✒️ কবিতা: “নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?”
🏵️লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ 🏵️
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছো,
যার হাতে প্রথম নেমেছিল "ইকরা",
যার বুকে গেঁথে গিয়েছিল আসমানের কালাম,
তিনি কাকে মানতেন?
তিনি কোন গ্রন্থে জীবন কাটালেন?
তিনি কোন আলোর পানে ছুটলেন?
তিনি ছিলেন কুরআনের মানুষ,
কুরআনের সৈনিক, কুরআনের দাস—
কিন্তু তুমি?
তুমি কুরআনের পরিবর্তে খুঁজে বেড়াও
ফেকাহর মোটা মোটা গ্রন্থে,
মাযহাবের অন্ধকার সুড়ঙ্গে,
মানব রচিত ফতোয়ার জালে।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি এক মুহূর্তও ছাড়েননি কুরআনের দড়ি,
আল্লাহর কিতাবই ছিল তাঁর মিশনের কেন্দ্র,
তাঁর আন্দোলনের অস্ত্র,
তাঁর বিপ্লবের পতাকা।
কিন্তু আজ তুমি কিসের পতাকা তোলে হাঁটো?
কুরআন কি তোমার হাতে?
না ইমামের বই, মাওলানার ভাষ্য,
ফতোয়ার কাগজে ঠাসা তাক—
তোমার ঈমান কি কাগজে বন্দি,
না আল্লাহর কালামে জীবন্ত?
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তুমি নামাজ পড়ো, রোজা রাখো, হজ করো,
কিন্তু প্রশ্ন করি—কিসের ভিত্তিতে?
কুরআনের? নাকি ইমামের কিতাবের?
তুমি যে ফিকহ মানছো,
সেটা কি আল্লাহর কালাম,
না মানুষের রচিত ব্যাখ্যা?
নবী কি কখনো কোনো মাযহাব বানিয়েছিলেন?
না, তিনি বলেছিলেন—
"এই কিতাব আমার কাছে এসেছে,
তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি,
এটাই তোমাদের হিদায়াত।"
তুমি কি তা শুনেছো?
নাকি দাওয়াতকারীর কণ্ঠ ডুবিয়ে রেখেছো
মানুষের বইয়ের পৃষ্ঠায়?
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি আরবের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে
অন্ধকার সমাজ ভেঙেছেন কুরআনের আয়াতে।
তিনি দাসকে করেছেন স্বাধীন,
নারীকে দিয়েছেন মর্যাদা,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে তুলেছেন আল্লাহর বাণী।
কিন্তু তুমি?
তুমি মসজিদের ভেতর কুরআন তিলাওয়াত করো,
কিন্তু বাইরে গিয়ে মিথ্যা, সুদ, ঘুষে ডুবে যাও।
তুমি দোয়া করো আয়াত পড়ে,
কিন্তু আইন মানো সংসদে তৈরি করা,
তুমি কুরআন রাখো তাকের ওপরে,
কিন্তু জীবন সাজাও মানুষের হাদিসের নামে।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি শিখিয়েছেন—
"আল্লাহ ছাড়া কারো কথা মানো না,
কিতাব ছাড়া পথ খুঁজো না।"
কিন্তু আজ তুমি দাঁড়িয়ে আছো
শত শত ইমামের দেয়াল ঘিরে।
কেউ বলে এভাবে সালাত,
কেউ বলে ওভাবে সালাত,
কেউ বলে এ মাযহাব, কেউ বলে ও মাযহাব।
তুমি কি কখনো ভেবেছো—
নবী কি চার মাযহাব বানিয়েছিলেন?
না, তিনি কেবল বলেছিলেন—
“আল্লাহর কিতাব তোমাদের জন্য যথেষ্ট।”
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তুমি কুরআনকে বানিয়েছো শুধু তাবিজের লেখা,
দোয়ার ঝাঁপি, মৃত্যু খতমের কিতাব।
তুমি আয়াত পড়ো অজুহাতের জন্য,
কিন্তু আইন মানো মানুষের বানানো।
তুমি দরবারে গিয়ে নত হও পীরের কাছে,
কবরের ধুলায় ফেলো মাথা,
তুমি যাত্রায় পড়ো কুরআন,
কিন্তু ব্যবসায় করো প্রতারণা।
তুমি সন্তানকে শেখাও "ক্বাফ-রা",
কিন্তু জীবনে চালাও গ্রীক দর্শন।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তুমি হাদিস নিয়ে যুদ্ধ করো,
ফেকাহ নিয়ে গালাগালি দাও,
মানুষের কিতাব নিয়ে বিভক্ত হও,
কিন্তু কুরআনের এক আয়াত বোঝার চেষ্টা করোনি।
তুমি ফতোয়ার জঙ্গলে হারিয়ে গেছো,
মোল্লার কণ্ঠে দৌড়াও,
কিন্তু আল্লাহর কণ্ঠে থেমে যাও না।
কুরআন তোমাকে এক জাতি বানাতে চেয়েছিল,
কিন্তু তুমি বানালে হাজার দল, হাজার উপদল।
তুমি কুরআনের ঐক্য হারালে,
হাদিসের নাম ধরে মারামারি করলে।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি উম্মতকে বলেছিলেন—
“এই কিতাব কিয়ামত পর্যন্ত যথেষ্ট।”
কিন্তু তুমি শুনোনি।
তুমি বললে—“না, আমাদের দরকার
ফেকাহ, শরাহ, হাদিস, ব্যাখ্যা, তর্জমা।”
তুমি বললে—“কুরআন বুঝবো কিভাবে?
আমরা তো অজ্ঞ!”
তুমি কি ভেবেছো নবী কি অজ্ঞদের জন্য
কিতাব নামিয়ে দিয়েছিলেন?
না কি আল্লাহ বলেছিলেন—
“আমি তো কুরআনকে সহজ করেছি বোঝার জন্য”?
তাহলে কেন বলো কঠিন?
কেন আল্লাহকে মিথ্যা প্রমাণ করো?
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি ছিলেন কুরআনের জীবন্ত উদাহরণ,
চলন্ত কুরআন।
তিনি কুরআনের বাইরে কিছু বলেননি,
কুরআনের বাইরে কিছু মানেননি।
আজ তুমি বলো—“কুরআন যথেষ্ট নয়,
আমাদের দরকার হাদিস।”
তুমি কি নবীকে অপমান করছো না?
তুমি কি বলছো—
“হে নবী, তুমি কুরআন মানলে ভুল করলে”?
তুমি কি বুঝছো না, এটাই প্রকৃত বিদ্রোহ?
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি জিবরাইলের কাছ থেকে আয়াত নিতেন,
কান্নাভেজা চোখে পড়তেন তা,
সাহাবাদের শেখাতেন কেবল কুরআন।
সাহাবারা যুদ্ধ করতেন কুরআনের পতাকা হাতে,
শাসন করতেন কুরআনের আইন মেনে।
তারা বানাননি কোনো মাযহাব,
তারা লেখেননি কোনো ফেকাহ।
তারা শুধু বলতেন—“আল্লাহর কিতাবে ফিরে আসো।”
কিন্তু তুমি?
তুমি সাহাবার পথে নও,
তুমি ইমামের নামে বিভক্ত,
তুমি মওলানার নামে লড়াই করো,
তুমি কুরআন ফেলে মানুষকে মানো।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
আজ মুসলমান দুর্বল কেন?
কারণ তারা কুরআন ফেলে দিয়েছে।
আজ মুসলমান পরাধীন কেন?
কারণ তারা আইন নেয় অন্যের কাছ থেকে।
আজ মুসলমান বিভক্ত কেন?
কারণ তারা হাদিস-ফেকাহর বনে হারিয়েছে ঐক্য।
আজ মুসলমান অপমানিত কেন?
কারণ তারা নিজেদের মূলকে ভুলে গেছে।
তুমি কুরআনকে বুকে তুলো,
কিন্তু মগজে তোলো না।
তুমি তাকের ওপরে রাখো,
কিন্তু জীবনের পথে নামাও না।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তুমি কুরআনের নামে সভা করো,
মঞ্চ বানাও, স্লোগান দাও,
কিন্তু মিছিলে কুরআনের আইন চাও না।
তুমি মসজিদে খুতবা দাও আয়াত পড়ে,
কিন্তু রাষ্ট্রে কুরআনের শাসন চাও না।
তুমি মৃত্যুতে কুরআন পড়াও,
কিন্তু জীবনে কুরআন চালাও না।
তুমি সেজদায় কুরআন পড়ো,
কিন্তু ব্যবসায় শয়তানের নিয়ম মানো।
তুমি বলো, “কুরআন আমাদের সাথী,”
কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে গেছে
অলংকার, গহনা, সংস্কৃতির প্রতীক।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
তিনি দাঁড়িয়েছিলেন মিথ্যার পাহাড়ের সামনে
শুধু কুরআনের আয়াত নিয়ে।
তিনি ভেঙেছিলেন জাহিলিয়াতের শিকল
শুধু কুরআনের আলোয়।
তিনি উল্টে দিয়েছিলেন দুনিয়ার মানচিত্র
শুধু কুরআনের শক্তিতে।
কিন্তু তুমি?
তুমি জাহিলিয়াতের সাথে মিশে গেছো,
তুমি শিরকের সাথে জড়িয়েছো,
তুমি তাওহীদ ছেড়ে মানুষের কথা মানছো।
তুমি আল্লাহর বাণী ছাড়ছো,
মানুষের বুলি ধরছো।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
আজ যদি সত্যিই কুরআন মানতে,
তাহলে সমাজে অন্যায় টিকতো না,
রাজনীতিতে লুটেরা বাঁচতো না,
অর্থনীতিতে সুদ চলতো না,
নারীর অধিকার পিষ্ট হতো না।
আজ যদি কুরআন মানতে,
তাহলে মুসলমান হতো এক দেহ,
এক পতাকা, এক জাতি।
কিন্তু তুমি কুরআনকে ছাড়লে,
তুমি মানলে বিভক্তির পথ।
তুমি মানলে মানুষের তৈরি আইন।
তুমি মানলে অন্ধ অনুকরণ।
নবী মানতেন কুরআন, তুমি মান কি?
এখনো সময় আছে,
ফিরে এসো কুরআনের কাছে।
তাকের ওপরে নয়,
বুকে, মগজে, জীবনে নিয়ে আসো।
মানুষের বই নয়,
স্রষ্টার কিতাব ধরো।
মাযহাবের বেড়া নয়,
আল্লাহর পথ ধরো।
মোল্লার বুলি নয়,
আল্লাহর কালাম শোনো।
কুরআন ছাড়া কিছুই যথেষ্ট নয়।
তোমার নবী মানতেন কুরআন,
তুমি মান কি?
---
কিছু মানুষ ভিডিও দেখে করতালি দেয়,
কেউ লাইক দিয়ে ভুলে যায়,
কেউ কমেন্টে ফতোয়ার বৃষ্টি ঝরায়।
কিন্তু তুমি?
তুমি কুরআনের পথে আছো,
তাহলে নীরব থেকো না,
জানিয়ে দাও কণ্ঠে, কলমে, কমেন্টে—
তুমি কুরআনের সাথে আছো,
মানুষের বানানো বইয়ের সাথে নও।
চুপ থেকে সমর্থন দিয়ো না ভ্রান্তির,
ভুলের বাজারে নীরবতা মানে অপরাধ।
আল্লাহর কালামের সৈনিক হলে,
ঝড় তুলতে হবে সত্যের ভাষায়,
কলমকে বানাতে হবে তলোয়ার,
কমেন্টকে বানাতে হবে কুরআনের সাক্ষ্য।
0 Comments