লিখকঃ মুহাম্মাদ মাহাতাব আকন্দ
“আল্লাহর নির্দেশিত সালাম”
সালামুন আলাইকুম।।
রব্বি আ‘ঊযু বিকা মিন হামাযাতিশ্ শায়াতীন, ওয়া আ‘ঊযু বিকা রব্বি আন্ন ইয়াহদুরূন।
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আালামীন।
সালামুন ‘আলা মুহাম্মাদিন আল্লাযী জা’আ বিল কুরআনি মুহাইমিনা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
রব্বিশ্ রহলি সাদরী, ওয়া ইয়াস্সিরলি আমরী, ওয়া আহলুল ‘উকদাতাম মিন লিসানী, ইয়াফ্ কাহূ কাওলী।
বন্ধুগন-
বন্ধুগণ!
সালাম শব্দটি শুধু মুখের উচ্চারণ নয়, এটি হৃদয়ের প্রশান্তি ও সম্পর্কের বন্ধন। মানুষের ভেতরে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা এবং নিরাপত্তার অনুভূতি জাগ্রত করার এক অনন্য উপহার। সালাম একে অপরকে মনে করিয়ে দেয়— আমরা শত্রু নই, আমরা শান্তির বাহক। এটি সমাজে ভ্রাতৃত্ব, আস্থা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে সহজ কিন্তু শক্তিশালী মাধ্যম।
বন্ধুগণ! মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে শিখিয়েছেন যে, আমাদের একে অপরের সঙ্গে কুরআনসম্মত শব্দ দ্বারা অভিবাদন বিনিময় করতে হবে। তিনি বলেন:
وَإِذَا جَآءَكَ ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِـَٔايَٰتِنَا فَقُلْ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْۖ
“আর যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, সালামুন আলাইকুম।" (সূরা আন‘আম ৬:৫৪)
এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, যে কেবলমাত্র যারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনে, তাদেরকে “সালামুন আলাইকুম” বলতে হবে। যারা কুরআন অগ্রাহ্য করে বা অবিশ্বাসী, তাদের প্রতি এই বরকতপূর্ণ অভিবাদন প্রযোজ্য নয়।
বন্ধুগণ! ফেরেশতাগণও জান্নাতবাসীদের অভিবাদন প্রদান করবে কেবল “সালামুন আলাইকুম” বলেই। আল্লাহ বলেন:
ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ طَيِّبِينَۙ يَقُولُونَ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمُ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
“ফেরেশতা যাদের পবিত্র অবস্থায় মৃত্যু ঘটায়, এই বলে যে, সালামুন আলাইকুম, তোমরা যে আমাল করেছ সেই অনুযায়ী জান্নাতে প্রবেশ কর।" (সূরা নাহল ১৬:৩২)
এটি নির্দেশ করে যে, সালাম কেবলই বরকতপূর্ণ শব্দ, এবং এটি আল্লাহর নির্ধারিত ভাষা অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে।
বন্ধুগণ! যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা জান্নাতের দিকে প্রবেশের সময় দরজার রক্ষীদের কাছ থেকে “সালামুন আলাইকুম” শব্দটি শুনবে। আল্লাহ বলেন:
وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ رَبَّهُمْ إِلَى ٱلْجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَٱدْخُلُوهَا خَٰلِدِينَ
“যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করেছে, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা পৌঁছাবে, জান্নাতের দরজা খোলা হবে, এবং রক্ষকরা বলবে: সালামুন আলাইকুম, তোমরা ভালো ছিলে, প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে।" (সূরা যুমার ৩৯:৭৩)
বন্ধুগণ! নবী ইবরাহীম (আঃ) তার পিতাকে সালাম জানিয়েছিলেন এভাবে:
قَالَ سَلَٰمٌ عَلَيْكَۖ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّىٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ بِى حَفِيًّا
“ইবরাহীম বলল, সালামুন আলাইকা। আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চাইব, নিশ্চয় তিনি বড়ই অনুগ্রহশীল।" (সূরা মারইয়াম ১৯:৪৭)
এ আয়াতটি প্রমাণ করে যে, মানুষের প্রতি সালাম দেওয়ার সময়ও কেবল আল্লাহর নির্দেশিত শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
বন্ধুগণ! আল্লাহর নির্দেশিত শব্দ ছাড়া সালাম প্রদান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদিসে কেউ “আসসালামু আলাইকুম” ব্যবহার করলে তা কুরআনের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে। কারণ কুরআন স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে “সালামুন আলাইকুম”।
বন্ধুগণ! আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়েছেন কিভাবে সালামের জবাব দিতে হয়। যখন কেউ সালামুন আলাইকুম বলে সালাম প্রদান করে তখন এর জবাবে সালামুন আলাইকুম বলতে হবে। অথবা একটু বৃদ্ধি করে বলা যাবে, যেমন সালামুন আলাইকুম তিবতুম মুবারকাতান তইয়েবাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا۟ بِأَحْسَنَ مِنْهَآ أَوْ رُدُّوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ حَسِيبًا
“যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে, তখন তার চেয়ে উত্তমভাবে উত্তর দাও, বা যেভাবে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে জবাব দাও।" (সূরা নিসা ৪:৮৬)
অতএব, মূল শব্দ “সালামুন আলাইকুম” ব্যবহার করে উত্তরের প্রথা মানা বাধ্যতামূলক।
বন্ধুগণ! অমুসলিমদের সাথে সালামের নিয়মও কুরআনে নির্দিষ্ট। আল্লাহ বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا ضَرَبْتُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَتَبَيَّنُوا۟ وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَنْ أَلْقَىٰٓ إِلَيْكُمُ ٱلسَّلَٰمَ لَسْتَ مُؤْمِنًا
“হে মু’মিনগণ! যখন আল্লাহর পথে যাত্রা করো, পরীক্ষা করো কে বন্ধু কে শত্রু। কেউ যদি তোমাদের সালাম দেয়, বলো না, তুমি মু’মিন নও।" (সূরা নিসা ৪:৯৪)
অতএব, অমুসলিম বা অপরিচিত লোকের সালামের জবাব দিতে হবে, তবে সতর্কভাবে।
বন্ধুগণ! সালাম না দেওয়া বা তার জবাব না দেওয়ার ক্ষতি অত্যন্ত গুরুতর। ৫৮ নম্বর সুরা মুজাদালাহর ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا جَآءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ ٱللَّهُ وَيَقُولُونَ فِىٓ أَنفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا ٱللَّهُ بِمَا نَقُولُۚ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَاۖ فَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ
তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে এমনভাবে সালাম করে যেমনভাবে আল্লাহ তোমাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলে- ‘আমরা যেভাবে বলি তার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে ‘আযাব দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্য যথেষ্ট, তাতে তারা জ্বলবে, কতই না নিকৃষ্ট সেই গন্তব্যস্থল!।
এই আয়াত দারা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কুরআনের নির্দেশিত সালামের বিধান না মানলে আখিরাতে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হবে।
বন্ধুগণ! অপরদিকে, পবিত্র কুরআনে সালামের নেকির কথাও স্পষ্ট করা হয়েছ। আল্লাহ বলেন:
مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشْرُ أَمْثَالِهَاۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰٓ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
“যে ব্যক্তি কোনো সৎকর্ম করে, তার জন্য আছে দশ গুণ পুরস্কার।" (সূরা আন‘আম ৬:১৬০)
বন্ধুগণ! নবীর জীবন আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। নবী এবং সাহাবীরা কেবল কুরআন ও নবীর প্রদত্ত শব্দ অনুযায়ী সালাম বিনিময় করত।
নবী সাহাবীরা কখনোও “আসসালামু আলাইকুম” বা কুরআনের বাইরে কোনো নতুন শব্দ ব্যবহার করত না। কারণ আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
“হে রসূল! যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি শুধু তাই প্রচার কর।" (সূরা মায়েদা ৫:৬৭)
অতএব, নবী এবং সাহাবীরা কেবল কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ব্যবহার করতেন।
কেউ যদি দাবি করে যে, নবীর সালাম কুরআন বহির্ভূত ভিন্ন রকম ছিল, তাহলে সে নবীর উপর মিথ্যা অপবাদকারী কাফিরে পরিগণীত হয়ে যাবে। তার জন্য জাহান্নাম নিশ্চিত।
বন্ধুগণ! সামাজিক জীবনে সালামের গুরুত্বও অতীব। সালাম কেবল শব্দ নয়, বরং মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা, শুভেচ্ছা এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ স্থাপন করে। আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا۟ بِأَحْسَنَ مِنْهَآ أَوْ رُدُّوهَآ
“যখন তোমাদেরকে অভিবাদন জানানো হবে, উত্তমভাবে উত্তর দাও বা যেভাবে এসেছে, সেভাবে ফিরিয়ে দাও।" (সূরা নিসা ৪:৮৬)
এটি দেখায়, যে সালামের জবাব দেওয়া এক সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক দায়িত্ব।
বন্ধুগণ! আল্লাহর প্রদত্ত এই নির্দেশিত শব্দ ব্যবহার না করলে ক্ষতি হয়। যেমন, যারা আল্লাহর নির্দিষ্ট শব্দ না ব্যবহার করে সালাম দেয়, তাদের জন্য আখিরাতে জাহান্নামের হুমকি রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا
“যারা আল্লাহর প্রদত্ত ভাষা ব্যবহার করে না, তাদের জন্য জাহান্নাম যথেষ্ট।" (সূরা মুজাদিলাহ ৫:৮)
এটি অত্যন্ত গুরুতর, তাই কুরআনের নির্দেশিত শব্দই সর্বোত্তম।
বন্ধুগণ! মুসলিম সমাজে সালামের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও শান্তি বজায় থাকবে। আল্লাহর নির্দেশিত শব্দ ব্যবহার করলে, মানুষ একে অপরের প্রতি সম্মান, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আধ্যাত্মিক বন্ধন অনুভব করবে।
বন্ধুগণ! ইসলামী সমাজে সালামের যথাযথ ব্যবহার নৈতিকতা, সততা এবং পারস্পরিক সম্মানের প্রতীক। আল্লাহ বলেন:
مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, তার জন্য দশ গুণ পুরস্কার আছে।” (সূরা আন‘আম ৬:১৬০)
সালামও এক ধরনের সৎকর্ম, তাই এর মাধ্যমে অসীম পুরস্কার লাভ করা সম্ভব।
বন্ধুগণ! সালামের যথাযথ ব্যবহার শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের জন্য বরকত। এটি দুনিয়ায় শান্তি, সৌহার্দ্য, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি নিশ্চিত করে। তাই কেবল কুরআনের নির্দেশিত শব্দ ব্যবহার করাই নির্দেশিত।
বন্ধুগণ! আধুনিক জীবনে অনেক মানুষ উদাসীন। তারা কেবল প্রথাগত শব্দ বা ফর্ম্যালিটি অনুসরণ করে, কিন্তু কুরআনের নির্দেশিত সঠিক শব্দ ব্যবহার করে না। এটি আধ্যাত্মিক ক্ষতি এবং ঈমানের ওপর প্রভাব ফেলে। আল্লাহ বলেন:
حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَا
“যারা আল্লাহর প্রদত্ত ভাষা ব্যবহার করে না, তাদের জন্য জাহান্নাম যথেষ্ট।” (সূরা মুজাদিলাহ ৫:৮)
এটি আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, সালামের শব্দের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় নেই।
বন্ধুগণ! আধুনিক প্রযুক্তিতে যেমন ফোন, ইমেইল বা মেসেজিং অ্যাপে সালাম আদান প্রদান করা হয়, সেখানে শব্দের যথার্থতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কেবল “হাই” বা “হ্যালো” নয়, বরং কুরআনানুমোদিত “সালামুন আলাইকুম” ব্যবহার করলে সৎকর্ম ও নেকির অর্জন সম্ভব।
বন্ধুগণ! আধুনিক জীবনে আমাদের দায়িত্ব হলো, কেবল কুরআনের নির্দেশিত শব্দ ব্যবহার করা, ভুল প্রচলন পরিহার করা, এবং প্রতিটি সালামের মাধ্যমে ঈমানী দায়িত্ব পালন করা। এই শব্দ আমাদের ঈমান, নেকির বৃদ্ধি এবং দুনিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
0 Comments