম।”

৪️⃣ “যারা আহলে কিতাব”
👉 অর্থাৎ যারা পূর্বের কিতাবপ্রাপ্ত—ইহুদি ও খ্রিস্টান।
এটা কুরআন নিজেই ব্যাখ্যা করেছে বহু স্থানে।

৫️⃣ “যতক্ষণ না তারা জিজিয়া দেয়”
👉 এখানে উদ্দেশ্য পরিষ্কার— তারা মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হলে তাদের সুরক্ষার বিনিময়ে কর দিতে হবে।
কুরআনে আগেই নিয়ম আছে—
“خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةًۭ تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا” (৯:১০৩)
“তাদের সম্পদ থেকে নাও, তা তাদেরকে পবিত্র করবে।”
তাহলে জিজিয়া মানে রাষ্ট্রীয় ট্যাক্স, যুদ্ধবন্দুক নয়।

বাস্তব উদাহরণ
বন্ধুগণ! ভাবো একবার—
আজকের পৃথিবীতে রাষ্ট্র ট্যাক্স নেয়।
মুসলিম হোক বা অমুসলিম— সবার কাছ থেকেই রাষ্ট্র কর আদায় করে। নবী ছিলেন রাস্ট্র প্রধান, তাই তিনি তার রাষ্ট্রের জিজিয়া নির্ধারণ করেছিলেন। এখনো রাস্ট্র নিজে তার রাস্ট্রের কর নির্ধারণ করবে। রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থনীতির উপর নির্ধারিত হবে রাষ্ট্রিয় কর।
ইসলামও একই কথা বলে—
যে মুসলিম নয়, সে রাষ্ট্রে থাকতে চাইলে জিজিয়া দেবে।
এতে কি বোঝার জন্য হাদিস লাগবে?
না! কুরআন নিজেই স্পষ্ট করেছে।

আহলে হাদিসদের ফাঁদ
আহলে হাদিসরা বলে—
জিজিয়া কত হবে? সোনা নাকি রূপা?
যুদ্ধ কখন শুরু হবে?
কাকে আক্রমণ করতে হবে?

বন্ধুগণ! এটাই তাদের ধোঁকাবাজি।
কারণ কুরআন আইন দিয়েছে নীতিগত,
বিস্তারিত অংক নির্ধারণ করেছে উম্মাহর ইজতিহাদ।
আল্লাহ কখনো বলেননি— প্রতিটি খুঁটিনাটি লিখব।
তিনি বলেছেন—
لِّيَدَّبَّرُوا۟ ءَايَـٰتِهِ” (৩৮:২৯)
“তারা যেন তাঁর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করে।”

বিস্তারিত কিভাবে চলবে— তা মানুষের যুক্তি ও সমাজ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
এটা কুরআনের স্টাইল।

তুলনামূলক উদাহরণ
কুরআন বলেছে— সালাত কায়েম করো।
বলেছে— যাকাত দাও।
বলেছে— সওম রাখো।
বলেছে— হজ করো।

আহলে হাদিস বলে— বিস্তারিত নেই, তাই কুরআন অসম্পূর্ণ।
কিন্তু বন্ধুগণ! বিস্তারিত কুরআন দেয়নি কারণ সেটাই পরীক্ষার জায়গা।
নীতিমালা কুরআনে, প্রয়োগ মানবসমাজে।
এটাই কুরআনের পরিপূর্ণতা।

বিদ্রোহী আহ্বান
বন্ধুগণ!
আজ আমি আহলে হাদিসদের জিজ্ঞাসা করি—
তোমরা কি কুরআনকে অসম্পূর্ণ বলতে চাও?
তাহলে তোমরা সূরা মায়িদাহ ৫:৩ অস্বীকার করছো।
তাহলে তোমরা সূরা নাহল ১৬:৮৯ অস্বীকার করছো।
তাহলে তোমরা কুরআনকেই অস্বীকার করছো!

তাহলে শোনো—
আমরা মানি, কুরআন পূর্ণাঙ্গ।
আমরা মানি, আল্লাহর আইন যথেষ্ট।
আমরা মানি, ৯:২৯ আয়াত স্পষ্ট—
অবিশ্বাসীদের সিস্টেম ভাঙতে হবে,
আহলে কিতাবদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে,
ইসলামি রাষ্ট্রে থাকতে চাইলে তারা জিজিয়া দেবে,
এটাই কুরআনের ঘোষণা।

বন্ধুগণ!
কুরআন কারো দাস নয়, হাদিসের ব্যাখ্যা বই নয়।
কুরআনই মূল, বাকিগুলো তার ছায়া।
আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন—
“وَإِنَّهُۥ لَكِتَـٰبٌ عَزِيزٌۭ لَّا يَأْتِيهِ ٱلْبَـٰطِلُ مِنۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ” (৪১:৪১-৪২)
“এ কিতাব অটল, এর সামনে-পেছনে মিথ্যা আসতে পারবে না।”

তাহলে আহলে হাদিসরা যদি বলে কুরআন অসম্পূর্ণ—
তারা আসলে নিজেদের ঈমান অসম্পূর্ণ প্রমাণ করছে।

আমি বলছি—
👉 কুরআনই পূর্ণাঙ্গ,
👉 কুরআনই যথেষ্ট,
👉 কুরআনই দ্বীনের শেষ কথা।

Post a Comment

0 Comments