কুরআন শুধু নিয়মের বই নয়, জীবনের বই
লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ
শোনো…
তুমি কি কখনো ভেবেছো,
কুরআন তোমার কাছে এসেছে, এটা কত বড় এক অলৌকিক ডাক, ধারণা আছে তোমার?
যে ডাকের উৎস — সরাসরি আরশের মালিক।
যার কোন মানুষী ফিল্টার নেই, কোন প্রিন্টিং প্রেসের ভুল নেই,
যেটা তোমার হাতের মুঠোয় থাকা একমাত্র নিঃশব্দ বজ্রপাত—
যেটা তোমার হৃদয়কে রঙ্গীন করে দিতে পারে, যদি তুমি পড়ো, ভাবো, মানো।
প্রথম প্রজন্মের মানুষরা কেমন ছিল
সালামুন আলা মুহাম্মাদ যখন প্রথমবার আল্লাহর বাণী শুনলেন—
তিনি কেবল কাগজে লিখে রাখেননি,
বরং বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন,
এবং তাঁর সঙ্গীদের হৃদয়ে ঢেলে দিলেন।
সেই সঙ্গীরা—
যারা মরুভূমির ধুলোতে হাঁটত,
তারা ছিল কুরআনের আলোয় জ্বলন্ত সিংহ।
একটি আয়াত তাদের যুদ্ধের মাঠে নামিয়ে দিত,
একটি আয়াত তাদের কান্নায় ভাসিয়ে দিত।
এই কুরআন তাদের পরিনত করেছিলো বিশ্বের শ্রেষ্ট জাতিতে।
আজ আমাদের বাড়িতে কুরআন আছে—
কিন্তু সেটা কেউ মারা গেলে শোকের সময়ে খোলা হয়,
তিলাওয়াত হয় মৃত মানুষের জন্য,
জীবিতের জন্য নয়।
আমরা কুরআনকে রেখেছি শ্রদ্ধার শোকেসে—
যেখানে ধুলো জমে,
যেখানে পাতাগুলো পাতা উল্টানোর শব্দও ভুলে গেছে।
তুমি কি বুঝতে পারছো?
তুমি হাতে ধরে আছো আল্লাহর সরাসরি বার্তা,
কিন্তু তুমি সেটা না পড়ে স্ক্রল করছো
মানুষের লেখা স্ট্যাটাস, ফেসবুক পোস্ট, নিউজ ফিড!
কুরআন সবার জন্য, শুধু আলেমদের জন্য নয়
আল্লাহ নিজে বলেছেন:
“আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য,
কেউ আছে কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে?”
(সূরা ক্বামার, ৫৪:১৭)
এই আয়াত বলছে—
কুরআন শুধু শায়েখদের জন্য নয়,
ফকীহদের জন্য নয়,
বরং তোমার জন্য, আমার জন্য,
প্রতিটি সাধারণ মানুষের জন্য।
কিন্তু তুমি কি করছো?
তুমি নিজের মাথায় তালা লাগিয়ে রেখেছো—
বলছো:
“আমি তো আরবি জানি না… আগে দারস নিতে হবে, আগে দশটা বই পড়তে হবে…”
আল্লাহর সহজ করে দেয়া কিতাব তুমি মানুষের বানানো কঠিন পরীক্ষার পেছনে লুকিয়ে রেখেছো।
কুরআন শুধু নিয়মের বই নয়, জীবনের বই
কেউ কেউ ভাবে—কুরআন মানে শুধু হালাল-হারামের তালিকা।
কিন্তু না!
এটা জীবনের মানচিত্র, হৃদয়ের ওষুধ, চোখের আলো, পথের দিশা।
আল্লাহ বলেছেন:
“এটা সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই,
পথপ্রদর্শক মুততাক্বীদের জন্য।”
(সূরা বাক্বারা, ২:২)
যার কাছে কুরআন নেই—
সে পথ হারিয়েছে,
সে শূন্য মরুভূমিতে পানি খুঁজছে, কিন্তু হাতে ধুলা পাচ্ছে।
ইতিহাসে বহুবার এমন হয়েছে—
শাসকেরা চেয়েছে মানুষ সরাসরি কুরআন না পড়ুক।
তাদের দরকার ছিল দালাল, মধ্যস্থতাকারী,
যারা বলবে: “তুমি বুঝতে পারবে না, আমরা বুঝিয়ে দেব।”
এভাবে কুরআনের আলোকে বন্দি করা হয়েছে ব্যাখ্যার কারাগারে।
মানুষ মূল উৎসের স্বাদ পায়নি—
বরং পেয়েছে মানুষের ফিল্টার করা সংস্করণ।
শোনো!
যে কুরআন সাহাবিদের বদলে দিয়েছে,
যে কুরআন মরুভূমিকে সভ্যতায় পরিণত করেছে,
সে কুরআন আজ তোমার বুকেও আলো জ্বালাতে পারে—
যদি তুমি সাহস করে সরাসরি তার কাছে ফিরে যাও।
আজ তুমি যদি শুধু আলমারিতে রাখা কুরআনকে পরিষ্কার করো—
তাহলে শুধু মলাট ঝকঝক করবে,
কিন্তু তোমার জীবন অন্ধকারেই থাকবে।
তুমি যদি সত্যি আলো চাও—
তাহলে প্রতিদিন কুরআন খুলো,
পড়ো, ভাবো, নিজের জীবনে প্রয়োগ করো।
কুরআন তোমাকে ডাকছে—
তুমি কি উত্তর দেবে?
না কি তুমি বলবে—“এখন সময় নেই”?
মনে রেখো—মৃত্যুও তোমাকে ডাকবে,
আর তখন তোমার কাছে সময় থাকবে না!
বন্ধুগণ!
তুমি কুরআনের দিকে ফিরতে চাও —
কিন্তু পথে দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছর পুরনো দেয়াল,
যা তৈরি হয়েছে মানুষের হাতে, মানুষের মন থেকে।
এই দেয়াল গড়েছে…
হাদিসের মোটা মোটা গ্রন্থ,
ফিকাহের জটিল বই,
শায়েখদের হাজার হাজার পৃষ্ঠা ফতোয়া।
তোমাকে বলা হয় —
"এই সব না পড়লে তুমি কুরআন বুঝতে পারবে না!"
“এইটা তো রাসূলের উম্মতের ঐতিহ্য!”
কিন্তু বুঝতে পারছো না…
এই ‘ঐতিহ্য’ আসলে তোমার মুক্তির পথে মজবুত দেয়ালের মত বাধা!
তুমি কুরআন পড়তে চাও —
তোমাকে জটিল আরবি ব্যাকরণ শিখতে হয়,
ব্যাখ্যার পাহাড় পার হতে হয়,
শায়েখের অনুমোদন নিতে হয়!
আসলে তুমি কখনোই সরাসরি আল্লাহর বাণীর সান্নিধ্যে আসো না।
তুমি একটা মধ্যস্ত মানুষের ছায়ার নীচে লুকিয়ে থাকো।
এটাই শয়তানের কৌশল —
কুরআনকে দূরে সরিয়ে দেয়া,
মানুষকে বিভ্রান্ত করা,
তার হৃদয় থেকে সরাসরি আল্লাহর বাণী শোনার অধিকার কেড়ে নেওয়া।
দেখো তো!
সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার ফতোয়া বই,
যেখানে আলেমরা একে অপরের সাথে লড়াই করে,
একজন বলে, অন্যজন মেনে নেয় না!
আর আমরা?
শুধু শুনি, বুকে রাখি, কিন্তু কুরআনের আলো পাই না।
তুমি যে জটিলতায় আটকে গেছো,
তুমি নিজেই সেটা তৈরি করেছো —
কারণ ভয় পেয়েছো সরাসরি পড়ার থেকে।
তুমি ভয় পেয়েছো,
কুরআনের শব্দের সামনে দাঁড়ানোর থেকে,
কারণ তুমি জানো, কুরআন তোমাকে প্রশ্ন করবে—
“তুমি কেন এতদিন আমাকে ছেড়ে গেছ?”
এই ভয় তোমার মুক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু।
তুমি ভাবো—"আমি সাধারণ একজন গরীব, অশিক্ষিত, আরবি জানি না…"
কিন্তু আল্লাহ বলেছেন:
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِيٓ إِلَيْهِمْ
“আমরা তোমার পূর্বেও শুধু সাধারণ মানুষকে পৈগাম দিয়ে পাঠিয়েছি।” (সূরা আল-আনআম ৬:১২৫)
তাই ভয় পেও না!
কুরআন পড়তে শুরু করো, ভাবো, প্রশ্ন করো,
আল্লাহ সাহায্য করবে তোমায়।
বন্ধুগণ!
তোমাদের সামনে অনেক ফিল্টার!
তোমাদের মুক্তি চুরি করতে চায় কেউ কেউ —
“এই নিয়ম মেনে না চললে তুমি ঈমানদার নও।”
“এই ফতোয়াটা না মানলে তুমি গুমরাহ।”
“তুমি আমার শায়েখের হুকুম না মানলে কাফের।”
তুমি কি বুঝো?
এগুলো মানব তৈরি শর্তাবলী,
যা তোমার কুরআনের সাথে সম্পর্ককে কাঁটাতারে পরিণত করে!
তোমার কাছে কুরআন সরাসরি আল্লাহর আহ্বান!
মানুষের বানানো ফতোয়া, বিধি বিধান, মতামত, তোমাকে পিছনে ফেলে রাখে। তোমাকে কুরআন থেকে দুরে সরিয়ে রাখে
হাদিস, ফিকাহ, শায়েখদের বই সহায়ক হলে হতেও পারে—
কিন্তু যদি তুমি এগুলোকে আসল দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাক,
তাহলে তুমি তোমার মুক্তির পথ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছো।
তুমি আজ যদি সরাসরি কুরআনের সাথে মিলিত হও,
তাহলে তোমার হৃদয় খুলে যাবে,
জীবন বদলে যাবে,
আর কেউ তোমার মুক্তি আটকাতে পারবে না!
বন্ধুগণ!
আজ এই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলো।
দরজা খুলে দাও।
প্রথম ধাপ হোক—
প্রতিদিন ১ পৃষ্ঠা কুরআন পড়া।
অর্থসহ।
যারা ভয় পায়, তাদের জন্য কুরআন বলেছে:
فَٱلَّذِينَ هَامُوا۟ فِىۢ رَبِّهِمْ يَسْتَبْشِرُونَ
“যারা তাদের রবের পথে এগিয়ে যায়, তারা সুখবর পায়।” (সূরা আল-ফুরকান ২৫:৩০)
বন্ধুগণ!
তুমি আজকের দিনে কোথায় দাঁড়িয়েছো?
একটা দাসত্বের জালে,
যা তোমার হৃদয়কে বন্ধক বানিয়ে রেখেছে।
এই বন্ধক কোনো শারীরিক জুলুম নয়—
সে হলো মন ও আত্মার বন্দিত্ব।
যখন তুমি কুরআনের সরাসরি আলো থেকে বঞ্চিত থাকো,
তখন তোমার মুক্তি বন্ধ হয়ে যায়,
তুমি হয়ে ওঠো মানুষের বানানো বিধির অধীনস্থ।
তুমি যদি সত্যিই মুক্ত হতে চাও—
প্রথম শর্ত হলো তোমার অন্তর থেকে এই দাসত্বের শিকল কেটে ফেলা।
দাসত্বের চিহ্নগুলো কী?
১। যখন তুমি কুরআন পড়তে গেলে প্রথমে ভয় পাবে—
“আমার আরবি জানি না, বুঝব না”।
২। যখন কেউ বললেই মানে নেবে—
“আমার শায়েখ বলেছেন তাই”।
৩। যখন নিজের চিন্তার ঝুলিতে আল্লাহর সরাসরি বাক্য রাখবে না।
বন্ধুগণ!
এই দাসত্ব তোমাকে বিবেকহীন পশুতে পরিণত করেছে!
তোমার মধ্যে সেই আগুন জ্বলতে পারছে না,
যা সাহাবাদের হৃদয়ে ছিল,
যারা শুধু কুরআনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল।
মুক্তির পথ: সরাসরি কুরআনের আলোতে
কুরআন পড়ো, শুধু পড়ো না—
বুঝো, অনুভব করো, প্রশ্ন করো,
নিজের জীবনে প্রয়োগ করো।
কেউ তোমাকে বলবে না—
“এই সূরা পড়লে এই মাযহাব মানো।”
“এই আয়াতের অর্থ শুধু আমার মত।”
কিন্তু তুমি জানো—
আল্লাহ একমাত্র দিশারী,
তাঁর বাণী সর্বজনীন,
সে তোমাকে মুক্ত করবে।
বন্ধুগণ!
যে দিন তুমি সরাসরি কুরআনের নুরে গোসল করবে,
তুমি অভ্যস্ত হবে সেই আলোতে,
তুমি হয়ে উঠবে বদ্ধমূল দাসত্ব থেকে মুক্ত।
প্রতিদিন অন্তত ১ পৃষ্ঠা কুরআন পড়বে,
পড়ে বুঝবে, ভাববে, অন্যদের শেখাবে।
তুমি হবে সেই আলোর ফেরিওয়ালা,
যে কেবল কথা বলে না, জীবন দিয়ে প্রমাণ করে।
বন্ধুগণ!
আমাদের আজকের উম্মতের একমাত্র মুক্তির চাবি—
কুরআনের সরাসরি অনুসরণ!
মানুষের বানানো শর্তপালা ছেড়ে দিয়ে,
আমরা ফের ফিরে যাবো একমাত্র আল্লাহর কাছে।
কুরআন বলেছে:
قُلْ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٌۭ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَٰحِدٌۭ
“বল, আমি তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র, কেবল আমার ওপর ওহি হয়েছে যে, তোমাদের আল্লাহ এক ও অদিতীয়।” (সূরা আল-কাহফ ১৮:১۱۰)
বন্ধুগণ!
আমাদের বিশ্বাস, আমাদের জীবন, আমাদের মুক্তি—
এসব কুরআনের সরাসরি আলোর ওপর দাঁড়াতে হবে।
আজই এই পথ গ্রহণ করো,
আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হও,
ইনশাআল্লাহ
0 Comments