Subscribe Us

আমরা কি আহলে কুরআন নাকি মুসলিম?

 

আমরা কি আহলে কুরআন?
লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(হে প্রভু! আমি আশ্রয় চাই শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে, আর আমি আশ্রয় চাই তারা যেন আমার কাছে না আসে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। শান্তি সেই সকলের ওপর, যারা হেদায়াতের পথ অনুসরণ করেছে, এবং শান্তি সেই মুহাম্মদের ওপর, যিনি মহিমান্বিত কুরআন নিয়ে আগমন করেছেন।

বন্ধুগণ!
আজকে আমাকে, আপনাকে, আমাদের সবাইকে একটা নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে—“আহলে কুরআন”!
কি অদ্ভুত! কি হাস্যকর!
যেন কুরআনকে আঁকড়ে ধরা মানেই আলাদা কোনো দল, কোনো সেক্ট, কোনো ব্যানার!
কিন্তু বলুন তো—কুরআন কি কোনো দলের সম্পত্তি?
কুরআন কি কোনো গোষ্ঠীর হাতে বন্দী?
কুরআন কি শুধু লাইব্রেরির তাকের ধুলো জমা বই, যেটা খুললে মানুষ আপনাকে ডাকনাম দিয়ে দেবে?

বন্ধুগণ!
আমরা কুরআন মানি—হ্যাঁ, মানি!
আমরা হাদিসও দেখি, কিন্তু কুরআনের আলোকে দেখি।
আমরা ফাজায়েলে আমাল পড়ি, কিন্তু কুরআনের সাথে মিলাই।
আমরা স্বপ্নের কিতাবও দেখি, খোয়াবনামাও উল্টাই—কিন্তু তার বিচার করি কুরআনের দাঁড়িপাল্লায়।
আমরা কোনো কিছু অন্ধভাবে গ্রাস করি না।
আমরা বলি—যা কুরআনের সাথে যায়, তা গ্রহণযোগ্য; যা কুরআনের বিপরীতে দাঁড়ায়, তা বাতিল!

বন্ধুগণ!
এটাই তো আল্লাহর শিক্ষা—
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ
“আমি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা সবকিছুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা।” (সুরা নাহল ১৬:৮৯)

তাহলে আমরা যদি কুরআনকে বিচারক বানাই, যদি আমরা কুরআনকে কেন্দ্র করে সবকিছু মাপি—তবে কেন তোমরা আমাদের নতুন নামে ডাকছো?

বন্ধুগণ!
আমাদের গালে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে—“আহলে কুরআন”!
কিন্তু আমরা তো কোনো দলের মানুষ নই!
আমরা আহলে হাদিস নই, আহলে মাযহাব নই, আহলে জামাত নই, আহলে তরিকত নই—
আমরা শুধু আহলে হক!
আমরা আহলে ইসলাম!
আমরা আহলে কিতাব, যেই কিতাবের নাম কুরআন!

তবে তোমরা কেন এতো অস্থির?
তোমাদের ভয় কোথায়?
তোমাদের বুক কাঁপছে কেন?
কারণ আমরা যখন কুরআন সামনে আনি—তখন তোমাদের বানানো দেয়ালগুলো ভেঙে পড়ে।
তখন তোমাদের মিথ্যা শেকলগুলো খুলে যায়।
তখন প্রমাণ হয়—যা তোমরা যুগ যুগ ধরে মুখে মুখে চালিয়ে গেছো, তার ভিতরে অনেক ফাঁকফোকর, অনেক অসঙ্গতি!

বন্ধুগণ!
আমরা কুরআন ছাড়া কিছু মানি না—এমন তো বলিনি!
আমরা বলেছি—কুরআনের বিপরীতে কিছু মানি না।
এটা কি অপরাধ?
এটা কি অপরাধ যে আমরা কুরআনকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছি?
এটা কি অপরাধ যে আমরা হাদিসকেও কুরআনের আলোকে যাচাই করি?
তোমাদের কি এতোটাই ভয়, যে কুরআন সামনে এলে তোমাদের বাণিজ্য ভেঙে যাবে?

বন্ধুগণ!
তোমরা আমাদের বলতে চাও—
“না, না! হাদিস আগে, কুরআন পরে।”
“না, না! মাযহাব আগে, কুরআন পরে।”
“না, না! পীর আগে, কুরআন পরে।”
কিন্তু আমরা বলি—
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ
“হুকুম দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহর।” (সুরা ইউসুফ ১২:৪০)

বন্ধুগণ!
আমরা যারা কুরআনকে সামনে আনি, তাদেরকে তোমরা উপহাস করছো!
তোমরা বলছো—“আহলে কুরআন!”
আচ্ছা বলো তো, রাসুল ﷺ কি ছিলেন আহলে হাদিস?
না কি আহলে মাযহাব?
না কি আহলে জামাত?
না কি আহলে তরিকত?
না! তিনি ছিলেন কুরআনের দাস, কুরআনের ঘোষণা বাহক!
তিনি ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক—যিনি বলতেন,
قَدْ جَاءَكُم بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ
“তোমাদের কাছে এসেছে প্রমাণ তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে। যে দেখলো, সে নিজের জন্যই দেখলো।” (সুরা আনআম ৬:১০৪)

বন্ধুগণ!
আমরা যখন বলি—“কুরআন ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণযোগ্য নয় যদি তা এর বিপরীতে যায়”—তখন তোমরা ভয় পাও।
কেন জানো?
কারণ তোমাদের ধর্ম ব্যবসা তখন ধ্বংস হয়ে যায়।
তখন তোমাদের চশমার কাঁচ ভেঙে পড়ে।
তখন তোমাদের তৈরি হুজুরতন্ত্রের সিংহাসন ভেঙে যায়।
তখন প্রমাণ হয়—মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে নত হওয়া বাধ্য নয়!

বন্ধুগণ!
আমরা কুরআন মানি।
আমরা হাদিসকেও মানি—কিন্তু কুরআনের মাপকাঠিতে।
আমরা ইতিহাসকেও মানি—কিন্তু কুরআনের আলোকে।
আমরা স্বপ্নকেও গুরুত্ব দিই—কিন্তু কুরআনের বিরুদ্ধে গেলে তা বাতিল।
আমরা যুক্তিকেও মানি—কিন্তু কুরআনের সাথে মিলিয়ে দেখি।
আমরা কখনো বলিনি—“শুধু কুরআন”।
আমরা বলেছি—“কুরআন হচ্ছে ফিল্টার, কুরআন হচ্ছে মিজান, কুরআন হচ্ছে মূল মাপকাঠি।”

বন্ধুগণ!
কুরআনের মানুষকে তোমরা ডাকনাম দিয়ে অপমান করবে—এটা নতুন কিছু নয়।
যুগে যুগে সত্যের লোকদের এমন নাম দেওয়া হয়েছে।
নূহকে বলা হয়েছিল—পাগল।
মূসাকে বলা হয়েছিল—যাদুকর।
ঈসাকে বলা হয়েছিল—জাদুকরের ছেলে।
সালামুন আলা মুহাম্মদ কে বলা হয়েছিল—“কাহিন”, “শায়ির”, “মাজনুন”।
আজ আমাদের বলা হচ্ছে—“আহলে কুরআন”!
আহ! কি তুচ্ছ নাম!
কিন্তু তাতে কি আসে যায়?
যদি আমাদের নাম কুরআনের সাথে জড়িত হয়—তাহলে আমরা লজ্জা পাই না, বরং গর্ব করি।

বন্ধুগণ!
আমাদের ধর্ম কোনো নামকরণের ওপর দাঁড়িয়ে নেই।
আমাদের ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে আল্লাহর বাণীর ওপর।
আমাদের ঈমান কোনো হুজুরের মোহরনামায় দাঁড়িয়ে নেই।
আমাদের ঈমান দাঁড়িয়ে আছে কুরআনের আয়াতে, আল্লাহর বাণীতে।
তাই আমাদের নাম দেওয়ার দরকার নেই।
আমরা শুধু বলবো—
আমরা মুসলিম!
আমরা সমর্পিত!
আমরা সেইসব মানুষের দল, যাদেরকে আল্লাহ বলেছেন—
هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ
“তিনিই তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম।” (সুরা হজ্জ ২২:৭৮)

বন্ধুগণ!
আহলে হাদিসরা দাবি করে—“আমরাই নাকি আসল কুরআন-হাদিস মানা মানুষ!”
কিন্তু বাস্তব কি তাই?
তারা কি কুরআনকে প্রথম স্থানে রেখেছে?
না!
তারা হাদিসকে কুরআনের উপরে বসিয়েছে।
যেখানে কুরআন বলে—وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ (সালাত কায়েম করো),
তারা বলে—“না! কুরআন তো কিছুই বুঝায় না। আসল নামাজ হাদিসেই আছে।”
যেখানে কুরআন বলে—إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ (হুকুম কেবল আল্লাহর),
তারা বলে—“না! আল্লাহর হুকুম বুঝতে হলে প্রথমে বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি খুঁজো।”
কেন রে আহলে হাদিস?
কেন তোমাদের বুক কাঁপে কুরআনের সামনে দাঁড়াতে?
কেন তোমাদের জিহ্বা শুকিয়ে যায়, যখন বলা হয়—“কুরআনই চূড়ান্ত মাপকাঠি”?

বন্ধুগণ!
আহলে মাযহাবদের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ!
তারা তো সরাসরি বলে—“আমরা ইমামের কথা মানবো, কুরআন যদি বিপরীতে থাকে তাহলেও।”
হায়রে!
ইমামের নাম কুরআনের উপরে!
মানুষের ব্যাখ্যা আল্লাহর আয়াতের উপরে!
কোথায় সেই আয়াত—
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مُبَيِّنَاتٍ
“তিনিই নাযিল করেছেন কিতাব, যাতে সবকিছু স্পষ্ট।” (আল ইমরান ৩:৭)
তুমি বলো—“না, স্পষ্ট নয়। বুঝতে হলে ইমামের দরকার।”
তুমি বলো—“না, আয়াত বুঝা যাবে না, ফতোয়া আগে।”
কেন রে আহলে মাযহাব?
তুমি কি আল্লাহকে অক্ষম বানাতে চাইছো?
তুমি কি বলতে চাইছো—আল্লাহ তাঁর বানী অস্পষ্ট করে পাঠিয়েছেন, তাই তোমার ইমামের দরকার?

বন্ধুগণ!
আহলে হাদিসরা আবার আমাদের দিকে আঙুল তোলে—
“তুমি নাকি কেবল কুরআন মানো!”
কিন্তু আমরা বলি—তুমি মিথ্যা বলছো!
আমরা কুরআন মানি, হাদিসও দেখি, ইতিহাসও দেখি—কিন্তু সবকিছু কুরআনের দাঁড়িপাল্লায়।
তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
ভয় পাচ্ছো যে, কুরআনের দাঁড়িপাল্লায় রাখলে তোমার হাদিসের অনেক কিছু পড়ে যাবে?
ভয় পাচ্ছো যে, কুরআনের আলোয় দেখলে তোমার প্রিয় মাযহাব অন্ধকার হয়ে যাবে?

বন্ধুগণ!
আহলে হাদিস আর আহলে মাযহাব—দুটোই এক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
একজন হাদিসকে কুরআনের উপরে রাখে।
অন্যজন ইমামের কথা কুরআনের উপরে রাখে।
কিন্তু দুজনের মিল আছে এক জায়গায়—কুরআনকে তারা গৌণ করে রেখেছে।
তারা সবাই বলে—“কুরআন যথেষ্ট নয়।”
হায়রে!
আল্লাহ যখন বলেন—
أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ
“এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে তিলাওয়াত করা হয়?” (সুরা আনকাবুত ২৯:৫১)
তখন আহলে হাদিস আর আহলে মাযহাব দাঁড়িয়ে বলে—“না, যথেষ্ট নয়! আরো লাগবে।”

বন্ধুগণ!
তাদের আসল খেলা হলো—মানুষকে কুরআন থেকে সরিয়ে রাখা।
কারণ কুরআন খুললে মানুষ বুঝে যাবে—
হুজুররা এতদিন মিথ্যা বলেছে।
ইমামের ফতোয়া কুরআনের সাথে মেলেনি।
হাদিসের নামে অনেক বানানো কথা চালু করা হয়েছে।
মানুষ যদি কুরআনের কাছে ফিরে আসে—তাহলে তাদের ব্যবসা শেষ!
তাদের বেতন শেষ!
তাদের আসন ভেঙে পড়বে!

বন্ধুগণ!
আমরা বলি—
আমরা মুসলিম!
আমরা কারো নামের দাস নই, কোনো দলের দাস নই।
আমরা শুধু আল্লাহর দাস।
আমরা শুধু সেই দলের মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ বলেছেন—
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
“তোমরা সেই উত্তম উম্মত, যাদের মানুষদের জন্য বের করা হয়েছে।” (আল ইমরান ৩:১১০)

তাহলে বলো—আমরা কি আহলে কুরআন?
না!
আমরা তো মুসলিম!
কুরআন আমাদের মিজান, আমাদের আলো, আমাদের ফিল্টার।
কিন্তু কুরআন মানা মানেই কোনো দলের নাম নয়।

বন্ধুগণ!
আহলে হাদিসদের বলি—
যদি সত্যি কুরআন-হাদিস মানতে চাও, তবে কুরআনকে প্রথমে রাখো।
আহলে মাযহাবদের বলি—
যদি সত্যি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে কুরআনকে ইমামের উপরে রাখো।
না হলে তোমরা শুধু নামের মুসলিম, কাজে নয়।

বন্ধুগণ!
আমাদের লড়াই কারো নামে নয়, কারো মাযহাবে নয়।
আমাদের লড়াই শুধু সত্যের জন্য, কুরআনের জন্য।
তুমি আমাদের ডাকো “আহলে কুরআন” নামে, তাতে কিছু যায় আসে না।
কারণ নাম দিয়ে সত্য বন্ধ হয় না।
সত্যের নাম একটাই—আল-হক
আমরা সেই হকের সৈনিক।

বন্ধুগণ!
আজকের আলোচনায় পরিষ্কার হলো—
আহলে হাদিস হোক, আহলে মাযহাব হোক—
তারা আসলে এক সূত্রে গাঁথা, তারা কুরআনকে গৌণ করেছে।
কিন্তু আমরা কুরআনকে সিংহাসনে বসাই, বাকি সব তার সামনে পরীক্ষা দিই।
এটাই আমাদের অবস্থান।
এটাই আমাদের পরিচয়।

আমরা মুসলিম। আমরা কুরআনের সঙ্গী। আমরা আল্লাহর বাণীর বাহক। উই আর ফ্রেন্ডস অফ কুরআন। আই এম ফ্রেন্ডস অফ কুরআন।।

Post a Comment

0 Comments