প্রকৃত সিজদার অঙ্গীকার: অন্তরের সমর্পণ ও জীবনের পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য” লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
বন্ধুগণ!
আজ আমরা যে আলোচনার মুখোমুখি, তা শুধু একটি ধর্মীয় শিক্ষা নয়, এটি হলো মানব আত্মার এক অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, যেখানে বাহ্যিক নিয়মের চাপে আমরা কি হারিয়ে যাচ্ছি, আর প্রকৃত অর্থে আল্লাহর আদেশ মানতে পারছি কি না—এটি আমাদের পরীক্ষার বিষয়। বন্ধুগণ! আমরা আজ সিজদার কথা বলবো। কেবল মাথা মাটিতে ঠেকানো নয়, না শুধু হাত-পা কাঁপানো নয়, না কোনো মাদরাসার বইয়ের নির্দেশ অনুসরণ নয়। আমরা আজ বলবো—সিজদা মানে আল্লাহর আদেশ মেনে নেওয়া, প্রভুর নির্দেশকে হৃদয়ে স্বীকার করা, আত্মার পূর্ণ সমর্পণ।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِّنَ النَّاسِ ۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ ۚ وَمَن يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن مُّكْرِمٍۚ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ
“আপনি কি দেখেননি, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যারা আছে, সূর্য, চাঁদ, তারারা, পাহাড়, গাছপালা ও পশুপাখি সবাই আল্লাহর প্রতি সিজদা করে; অনেক মানুষের জন্য কঠোর শাস্তি স্থির আছে। যে কাউকে আল্লাহ নিপীড়িত করেন, তার জন্য কেউ সম্মান দিতে পারবে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করেন।” (সুরা হাজ আয়াত ১৮)
বন্ধুগণ! আমরা ভাবি সিজদা হলো একটা রীতি, যা আমরা মেনে চলি। আমরা ভাবি, “হ্যাঁ, আমরা প্রতিদিন সালাতে গিয়ে মাথা মাটিতে ঠেকাই, হাত-পা মুছে ঘামি।” কিন্তু বন্ধুগণ! কুরআন আমাদের শেখাচ্ছে, যে সিজদা, তার বাস্তব অর্থ কেবল বাহ্যিক আঙ্গিক নয়। প্রকৃত সিজদা হলো মেনে নেওয়া, অন্তরের স্বীকারোক্তি, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহর হুকুম মানা।
বন্ধুগণ! সূর্যকে দেখুন। প্রতিদিন সে পূর্ব দিক থেকে উঠছে, পশ্চিম দিকে চলে যাচ্ছে, কখনো থেমে থাকে না। কেউ তাকে বাধ্য করছে না। সে কেবল আল্লাহর নিয়ম মেনে চলছে। তার প্রতিটি কিরণ, প্রতিটি আলো, প্রতিটি তাপ—সবই আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত। এটাই তার সিজদা। পাহাড়ের স্থিরতা দেখুন—শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ঝড়-ঝঞ্ঝার মুখে কাঁপে না, হার মানে না। কেন? কারণ সে আল্লাহর নির্দেশে চলছে। নদী, যার পানি কখনো স্থির হয় না, স্রোতমান, বাঁক-প্রতিবন্ধকতা পার হচ্ছে—সবই আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে। বন্ধুগণ! এরা প্রতিটি মুহূর্তে সিজদা করছে, অন্তরের ভয়ে, শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে।
মানুষ, আমরা কি এই প্রকৃতির সৃষ্টির থেকে শিক্ষা নেব না? আমরা কি শুধু বাহ্যিক আঙ্গিকের খেলা খেলতে থাকবো, যে শুধু হাত মাটিতে রাখলে, মাথা ঢেকে রাখলে মনে হবে সিজদা হয়ে গেল? বন্ধুগণ! না, প্রকৃত সিজদা হলো মনের সম্মতি, আত্মার অঙ্গীকার, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা।
বন্ধুগণ! ভাবুন, একটি গাছ কীভাবে জন্মায়। তার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে, প্রতিটি শাখা আলোর দিকে ছড়ায়। সে বাঁশি বাজায় না, বই পড়ে না, কিন্তু প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি বৃদ্ধি—সবই আল্লাহর নির্দেশে। প্রতিটি ফুল, প্রতিটি পাতা, প্রতিটি বীজ—এরা সবাই অনুগত। নদীও তাই, পাহাড়ও তাই, আকাশের তারা, চাঁদও তাই। এরা কেউ নির্দেশিত নয়, কেবল স্বেচ্ছায় আল্লাহর নিয়ম মেনে চলছে।
বন্ধুগণ! আমরা কি আমাদের জীবনে এই মেনে নেওয়ার শিক্ষা নিতে পারি? না, আমরা প্রায়ই সীমাবদ্ধ হয়ে যাই বাহ্যিক রীতিতে। আমরা ভাবি, “আমি সালাতে গিয়েছি, হাত-পা ঠেকিয়েছি, শেষ।” বন্ধুগণ! কিন্তু যদি অন্তর, মন, চিন্তা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী না চলে, তবে আমাদের সেই সিজদার কোনো মূল্য নেই। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ, তারা—এরা আমাদের শিক্ষক। এরা বলছে, “সিজদা মানে আমাদের চলার নিয়ম মেনে চলা, বাধ্য নয়, আমাদের অন্তর স্বীকার করছে।”
বন্ধুগণ! এই বিদ্রোহী শিক্ষাটি আমাদের হৃদয়কে ঝকঝকে করবে। আমরা আজ পর্যন্ত যে ভুল বোঝাবুঝি করেছিলাম, যে বাহ্যিক আঙ্গিককেই সিজদা ভাবতাম, তা আজ ভেঙে যাবে। প্রকৃত সিজদা হলো মন এবং অন্তরের পূর্ণ সমর্পণ। আমরা যদি মাথা মাটিতে ঠেকাই কিন্তু জীবনের নীতিতে আল্লাহর আদেশ না মানি, তবে আমাদের সেই সিজদা হলো কেবল ছদ্মবুদ্ধি, খালি আঙ্গিকের খেলা।
বন্ধুগণ! ভাবুন, আমরা যখন প্রতিদিন সালাত করি, তখন কি শুধু আমাদের হাত-পা মাথার খেলা হচ্ছে? না, কুরআন আমাদের শেখাচ্ছে—প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের আল্লাহর আদেশ মেনে চলার চিহ্ন হতে হবে। যদি আমরা আমাদের কাজ, চিন্তা, সম্পর্ক, আচরণ, পরিকল্পনা—সবকিছুতে আল্লাহর নির্দেশ না মানি, তবে আমরা প্রকৃত অর্থে সিজদা করি না। আমাদের আঙ্গিক নিছক একটি খেলা, নিছক একটি রূপক।
বন্ধুগণ! প্রকৃত সিজদার পথ হলো—প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহর ইচ্ছা অনুসরণ করা। আমাদের কথা, কাজ, চিন্তা—সবকিছুতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা। সূর্য যেমন আল্লাহর আলোতে জ্বলছে, নদী যেমন স্রোতমান, পাহাড় যেমন স্থির, গাছ যেমন শিকড় বিস্তার করছে—আমাদেরও প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা উচিত।
বন্ধুগণ! এই শিক্ষা আমাদের শিখায় যে, আমরা বাহ্যিক আঙ্গিকের বন্দনায় আটকে থাকলে, আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা হারাই। আমরা যদি শুধু হাত মাটিতে ঠেকাই, কিন্তু আমাদের মন, চেতনা, হৃদয়—সবই আল্লাহর নির্দেশের বাইরে থাকে, তবে আমরা প্রকৃত সিজদা থেকে দূরে। আমরা প্রকৃত সিজদার অর্থ বুঝতে পারি না। প্রকৃত সিজদা মানে হলো অন্তরের অঙ্গীকার, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহর মান্যতা।
বন্ধুগণ! আমাদের চারপাশের সৃষ্টিকে লক্ষ্য করুন। সূর্য, চাঁদ, তারা, পাহাড়, নদী, গাছ—এরা কখনো ভুলে না, কখনো বিরক্ত হয় না। তারা সব সময় আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে। আমাদেরও অন্তরে এই শিক্ষা স্থাপন করতে হবে। আমরা যদি এই শিক্ষা মেনে চলি, তবে আমাদের সিজদা হবে পূর্ণাঙ্গ, আর আমাদের আত্মা আল্লাহর সাথে মিলিত হবে।
বন্ধুগণ! আমাদের সিজদা কেবল আঙ্গিক নয়, এটি হলো প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা, অন্তরের স্বীকারোক্তি, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। আমরা যদি এটা না বুঝি, তবে সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—এরা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। তারা আমাদের দেখাচ্ছে, প্রকৃত সিজদা মানে স্বেচ্ছায় মেনে চলা, অন্তরের অঙ্গীকার, আত্মার সম্মান।
বন্ধুগণ! তাই আজ থেকে আমাদের লক্ষ্য হবে—প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি কাজেই আল্লাহর আদেশ মেনে চলা। আমরা আমাদের চিন্তা, মন, হৃদয়, এবং আঙ্গিক—সবকিছুতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবো। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—তাদের মতো স্বেচ্ছায় অনুগত হবো। আমরা যদি এই শিক্ষা মেনে চলি, তবে আমাদের সিজদা হবে পূর্ণাঙ্গ, আমাদের আত্মা আল্লাহর কাছে পৌঁছাবে।
বন্ধুগণ! এই শিক্ষার মধ্যে নিহিত আছে আমাদের জীবনের সত্য। কেবল বাহ্যিক রীতিতে আটকে না থেকে, অন্তরের স্বীকারোক্তি, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর আদেশ মানা—এটাই হলো প্রকৃত সিজদা। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—এরা আমাদের শিক্ষক। তাদের অনুসরণ করলে, আমরা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতে পারব।
বন্ধুগণ! আজ থেকে আমাদের প্রতিদিনের সিজদা হবে কেবল আঙ্গিক নয়, বরং অন্তরের অঙ্গীকার, আত্মার পূর্ণ সমর্পণ। আমরা শিখবো প্রকৃত সিজদার অর্থ, এবং আমাদের জীবন হবে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—এরা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে, আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। আমরা যদি তাদের মতো চলি, তবে আমাদের সিজদা হবে সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ।
বন্ধুগণ!
সিজদা শুধু আঙ্গিক নয়, প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা, এবং সেই আদেশ মেনে চলার মধ্য দিয়ে আমাদের অন্তরকে পরিপূর্ণ শান্তি দেওয়া। বন্ধুগণ! আমরা জানি, মানুষ প্রায়ই বাহ্যিক রীতি, সামাজিক চাপ, বা পরিচিত রীতিনীতির আড়ালে আত্মাকে ভুল পথে নিয়ে যায়। আমরা কি সত্যিই বুঝি, আল্লাহ আমাদেরকে কি চেয়েছেন?
বন্ধুগণ! কুরআন স্পষ্টভাবে বলে:
"وَخَشَعَتِ الْأَبْصَارُ يَرْهَقُهُمُ الطّاعَةُ"
অর্থাৎ, চোখের ভ্রুক্ষয়, অন্তরের বিনম্রতা—এটাই প্রকৃত আধ্যাত্মিক সিজদা। বাহ্যিক আঙ্গিক নয়, অন্তরের অঙ্গীকার। বন্ধুগণ! আমরা যদি শুধু হাত মাটিতে ঠেকাই, কিন্তু আমাদের অন্তর অহংকার, লোভ, ঈর্ষা, নৈতিক ভুলে পূর্ণ থাকে—তাহলে আমাদের সিজদা শূন্য, খালি, বৃথা।
বন্ধুগণ! প্রতিদিন আমরা দেখি মানুষ সালাত করছে, কিন্তু পরবর্তী মুহূর্তে মিথ্যা বলছে, অন্যায় করছে, অহংকারে ভুগছে। বন্ধুগণ! এই হলো মূল সমস্যা। প্রকৃত সিজদা তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর আদেশের সম্মান থাকে। যেমন নদী বাঁক-প্রতিবন্ধকতা পার হয়, তেমনি মানুষও জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে আল্লাহর ইচ্ছার সঙ্গে মেলাতে শিখবে।
বন্ধুগণ! আমরা যদি প্রকৃত উদাহরণ দেখি, প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের শিখায়—একটি পাখি ভোরে আকাশে উড়ছে, খাবার খুঁজছে, প্রতিটি আন্দোলন আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছে। সে বোঝে না, মানুষ তাকে নির্দেশ দিয়েছে, বা তাকে কোনো মাদরাসা পাঠিয়েছে। সে কেবল আল্লাহর সৃষ্টির নিয়ম মেনে চলছে। আমাদেরও এই শিখা নিতে হবে। আমরা যদি সিজদা করতে চাই, তবে আমাদের অন্তরকে এমনভাবে শিক্ষিত করতে হবে যেন প্রতি পদক্ষেপ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী হয়।
বন্ধুগণ! এই শিক্ষা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজেই প্রযোজ্য। আপনি যখন কাজ করছেন, ব্যবসা করছেন, পরিবার নিয়ন্ত্রণ করছেন, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক করছেন—সবখানেই আল্লাহর নির্দেশ মানা হবে। আমরা যদি শুধুমাত্র সালাতে মাথা মাটিতে ঠেকাই, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে অন্যায় করি, তবে আমরা প্রকৃত সিজদার অর্থ হারাই।
বন্ধুগণ! কুরআন আমাদের আরও শক্তিশালী ভাষায় শিক্ষা দেয়:
"أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ"
বন্ধুগণ! মানুষ প্রায়ই বাহ্যিক চিহ্নে ভ্রান্ত হয়। সে মনে করে, "আমি সিজদা করেছি, আমি পূর্ণাঙ্গ মুসলিম।" বন্ধুগণ! না, এটা কেবল বাহ্যিক খেলা। প্রকৃত সিজদা তখনই, যখন আমাদের অন্তরের সমস্ত অহংকার, স্বার্থপরতা, লোভ, এবং ভয় আল্লাহর কাছে বিনম্র হয়ে যায়।
বন্ধুগণ! আমরা যদি সত্যিই আল্লাহর অনুগত হতে চাই, তবে আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে লক্ষ্য রাখতে হবে—আমরা কি সেই মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছি? আমাদের মন কি শান্ত? আমাদের কাজ কি ন্যায়সঙ্গত? আমাদের সম্পর্ক কি পূর্ণ সততার? এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে আমাদের সিজদা শূন্য।
বন্ধুগণ! এই হলো প্রকৃত বিদ্রোহী শিক্ষা—যেখানে বাহ্যিক নিয়মকানুন নয়, অন্তরের অঙ্গীকার, আত্মার সমর্পণ, এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর আদেশ মানা। প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টিই আমাদের শিক্ষক। পাহাড় যেমন স্থির, নদী যেমন প্রবাহমান, সূর্য যেমন নিয়মিত—তাদের জীবন আমাদেরকে শেখাচ্ছে, প্রকৃত সিজদা মানে সমগ্র জীবনের অন্তর্নিহিত সমর্পণ।
বন্ধুগণ! মানুষ ভুল করে, সে বাহ্যিক আঙ্গিককে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেয়। কিন্তু কুরআন বলে, প্রকৃত সিজদা মনের অঙ্গীকার। আমরা যদি প্রতিদিন দুই বা পাঁচ বার সালাত করি, কিন্তু জীবনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মানি না, তবে আমরা প্রকৃত সিজদা থেকে অনেক দূরে।
বন্ধুগণ! আমাদের শিক্ষা হবে—প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা, অন্তরের পূর্ণ স্বীকারোক্তি, জীবনের প্রতিটি কাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—এরা আমাদের শিক্ষক। আমাদেরও প্রতিটি পদক্ষেপে সেই শিক্ষার আলো অনুসরণ করতে হবে।
বন্ধুগণ! এই পর্বের মূল বার্তা হলো—সিজদা মানে শুধু আঙ্গিক নয়, অন্তরের সম্মতি, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা। আমরা যদি এটি বুঝি, তবে আমাদের জীবন হবে পূর্ণাঙ্গ, আত্মা হবে শান্ত, এবং আল্লাহর নৈকট্য আমাদের জন্য নিশ্চিত হবে।
বন্ধুগণ! প্রতিদিন আমরা যখন সালাত করি, মনে রাখি—প্রকৃত সিজদা হলো আমাদের মন, অন্তর, এবং আত্মার পূর্ণ সমর্পণ। আমরা যদি শুধুমাত্র বাহ্যিক আঙ্গিক পালন করি, তবে আমরা প্রকৃত সিজদা হারাই। আমরা যদি প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলি, তবে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে পূর্ণাঙ্গ সিজদা।
বন্ধুগণ! প্রকৃত সিজদা আমাদের শেখাচ্ছে—বাহ্যিক নিয়ম নয়, অন্তরের অঙ্গীকার, জীবনভর সমর্পণ, এবং আল্লাহর আদেশের প্রতি নিষ্ঠা। সূর্য, নদী, পাহাড়, গাছ—তাদের মতো চলতে শিখুন। আমরা যদি তাদের মতো স্বেচ্ছায় অনুগত হই, তবে আমাদের সিজদা হবে পূর্ণাঙ্গ।
0 Comments