কুরআনের সলাত বনাম মানুষের বানানো নামাজ
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দرَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(হে আমার প্রভু! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে; আর আমি আশ্রয় চাই, হে প্রভু, তারা যেন আমার কাছে না আসে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হেদায়াতের অনুসারীদের জন্য সালাম, আর সালাম মুহাম্মদের জন্য, যিনি কুরআন নিয়ে এসেছেন সর্বনিয়ন্ত্রক হিসেবে।)
বন্ধুগণ!
আজ আমি আপনাদের এমন একটি সত্য বলবো যা হয়তো অনেকের কানে সহ্য হবে না। হয়তো কেউ কেউ রাগ করবে, কেউ ঘৃণা ছুঁড়ে মারবে, কেউ বলবে – “তুমি তো ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছো!” কিন্তু আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি – আমি ধর্মের বিরুদ্ধে নই; আমি সেই আল্লাহর দীনের পক্ষে, যিনি তাঁর কিতাবে বলেছেন –
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ
(বিধান কেবল আল্লাহরই জন্য) — সুরা ইউসুফ ১২:৪০
আজকের এই ভিডিওটি খুবি খুবি গুরুত্বপুর্ণ কেউ টেনে দেখবেননা, সম্পুর্ণ ভিডিওটি দেখুন। ভালো মনে হলে লাইক দিবেন। ভালো মনে না হলে ডিসলাইক দিবেন।
বন্ধুগণ!
আমরা মুসলিমরা আজ যে ‘নামাজ’ পালন করি – পাঁচ ওয়াক্ত, নির্দিষ্ট রাকাত, নির্দিষ্ট হাত বাঁধা-খোলা, রুকু-সিজদার ধারা – আমরা কি কখনো ভেবেছি, এর শেকড় কোথায়?
এটি কি কুরআনের সরাসরি আদেশ?
না কি এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা একটি রিচুয়াল?
কুরআনে আল্লাহ আমাদের কী বলেছেন? তিনি বারবার বলেছেন —
أَقِيمُوا الصَّلَاةَ
(সলাত কায়েম করো)
কিন্তু বন্ধুগণ, “কায়েম করা” আর “পড়া” এক নয়! কায়েম করা মানে দাঁড় করানো, জীবনের কেন্দ্রে স্থাপন করা, দিনরাত সর্বসময় বাস্তবায়ন করা। আর আমরা কী করি? আমরা সলাতকে সীমাবদ্ধ করেছি কয়েক মিনিটের কিছু রিচুয়ালে – যেন বাকি ২৩ ঘণ্টা আল্লাহর বিধান থেকে আলাদা আছি!
বন্ধুগণ!
আসুন কুরআনের আয়াতটি দেখি –
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
(সলাত মানুষকে অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে) — সুরা আনকাবুত ২৯:৪৫
প্রশ্ন করি – আমাদের নামাজ কি এই ফলাফল দিচ্ছে?
নামাজ পড়ে কি মানুষ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করেছে?
নামাজ পড়ে কি মানুষ মিথ্যা বলা ছেড়েছে?
নামাজ পড়ে কি মুসলিম সমাজ একতাবদ্ধ হয়েছে?
না বন্ধুগণ! নামাজ শেষে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দলাদলি, গালাগালি, মিথ্যা, গিবত, অন্যায় সব আগের মতোই চলছে। তাহলে আমাদের নামাজ কি সেই সলাত যা কুরআন বলছে? নাকি ভিন্ন কিছু?
বন্ধুগণ!
অনেকেই বলে – “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জান্নাতের চাবি।”
কিন্তু কুরআন কী বলছে?
لَّيۡسَ بِأَمَانِيِّكُمۡ وَلَآ أَمَانِيِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِۗ مَن يَعۡمَلۡ سُوٓءࣰا يُجۡزَ بِهِۦ وَلَا يَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيࣰّا وَلَا نَصِيرࣰا
তোমাদের বাসনা আর আহলে কিতাবদের বাসনা কোন কাজে আসবে না। যে ব্যক্তি কোন কুকর্ম করবে, সে তার বিনিময় প্রাপ্ত হবে, সে আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোন অভিভাবক পাবে না, কোন সাহায্যকারীও না। — সুরা নিসা ৪:১২৩
অর্থাৎ, শুধু নামাজ পড়লেই মুক্তি নয়; ন্যায়-অন্যায়ের বিচারেই জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। অন্যায় করলে শাস্তি হবেই- নামাজ তার সাহায্যকারী হবেনা।
বন্ধুগণ!
তাহলে সলাত আসলে কী?
সলাত মানে হলো আল্লাহর সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি।
যেখানে তুমি দিনরাত আল্লাহকে স্মরণ করবে, তাঁর বিধান মানবে, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকবে।
সলাত মানে হলো তোমার পুরো জীবন – ব্যবসা, পরিবার, রাজনীতি, সমাজ – সবকিছু কুরআনের নির্দেশে চালানো। তাই কুরআন বলছে –
الَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ
(যারা নিজেদের সলাতে অটল থাকে) — সুরা মাআরিজ ৭০:২৩
অটল থাকা মানে শুধু পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা নয়; বরং সারাদিন সারাজীবন সারাটি সময় সেই সলাতের প্রভাব ধরে রাখা।
বন্ধুগণ!
এখন বলুন তো – আজকের মুসলিমরা কি সলাত কায়েম করছে, নাকি নামাজ নামের এক আচারিক রুটিনে ডুবে আছে?
আজকের মুসলিমরা কি অন্যায় বন্ধ করছে, নাকি নামাজ পড়েও সুদ খাচ্ছে, মিথ্যা বলছে, দলাদলি করছে?
বন্ধুগণ!
মনে রাখুন, কুরআনের সলাত মানুষের ভেতর বিপ্লব ঘটায়। এটি মানুষকে অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে, অন্যায় থেকে দূরে সরায়। কিন্তু নামাজ যদি শুধু মুখস্থ দোয়া আর শারীরিক ব্যায়ামে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এর কোনো ফল নেই। রাসুলও সতর্ক করেছিলেন –
“অনেক নামাজি আছে যারা নামাজ থেকে কিছুই পাবে না, শুধু ক্লান্তি পাবে।” (সহীহ ইবনে মাজাহ)
বন্ধুগণ!
আমরা যদি কুরআনের সলাত বুঝতে চাই, আমাদের দেখতে হবে – রাসুল সালামুন আলা মুহাম্মদ তাঁর জীবনে কিভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছিলেন?
তিনি কি কেবল রাকাত শিখিয়েছিলেন?
না কি পুরো জীবন, সমাজ, রাষ্ট্রকে আল্লাহর বিধানে রূপান্তর করেছিলেন?
রাসুল যখন মক্কায় ছিলেন, তিনি দিনে কত রাকাত পড়তেন তা কেউ জানে না। কিন্তু আমরা জানি – তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, মূর্তিপূজা থেকে মানুষকে সরিয়েছেন, দুর্নীতি রুখেছেন, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটাই ছিল তাঁর সলাত।
বন্ধুগণ!
তাহলে প্রশ্ন – এই নামাজ কাঠামো কোথা থেকে এলো?
কুরআনে তো এর কোনো বিবরণ নেই।
রাসুলের জীবনেও এমন পূর্ণাঙ্গ কাঠামো নেই।
তাহলে কীভাবে এটা বাধ্যতামূলক হলো?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় – যা আমি আপনাদের বলবো এই ভিডিওতে।
যারা সাব্স্ক্রাইব করেননি এখনি সাব্স্ক্রাইব করুন। ভিডিওতে একটি লাইকদিন।
এখন আমি আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগিয়ে দিচ্ছ –
যদি কুরআনের সলাত সত্যিই অন্যায় রুখে দেয়, তবে কেন আমাদের সমাজে নামাজি মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, আর অন্যায়ও সবচেয়ে বেশি?
বন্ধুগণ!
আমাদের চোখ খুলতে হবে।
সলাত মানে রুটিন নয়; সলাত মানে বিপ্লব।
সলাত মানে আচার নয়; সলাত মানে আল্লাহর সাথে চুক্তি।
সলাত মানে পাঁচ মিনিট নয়; সলাত মানে পুরো জীবন।
যদি আমরা সলাতকে ফিরিয়ে আনি তার কুরআনিক অর্থে, তবে মুসলিম উম্মাহ এক হবে, অন্যায় দূর হবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে। আর যদি নামাজকেই সব মনে করি, তবে বিভাজন চলবেই, অন্যায় চলবেই, মুসলিমরা ছিন্নভিন্ন হয়েই থাকবে।
বন্ধুগণ!
কুরআনের সলাত হলো জীবনব্যাপী আল্লাহর সাথে চুক্তি, যা অন্যায়কে রুখে দেয়, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু আজ আমরা যে নামাজ দেখি, তা হলো রাকাতে-রুটিন ও প্রতিযোগিতা। যা সমাজের অন্যায়কে লাথি মেরে বের করাতো অনেক দুরের কথা। বিন্দুমাত্র ধাক্কাও মারছেনা।
প্রশ্ন জাগে — এই রুটিনের নামাজ কোথা থেকে এলো?
রাসুল কি আমাদে এই নামাজ দিয়েছিলেন?
কুরআন কি আমাদের এই নামাজের কথা বলে?
না কি পরবর্তী যুগের মানুষ আমাদের উপর এই চাপিয়ে দিল?
বন্ধুগণ! উত্তর লুকিয়ে আছে ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়ে — রাসুলের মৃত্যুর পর মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে।
বন্ধুগণ!
রাসুল সালামুন আলা মুহাম্মদ ইন্তেকাল করলেন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। তার মৃত্যুর পর মুসলিম সমাজ বিভক্ত হয়ে গেল খিলাফতের প্রশ্নে। আবু বকর (রা.) প্রথম খলিফা হলেন, এরপর উমার (রা.), উসমান (রা.) ও আলী (রা.)।
কিন্তু বন্ধুগণ! উসমান (রা.)-এর সময় থেকে ক্ষমতার লড়াই তীব্র হলো। উসমানের হত্যার পর শুরু হলো মুসলিম ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ — ফিতনাহ আল-কুবরা (মহা-বিভক্তি)।
এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার মঞ্চে উঠে এল উমাইয়া বংশ। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান প্রতিষ্ঠা করলেন উমাইয়া সাম্রাজ্য — যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বংশীয় রাজতন্ত্র।
বন্ধুগণ!
উমাইয়া খলিফারা বুঝেছিল —
“যদি কুরআনকেন্দ্রিক সলাত প্রতিষ্ঠা করা হয়, মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আর যদি আচারিক নামাজ চাপিয়ে দেওয়া যায়, মানুষ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানো ভুলে যাবে।”
ফলাফল?
তারা সলাতকে রূপান্তর করল রাকাতের-রুটিনে।
মানুষকে বলা হলো — “তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো, আর জান্নাতে হুরমুর করে ঢুকে পড়।”
এভাবে মুসলিমদের মগজ থেকে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব মুছে ফেলা হলো।
বন্ধুগণ!
১. কুরআনকেন্দ্রিক সলাত বাদ পড়ল।
মানুষকে শেখানো হলো — সলাত মানে নির্দিষ্ট কিছু কাজ: দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা। ইত্যাদি
২. রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করা হলো।
বিভিন্ন শহরে ভিন্ন ভিন্ন রাকাত প্রচলিত ছিল; উমাইয়ারা সামরিক ও প্রশাসনিকভাবে একীকরণ করল।
৩. আজান পরিবর্তন।
উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়া ‘হাইয়া আলা খইরিল আমাল’ বাদ দিলেন; কারণ এটি জিহাদে উদ্বুদ্ধ করত।
৪. হাদিসকে ব্যবহার।
কুরআনের চেয়ে হাদিসকে প্রাধান্য দিয়ে কাঠামো প্রমাণ করা হলো।
(ইগনাজ গোল্ডজিহার: Muslim Studies, খণ্ড ২ — রাজনৈতিক প্রভাবিত হাদিসের বিশ্লেষণ)
বন্ধুগণ! —
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়াদের পতন হলো; ক্ষমতায় এল আব্বাসীয়রা। তারা উলামাদের সহযোগিতায় তৈরি করল ফিকাহের সাম্রাজ্য।
• চার ইমাম আবির্ভূত হলেন: আবু হানিফা, মালিক, শাফেয়ি, আহমদ ইবনে হাম্বল।
• প্রত্যেকের নামাজ পদ্ধতি আলাদা হলো।
• আজান, তাকবীর, হাত বাঁধা, দোয়া, কুনুত — সবকিছুতেই ভিন্নতা এলো।
তাবারির ইতিহাস বলছে —
“আব্বাসীয় শাসকেরা রাজনৈতিক ঐক্য রক্ষার জন্য চার মাজহাবকে স্বীকৃতি দিলেও, প্রকৃত ঐক্য এলো না; বরং মুসলিমরা স্থায়ী বিভাজনে পড়ল।”
বন্ধুগণ!—
রাসুলের মৃত্যুর ২০০ বছর পর শুরু হলো হাদিস সংকলন। বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ ইত্যাদি তখন সংকলিত হয়।
গবেষক প্যাট্রিসিয়া ক্রোন বলেন —
“তৃতীয় শতকের আগ পর্যন্ত নামাজের রাকাত ও কাঠামো নির্দিষ্টই ছিল না; রাজনৈতিক স্বার্থেই পরবর্তী যুগে তা মান্যতা পায়।”
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন Hagarism: The Making of the Islamic World)
এভাবে হাদিসকে ব্যবহার করে নামাজের কাঠামো চূড়ান্ত করা হলো।
বন্ধুগণ!—
ফল কী হলো?
মুসলিম সমাজ বিভক্ত হলো শত শত দলে ও মাযহাবে।
• হানাফি বনাম শাফেয়ি: হাত বাঁধা না খোলা?
• সুন্নি বনাম শিয়া: আজান আলাদা, রাকাত আলাদা।
• আহলে হাদিস বনাম অন্যান্যরা: কুনুত পড়বে কি না?
মসজিদে মসজিদে লড়াই শুরু হলো।
ইতিহাস সাক্ষী —
কুফা ও বসরার মসজিদে নামাজের ভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে, এমনকি রক্ত ঝরেছে বহুবার।
(দেখুন ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
বন্ধুগণ!
উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা নামাজকে বানাল রাজনৈতিক হাতিয়ার।
• মানুষকে বলা হলো — “নামাজ পড়ো, খলিফার প্রতি আনুগত্য রাখো।”
• বিদ্রোহ করলে বলা হলো — “তুমি নামাজি নও, তুমি ফাসিক।”
এভাবে দীনকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলো।
বন্ধুগণ!
কুরআন আগে থেকেই সতর্ক করেছিল —
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا
(তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা বিভক্ত হলো এবং মতভেদে জড়িয়ে পড়লো) — সুরা আলে ইমরান ৩:১০৫
কিন্তু বন্ধুগণ! আমরা কি বিভক্ত হইনি?
আজ মুসলিম বিশ্বের ৭০টিরও বেশি শাখা!
কেউ বলে হাত বাঁধো, কেউ বলে ছাড়; কেউ বলে আমিন জোরে পড়ো, আবার কেউ বলে পড়ো না।
এবং আমরা একে অপরকে কাফের বলছি!
বন্ধুগণ!
আজ আমাদের মসজিদ পূর্ণ নামাজি মানুষে; কিন্তু রাস্তা পূর্ণ অন্যায়- অবিচারে।
• মসজিদ ভরে গেছে দাঁড়িয়ে, রুকু, সিজদায় —
• কিন্তু আদালত ভরে গেছে ঘুষে, দুর্নীতিতে।
• বাজার ভরে গেছে মিথ্যায়।
• সংসদ ভরে গেছে লোভে।
এটাই প্রমাণ হলো — আমরা সলাত হারিয়েছি, নামাজ পেয়েছি।
বন্ধুগণ!
উমাইয়া-আব্বাসীয়দের রাজনীতি মুসলিম সমাজকে সলাত থেকে সরিয়ে নামাজে ফেলে দিয়েছে।
তারা নামাজের কাঠামো বানিয়ে বিভাজন তৈরি করেছে, আর আমরা তা অন্ধভাবে মেনে নিয়েছি।
বন্ধুগণ! —
দেখুন চারদিকে!
আজ মুসলিম বিশ্বের ৯৯% মানুষ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ করে। তবু দুর্নীতি, অন্যায়, অশ্লীলতা, মিথ্যা, দলাদলি সবচেয়ে বেশি মুসলিম দেশেই কেন?
বিশ্ব দুর্নীতিসূচকের শীর্ষে মুসলিম দেশগুলো কেন?
গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আগুন মুসলিম দেশেই কেন?
মসজিদগুলো ভরে গেছে নামাজিতে; কিন্তু রাস্তা ভরে গেছে ঘুষখোরে। আদালত ভরে গেছে অন্যায় রায়ে। সংসদ ভরে গেছে লোভে।
প্রশ্ন করি — নামাজ কি সত্যিই মানুষকে বদলেছে? না কি কুরআনের সলাত হারিয়ে ফেলায় আমরা বদলাইনি?
বন্ধুগণ!
কুরআন চিৎকার করে বলেছিল —
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
(সলাত মানুষকে অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে) — সুরা আনকাবুত ২৯:৪৫
তাহলে কেন আমাদের নামাজ অন্যায়কে রুখতে পারছে না?
উত্তর স্পষ্ট — আমরা সলাতকে রুটিনে পরিণত করেছি; কিন্তু জীবনের কেন্দ্রে কায়েম করতে পারিনি।
বন্ধুগণ!
দেখুন ইতিহাসের শিক্ষা!
নামাজের রাকাত, হাত বাঁধা, আজান — এসব নিয়ে কত দল, কত মাযহাব সৃষ্টি হলো।
আজও মসজিদে মসজিদে ভিন্ন মত; মুসলিমরা মুসলিমদের কাফের বলছে।
রাসুল সতর্ক করেছিলেন —
“আমার উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে; একটি দলই মুক্তি পাবে।” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিজি)
এই বিভাজনের মূল? মানুষের বানানো কাঠামো; আল্লাহর কুরআন নয়।
বন্ধুগণ!
কুরআন আমাদের বলছে —
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
(তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি আঁকড়ে ধরো; বিভক্ত হয়ো না) — সুরা আলে ইমরান ৩:১০৩
আল্লাহর রশি কী?
সালামুন আলা মুহাম্মাদ বলেছেন-
“আমার পরে বিরোধ হবে। যখন তা ঘটবে তখন তোমরা আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরবে। এটি আল্লাহর রশি, যা আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত...” (তিরমিযি ২৯০৬)
হাদিস বলছে- আল্লাহর রশি হল- কুরআনুল কারিম।
কুরআন নিজেই উত্তর দিয়েছে —
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ
(আমি তোমার কাছে পাঠিয়েছি এই কিতাব সত্যসহ; পূর্ববর্তী কিতাবগুলো নিশ্চিতকারী ও তাদের উপর সর্বনিয়ন্ত্রক) — সুরা মায়িদা ৫:৪৮
অর্থাৎ কুরআনই হলো আল্লাহর রশি; সলাতও কুরআনকেন্দ্রিক হতে হবে।
বন্ধুগণ!
সলাত প্রতিষ্ঠা মানে —
• কুরআনের প্রতিটি আদেশ পালন করা
• কুরআনের নিষেধ মানা
• সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা
• দুর্নীতি, অশ্লীলতা, অন্যায় দূর করা
• আল্লাহর সাথে সার্বক্ষণিক সংযোগ রাখা
এটি একবারে ব্যক্তিগত নয়; এটি সমষ্টিগত বিপ্লব।
কুরআনের সলাত দাঁড় করালে সমাজে থাকবে না অন্যায়; মানুষ বদলাবে; রাষ্ট্র বদলাবে।
বন্ধুগণ!
প্রশ্ন হলো — কিভাবে নামাজ থেকে সলাতের দিকে ফিরবো?
১. কুরআনকে কেন্দ্রে আনতে হবে।
সালাত কুরআন থেকে নিতে হবে; তাই কুরআনের শিক্ষাকে প্রথমে বুঝতে হবে।
২. স্মরণ নয়; চুক্তি।
সলাত কেবল যিকির নয়; এটি জীবনের সব দিক কুরআনের অধীনে আনতে হবে।
৩. দল-মাযহাব নয়; ঐক্য।
সব বিভাজন ছেড়ে সবাইকে এক আল্লাহর কিতাবের দিকে ফিরতে হবে।
বন্ধুগণ
আজ আমি আপনাদের ডাকি —
ফিরে আসুন কুরআনের সলাতের দিকে!
রুটিন নামাজ যথেষ্ট নয়; জীবন পাল্টান, সমাজ পাল্টান।
আল্লাহর সাথে সত্যিকারের সম্পর্ক গড়ুন; অন্যায় ত্যাগ করুন; ন্যায় প্রতিষ্ঠা করুন।
বন্ধুগণ!
রাসুল সালামুন আলা মুহাম্মদ এসেছিলেন কুরআন নিয়ে; তিনি মানবজাতিকে ডাকলেন ন্যায়ের পথে।
কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর মানুষ বানালো কাঠামো, দল, মাযহাব।
আজ আমাদের সামনে একটাই পথ — ফিরে যাও কুরআনের কাছে।
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ
(এটাই আমার সরল পথ; একে অনুসরণ করো) — সুরা আনআম ৬:১৫৩
যদি আমরা এই পথে ফিরি, মুসলিম উম্মাহ আবার জেগে উঠবে।
আর যদি না ফিরি — বিভাজন চলবে, অন্যায় চলবে, পতন চলবে।
বন্ধুগণ!
এখন সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে।
আমরা কি নামাজের রুটিনে থাকবো, নাকি সলাতের বিপ্লব আনবো?
আমরা কি বিভাজিত থাকবো, নাকি ঐক্যবদ্ধ হবো?
আমরা কি মানব-নির্মিত কাঠামো আঁকড়ে ধরবো, নাকি আল্লাহর কুরআন আঁকড়ে ধরবো?
0 Comments