তিন ওয়াক্তের সালাত,
সূরা ইসরা ১৭:৭৮ এর ব্যাখ্যা
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, হে আমার প্রতিপালক! যাতে তারা আমার কাছে না আসে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হেদায়াত গ্রহণকারীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদের উপর, যিনি কোরআন নিয়ে এসেছেন সর্বশক্তিমান সত্য হিসেবে।)
বন্ধুগণ!
আজ আমি যে আয়াত নিয়ে কথা বলবো, তা হলো সূরা ইসরা ১৭:৭৮।
বন্ধুগণ! আমি কুরআন নই, আমি কুরআনের সঙ্গী, কুরআনের বন্ধু। আমি ডিকশনারি ও আয়াতের ভাব থেকে এর মর্মার্থ নিয়েছি। আপনারা বিবেকবোধকে কাজে লাগিয়ে দেখুন সঠিক হলে কমেন্টে ধন্যবাদ দিয়ে উতসাহিত করুন। আর ত্রুটিপূর্ণ মনে হলে সঠিকটাসহ কমেন্ট করুন।
সুরা ইসরার এই ৭৮ নং আয়াতটি যুগ যুগ ধরে মানুষের সামনে বাঁকা করে তুলে ধরা হয়েছে। রিচুয়াল নামাজের রাকাত সংখ্যা, ওয়াক্ত নির্ধারণ—এসবের প্রমাণ বানাতে এর ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আয়াতের ভাষা, প্রেক্ষাপট আর আল্লাহর পুরো কিতাবের সাথে এর সামঞ্জস্য পরীক্ষা করলে দেখা যায়—এখানে কোনো নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ নেই, বরং এখানে জীবনের সর্বোচ্চ এক চুক্তির ঘোষণা রয়েছে।
আয়াতের পাঠ:
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
(সূরা ইসরা ১৭:৭৮)
অর্থ:
"সূর্যের ঢলে পড়া থেকে রাতের গভীর অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো, আর ভোরের কোরআনও। নিশ্চয়ই ভোরের কোরআন প্রত্যক্ষযোগ্য।"
বন্ধুগণ!
যুগে যুগে এই আয়াতের অর্থ মানুষকে ভুলভাবে শেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে:
• সূর্যের ঢল = যোহরের নামাজ,
• রাতের গভীরতা = মাগরিব ও এশা,
• ভোরের কোরআন = ফজরের নামাজ।
এভাবে তিন-চার- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রমাণ সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। অথচ প্রশ্ন হচ্ছে—
কোথায় এখানে "রাকাত" কথাটি আছে?
কোথায় এখানে "ওয়াক্তে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধা, সিজদা করা" কথাটি আছে?
কোথাও নেই!
আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন "সালাত কায়েম করো"। আর আমরা জানি—কোরআনের ভাষায় সালাত মানে হলো আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি, দায়বদ্ধতা, চুক্তি ও স্মরণকে জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। আর সিজদা মানে হলো মাথা ঠুকে যাওয়া নয়—বরং মেনে নেয়া, আত্মসমর্পণ করা।
কেন এখানে সময় উল্লেখ করা হয়েছে?
বন্ধুগণ, আমরা জানি সালাত ২৪ ঘন্টাই জীবনের অঙ্গ। "أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي" (২০:১৪)
আল্লাহ বলেছেন: "আমার স্মরণের জন্য সালাত কায়েম করো।"
অর্থাৎ সকাল-দুপুর-রাত, সবসময় মানুষের জীবন আল্লাহর সাথে যুক্ত থাকবে।
তাহলে প্রশ্ন:
কেন আল্লাহ বিশেষ কিছু সময়ের কথা এখানে তুলে ধরলেন?
এর উত্তর হলো—
• মানব জীবনের কিছু বিশেষ সময় থাকে, যা রূপান্তরের মুহূর্ত।
• সেই সময়গুলোতে আল্লাহর সাথে যোগাযোগকে পুনর্নবায়ন করা জরুরি।
• মানুষ যেন ভুলে না যায়, যে প্রতিটি সময় আল্লাহর হাতে।
তিনটি সময় এখানে বর্ণিত হয়েছে:
১. সূর্যের ঢলে পড়া (দুলুকিশ-শামস)
২. রাতের গভীর অন্ধকার (গাসাকিল লাইল)
৩. ভোরের কোরআন (কুরআনাল ফাজর)
সূর্যের ঢলে পড়া – দুলুকিশ-শামস
বন্ধুগণ!
সূর্য যখন ঢলে পড়ে, তখন মানুষের কর্মব্যস্ত দিনের মধ্যভাগ চলে আসে। বাজারে লেনদেন হয়, অফিসে কাজ হয়, কৃষক মাঠে থাকে, শ্রমিক ঘামে ভিজে যায়। এই সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি নিজের কাজে মগ্ন।
এমন সময়ে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিলেন:
"সালাত কায়েম করো।"
অর্থাৎ—
• কাজের মাঝে সত্যকে আঁকড়ে ধরো।
• মিথ্যা বেচে দিও না।
• ঘুষ খেও না।
• কারো হক মেরে দিও না।
• কর্মক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো।
বন্ধুগণ!
এটাই হলো সেই মুহূর্ত, যেখানে সালাত মানে দাঁড়ায়—কাজের মাঠে আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।
রাতের গভীর অন্ধকার – গাসাকিল লাইল
বন্ধুগণ!
যখন রাত নামে, চারদিক অন্ধকারে ঢেকে যায়, মানুষ ঘুমায়। কিন্তু এই অন্ধকার শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষের ভেতরেও অন্ধকার নেমে আসে। লোভ, হিংসা, ভীতি, অবসাদ—এসব ঘন কালো অন্ধকারে মানুষকে গ্রাস করে।
এই সময়ে আল্লাহ বলেন—
"সালাত কায়েম করো।"
অর্থাৎ—
• আত্মসমালোচনা করো।
• কোরআনের আলোতে নিজের ভুল চিনতে শেখো।
• গোপনে গুনাহের পথে যেও না।
• রাতের নিস্তব্ধতায় কোরআন নিয়ে ভাবো, নতুন আলো খুঁজে নাও।
এটাই হলো "সালাত"—নিজেকে সংশোধন করার সময়, ভেতরের অন্ধকার দূর করার লড়াই।
ভোরের কোরআন – কুরআনাল ফাজর
বন্ধুগণ!
ভোর হলো নতুন সূচনা। রাতের আঁধার কাটিয়ে যখন আলোর আভা ফোটে, তখন মনে হয়—আবার নতুন করে শুরু করা যায়। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন—
"কুরআনাল ফাজর"।
অর্থাৎ—
• দিনের শুরু হোক কোরআনের আলো দিয়ে।
• নতুন দিন মানেই নতুন প্রতিশ্রুতি, নতুন দায়িত্ব।
• ভোরের আলোয় কোরআন পাঠ করো, তা নিয়ে ভাবো, যেন সারা দিন সেই আলোতে চলতে পারো।
এটাই হলো "সালাত কায়েম করা"—প্রতিদিনের সূচনা আল্লাহর কিতাবকে সামনে রেখে করা।
তাহলে, নামাজের ওয়াক্ত নাকি জীবনের মুহূর্ত?
বন্ধুগণ!
প্রশ্ন উঠবে—
এই আয়াত কি নামাজের ওয়াক্ত প্রমাণ করে, নাকি জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের শিক্ষা দেয়?
উত্তর একটাই—
এখানে কোনো রিচুয়াল নামাজের ওয়াক্ত নেই।
বরং বলা হচ্ছে—
• কর্মব্যস্ত দিনের মাঝে সত্য আঁকড়ে ধরো,
• রাতের নিস্তব্ধতায় আত্মসমালোচনা করো,
• ভোরে নতুন দিন শুরু করো কোরআনের আলো দিয়ে।
এই তিন সময় আসলে মানব জীবনের তিন রূপান্তর:
১. কাজের ব্যস্ততা,
২. অন্তরের অন্ধকার,
৩. নতুন আলোর সূচনা।
আল্লাহ চান—প্রতিটি রূপান্তরে মানুষ সালাত কায়েম করুক, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি নবায়ন করুক।
ভুল ব্যাখ্যার ভয়াবহতা
বন্ধুগণ!
কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই আয়াত দিয়ে মানুষকে শেখানো হলো—
• ফজরে এত রাকাত,
• যোহরে এত রাকাত,
• আসরে এত রাকাত,
• মাগরিবে এত রাকাত,
• এশায় এত রাকাত।
এভাবে নামাজকে একটা আচার বানিয়ে ফেলা হলো। অথচ এর ভেতরের শক্তি, দায়বদ্ধতা, কোরআনিক চেতনা সব হারিয়ে গেলো।
আজ মানুষ সালাত পড়ে, কিন্তু ঘুষ খায়।
মানুষ নামাজ পড়ে, কিন্তু দুর্নীতি করে।
মানুষ নামাজ পড়ে, কিন্তু গরীবের হক মারে।
প্রশ্ন হচ্ছে—
এ কেমন সালাত?
এ কেমন স্মরণ?
আল্লাহর কিতাবের মূল উদ্দেশ্য তো একটাই—ন্যায় প্রতিষ্ঠা। আর সেই ন্যায় যদি না আসে, তবে সেই আচার কীভাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে?
বন্ধুগণ!
আজ আমরা দেখলাম, সূরা ইসরা ১৭:৭৮ আয়াতে কোনো নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ নেই। বরং এখানে জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সালাত কায়েম করার নির্দেশ আছে।
• সূর্যের ঢলে পড়া মানে: কর্মক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
• রাতের অন্ধকার মানে: আত্মসমালোচনা ও অন্তরের সংশোধন।
• ভোরের আলো মানে: নতুন দিনের সূচনা কোরআনের সাথে।
এটাই হলো সালাত—আল্লাহর সাথে চিরস্থায়ী সম্পর্কের চুক্তি।
কেন ভোরের কুরআন সাক্ষ্যযুক্ত?
বন্ধুগণ!
আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
"إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا"
অর্থ: "নিশ্চয়ই ভোরের কুরআন সাক্ষ্যযুক্ত।"
প্রশ্ন হলো—ভোরের কুরআন কেন আলাদা করে উল্লেখ হলো?
👉 কারণ ভোর হলো—
• নতুন জীবনের সূচনা।
• ঘুম থেকে ওঠার পর মানুষের মন হয় সবচেয়ে সতেজ।
• এ সময় মানুষ কোরআনের দিকে মনোযোগ দিলে তা হৃদয়ে গভীরভাবে ছাপ ফেলে।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
ভোরের কুরআন সাক্ষী বহন করে।
• সাক্ষী মানে—মানুষের নিজের আত্মা সাক্ষী দেয়, "হ্যাঁ, আজকের দিনটা আমি কোরআনের আলো দিয়ে শুরু করেছি।"
• ফেরেশতারা সাক্ষী হয়—যে বান্দা আজ নতুন দিনের প্রথম দায়িত্ব আল্লাহর কিতাব দিয়ে শুরু করেছে।
• এমনকি প্রকৃতিও সাক্ষী হয়—আলোর প্রথম রশ্মি মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, সত্যের আলো আসলেই অন্ধকার ভেদ করে যায়।
বন্ধুগণ!
এই ভোরের কুরআন মানে দাঁড়ায়—প্রতিদিন সকালের সূচনা কোরআনের বার্তায়, আল্লাহর চুক্তিতে, সত্যের ঘোষণা দিয়ে।
এটাই হলো সালাত!
দিনের ঢল – বাস্তব জীবনে
বন্ধুগণ!
আয়াতে প্রথম বলা হলো সূর্যের ঢল।
এটা কেবল যোহরের সময় নয়।
বরং এর মানে—যখন মানুষ ব্যস্ত থাকে, জীবনের ভারে নুয়ে যায়।
সেই সময়ে সালাত মানে—
• অফিসে বসকে খুশি করতে মিথ্যা রিপোর্ট না দেয়া।
• ব্যবসায় গ্রাহকের সাথে ধোঁকাবাজি না করা।
• আদালতে সাক্ষ্য বিক্রি না করা।
• কৃষকের জমি দখল না করা।
• ঘুষ না খাওয়া।
বন্ধুগণ!
এটাই সালাত—কাজের মাঝে আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি কায়েম রাখা।
যদি নামাজ পড়ে এসে অফিসে বসে ঘুষ খাও, তবে সেটা সালাত নয়—বরং আল্লাহকে নিয়ে ঠাট্টা।
রাতের অন্ধকার – বাস্তব জীবনে
বন্ধুগণ!
দ্বিতীয় সময়—রাতের অন্ধকার।
এটা কেবল এশার নামাজের ওয়াক্ত নয়।
বরং এর মানে—মানুষ যখন একা হয়, সমাজের চোখের আড়ালে যায়, তখন আল্লাহর স্মরণ হারিয়ে না ফেলা।
রাতে মানুষ গোপনে যা করে—
• কেউ দেখে না বলে হারাম কাজ করা,
• অন্ধকারে অন্যের সম্পদ দখল করা,
• অন্তরের ভেতরে হিংসা, লোভ লালন করা—
এসব থেকে বিরত থাকা মানেই হলো সালাত কায়েম করা।
বন্ধুগণ!
রাতের অন্ধকারে সালাত মানে—
নিজেকে প্রশ্ন করা:
• আজ সারাদিন আমি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছি তো?
• কারো হক নষ্ট করেছি কি না?
• আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভেঙেছি কি না?
এই আত্মসমালোচনা ছাড়া সালাত পূর্ণ হয় না।
ভোরের আলো – বাস্তব জীবনে
বন্ধুগণ!
তৃতীয় সময়—ভোরের কুরআন।
এর মানে দাঁড়ায়—
• নতুন দিনের শুরুতে আল্লাহর কিতাবের সাথে সম্পর্ক পুনর্নবায়ন করা।
• কোরআন পাঠ করা, চিন্তা করা, দিনের পরিকল্পনা করা কোরআনের আলো দিয়ে।
• যেন সারা দিনের কাজ শুরু হয় সত্য, ন্যায়, আর মানবতার বার্তা নিয়ে।
ভোরে যে কোরআন হৃদয়ে নেয়া হয়, সেটা সারা দিনের কাজকে রঙিন করে ফেলে।
যে সকালে মিথ্যার পরিকল্পনা করে, সে সারা দিন ধোঁকা দেবে।
যে সকালে সত্যের আলো নেয়, সে সারা দিন অন্যায় প্রতিরোধ করবে।
তাহলে সালাতের কাজ কী দাঁড়ায়?
বন্ধুগণ!
এই আয়াত আমাদের বুঝিয়ে দিলো—
সালাত মানে হলো জীবনের প্রতিটি মোড়ে আল্লাহর সাথে চুক্তি কায়েম রাখা।
• দিনের ঢলে: কাজের মাঝে সত্য আঁকড়ে ধরা।
• রাতের অন্ধকারে: আত্মসমালোচনা আর গুনাহ থেকে দূরে থাকা।
• ভোরে: নতুন দিনের সূচনা কোরআনের আলো দিয়ে।
এটাই হলো ২৪ ঘন্টার সালাতের বাস্তব রূপ।
এটা কোনো রাকাত-গণনার খেলা নয়।
সালাত সমাজকে কীভাবে বদলায়?
বন্ধুগণ!
ধরা যাক, একটা সমাজে সবাই এভাবে সালাত কায়েম করলো।
তাহলে কী হবে?
• বাজারে আর ভেজাল থাকবে না।
• আদালতে আর মিথ্যা সাক্ষ্য থাকবে না।
• অফিসে আর ঘুষ চলবে না।
• রাতে কেউ কারো বাড়ি লুট করবে না।
• প্রতিদিন সকালের শুরু হবে আল্লাহর কিতাব দিয়ে।
তাহলে সেই সমাজ কেমন হবে?
সেটা হবে ন্যায়, শান্তি, সততা আর সত্যের রাজ্য।
এটাই ছিলো কোরআনের উদ্দেশ্য।
আজকের মুসলিম সমাজের করুণ বাস্তবতা
বন্ধুগণ!
কিন্তু বাস্তবে কী হলো?
আজকের মুসলিম সমাজ সালাতকে বানালো রিচুয়াল।
• ফজরে ঘুম ভেঙে কয়েক রাকাত, তারপর ব্যবসায় মিথ্যা।
• যোহরে কয়েক রাকাত, তারপর অফিসে ঘুষ।
• আসরে কয়েক রাকাত, তারপর রাজনীতিতে প্রতারণা।
• মাগরিবে কয়েক রাকাত, তারপর মানুষকে ঠকানো।
• এশায় কয়েক রাকাত, তারপর রাতে অন্যের হক দখল।
এই হলো আমাদের সালাতের চেহারা!
প্রশ্ন করি—
এটা কি কোরআনের সালাত?
না! এটা হলো আল্লাহর আয়াতকে বিকৃত করে বানানো নতুন ধর্মীয় আচার।
বিদ্রোহী আহ্বান
বন্ধুগণ!
আজ আমাদের উঠতে হবে।
আজ আমাদের বলতে হবে—
সালাত মানে আল্লাহর সাথে আজীবন প্রতিশ্রুতি।
এটা নামাজের ওয়াক্তে দাঁড়িয়ে কিছু মুভমেন্ট নয়।
আমরা যদি সত্যিকার অর্থে সালাত কায়েম করি, তবে সমাজ বদলাবে।
• ব্যবসায় সততা আসবে।
• রাজনীতিতে ন্যায় আসবে।
• পরিবারে শান্তি আসবে।
• রাষ্ট্রে সত্য আসবে।
আর আমরা যদি সালাতকে রিচুয়াল বানিয়ে রাখি, তবে অন্ধকার থেকে অন্ধকারই জন্ম নেবে।
বন্ধুগণ!
আজ আমরা শিখলাম—
• ভোরের কোরআন সাক্ষ্য বহন করে,
• দিনের ঢলে সালাত মানে ন্যায় কায়েম করা,
• রাতের অন্ধকারে সালাত মানে আত্মসমালোচনা,
• আর পুরো জীবন জুড়েই সালাত মানে আল্লাহর সাথে চুক্তি রক্ষা করা।
এটাই হলো সূরা ইসরা ১৭:৭৮ এর আসল শিক্ষা।
এখানে নামাজের ওয়াক্ত বা রাকাতের কথা নেই।
এখানে আছে জীবনের প্রতিটি সময়ে সত্যের আলোয় দাঁড়ানো।
বন্ধুগণ!
তাহলে আসুন, আমরা ঘোষণা দেই—
আজ থেকে সালাত মানে হবে সত্য, ন্যায় আর কোরআনের আলো।
আজ থেকে আমরা নামাজের রাকাত নয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতি কায়েম রাখবো।
এটাই আমাদের বিদ্রোহ। এটাই আমাদের মুক্তি।
0 Comments