Subscribe Us

f

“দাড়ির প্যাঁচ ছেড়ে কুরআনের পথে”



 “দাড়ির প্যাঁচ ছেড়ে কুরআনের পথে”

লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ

হে বাহ্যিক চিহ্নের পূজারি!
তুমি কি ভেবেছ দাড়ি আর জুব্বা বেহেশতের চাবি?
তুমি কি ভুলে গেছ—
আল্লাহ আসমান-জমিনের রব, মানুষের পোশাকের দর্জি নন?
তুমি কি শুনোনি আল্লাহ কী বলেছেন?

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও দেহের দিকে তাকান না, বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে তাকান।”
(সহিহ মুসলিম 2564)

তুমি কুরআনের পাতাগুলো বন্ধ করে রেখেছ,
আর নিজের মস্তিষ্ক খুলে দিয়েছ কুসংস্কারের কারিগরের হাতে।

“হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারী থেকে, এবং করেছি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হও। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।”
(সুরা হুজুরাত 49:13)

তাহলে কোথায় দাড়ির কথা?
কোথায় টুপির শর্ত?
কোথায় জুব্বার ফরজ ঘোষণা?
কোথাও নেই—কারণ আল্লাহর দীন বাহ্যিক রূপে নয়, অন্তরের তাকওয়ায়।

আমি ধিক্কার জানাই সেই অন্ধতা ও জাহালতকে,
যেখানে মানুষ কুরআন ছেড়ে ইমান মাপে “দাড়িতে,
যেখানে জিহ্বা দিয়ে গীবত, মিথ্যা, অপবাদ ছড়ায়,
আবার হাতে তসবিহ গুনে, মনে করে—জান্নাত নিশ্চিত!
আল্লাহ বলেছেন,
“মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী, এবং যারা অর্থহীন কথা থেকে বিরত থাকে।”
(সুরা মুমিনুন 23:1-3)

তুমি কি বিনয়ী?
তুমি কি অর্থহীন কথা এড়িয়ে চল?
তুমি কি গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা ছেড়ে দিয়েছ?
নাকি, আমার দাড়ি, টুপি, জুব্বার দৈর্ঘ্য মাপায় ব্যাস্ত হয়ে আছ?
বুঝতে পারছিনা কি বলবো তোমাকে?
কি করে পারলে পীরের হাতে ও শায়েখের হাতে বিবেককে বিক্রি করতে?

আমার জুব্বা দেখে ব্যস্ত হোও না,
তোমার জিব্বা (জিহ্বা) ঠিক করো!
তুমি গীবত করছ কিনা দেখো,
তুমি মিথ্যা বলছ কিনা ভাব,
তুমি কি মানুষের প্রতি অবিচার করছ কিনা চিন্তা কর।

আল্লাহ বলেছেন,
“গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো এটিকে ঘৃণা কর।”
(সুরা হুজুরাত 49:12)

তুমি কমেন্ট করেছ, কুরআনে নাই তাহলে আমি দাড়ি রেখেছি কেন? আমি পান্জাবী পরেছি কেন?।
শোন আমার কথা-
আমি দাড়ি রেখেছি সৌন্দর্যের জন্য,
আমি পান্জাবী পরে আরামবোধ করি,
আমি টুপি পড়ি ভালো লাগে তাই।

আমি জানি আল্লাহ আমাকে বাধ্য করেননি।
আমি জানি এটা শরিয়ত নয়।
আমি জানি বিধান দাতা একমাত্র আল্লাহ।

তুমি এগুলো ফরজ ওয়াজীব সুন্নত বলে চিতকার করছ,
কে দিয়েছে এই বিধান? কে তোমার বিধানদাতা?
মুশরিক তুমি, আল্লাহর বিধানের সাথে শিরক করছ।
এটা কুরআনের চোখে নিকৃষ্ট অপরাধ!
আল্লাহ বলেন,
ইন্নাশ শিরকা লা জুলমুন আজিম।

হে বাহ্যিক সাজসজ্জার ফেরিওয়ালা!
তুমি দাড়ির প্যাঁচে আটকে কুরআনের সাগর ফেলে দিয়েছ।
তুমি টুপির ছায়ায় বসে থেকেও কিয়ামতের দিনের ছায়া ভুলে গেছ।
তুমি জুব্বার কাপড়ে জড়িয়ে থেকেও হৃদয়ের কালিমা ঢাকতে পারো না।

“সে দিন সম্পদ ও সন্তান কোন কাজে আসবে না,
শুধু সেই ব্যক্তি সফল হবে যে আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আসবে।”
(সুরা শু’আরা 26:88-89)

দাড়ি রাখা ব্যক্তিগত রুচি হতে পারে,
কিন্তু তাকওয়া ছাড়া দাড়ি হবে কেবল মুখের লোম,
যার কোনো মূল্য নেই রব্বুল আলামিনের দরবারে।

“এটি সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, পরহেজগারদের জন্য পথপ্রদর্শক।”
(সুরা বাকারা 2:2)

হে ভণ্ড সাধক!
কুরআন পড়ো না, বোঝো না, কিন্তু অন্যকে যাচাই করো!
তুমি কুরআন বর্জন করে নিজের মতবাদ চাপাও মানুষের ওপর,
তুমি আল্লাহর হুকুম ছেড়ে মানুষের বানানো নিয়মে গর্ব করো!

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম ও সাধুদের প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে।”
(সুরা তাওবা 9:31)

আল্লাহ তাকওয়ার পথে ডাক দেন—
না টুপির, না দাড়ির, না জুব্বার পথে!

“হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য মদ, জুয়া, মূর্তি, ভাগ্য নির্ধারণকারী শরগুলো অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকো যাতে তোমরা সফল হও।”
(সুরা মায়েদা 5:90)

তুমি কি এসব থেকে দূরে?
নাকি বাহ্যিক পোশাক পরে অন্তরে শয়তানের বীজ লালন করছ?

হে মানুষ!
কুরআনের দিকে ফিরে যাও—
যেখানে আছে সত্য, ন্যায়, তাকওয়া।

“এবং কুরআন অবশ্যই আমি সহজ করেছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, আছে কি কেউ উপদেশ গ্রহণকারী?”
(সুরা ক্বামার 54:17)

দাড়ির প্যাঁচে, টুপির উচ্চতায়, জুব্বার দৈর্ঘ্যে নয়—
পথ খুঁজো আল্লাহর বাণীতে!

“যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, তার জীবন সংকীর্ণ হবে, এবং কিয়ামতের দিনে আমি তাকে অন্ধ করে তুলব।”
(সুরা ত্বা-হা 20:124)

হে মানুষ!
আজ যদি কুরআন ছেড়ে বাহ্যিকতায় ব্যস্ত থাকো,
আগামীকাল অন্ধ হয়ে উঠবে হিসাবের ময়দানে—
যেখানে জুব্বা-দাড়ি-টুপি কোনো কাজে আসবে না,
শুধু অন্তরের তাকওয়া আর সৎকর্ম বাঁচাবে!

হে দাড়ির আকার পরিমাপক,
হে জুব্বার কাপড়ের গুনগুনে সমালোচক,
তুমি কি আল্লাহর কিতাবের এক আয়াতও মুখস্থ করেছ?
তুমি কি অন্তত একবার কুরআন খতম করে বুঝেছ?

“তারা কি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরে তালা মারা আছে?”
(সুরা মুহাম্মাদ 47:24)

তোমার অন্তরে তালা ঝুলছে—
কারণ তুমি বাহ্যিক সাজের চাবি হাতে রেখেছ,
কিন্তু সত্যের দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছ।

তুমি দাড়ি রেখেছ—ভালো কথা।
কিন্তু দাড়ি যদি অহংকারের টুপি হয়ে দাঁড়ায়,
তাহলে তা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন।

“পৃথিবীতে অহংকার করে চলো না। নিশ্চয়ই তুমি মাটি চিরে ফেলতে পারবে না এবং পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে না।”
(সুরা ইসরা 17:37)

তুমি কি মনে করো দাড়ি রেখেই তুমি আল্লাহর কাছে মহান হয়ে গেলে?
তুমি কি বুঝো না—
অন্তরের পচন ঢাকতে বাহ্যিক লোম কোনো ঢাল নয়!

তুমি রোজ সকালে টুপি মাথায় চাপাও,
কিন্তু প্রতিবেশীর ক্ষুধার খবর জানো না।
তুমি জুব্বা পরে ইফতারির আয়োজন করো,
কিন্তু মজদুরের মজুরি আটকে রাখো।

“তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছ, যে দ্বীনের প্রতি মিথ্যা আচরণ করে?
সে-ই তো ইয়াতিমকে তাড়িয়ে দেয়,
এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে না।”
(সুরা মাউন 107:1-3)

তুমি সেই লোক—
যে বাহ্যিক পোশাকের ফিতা আঁটসাঁট করে,
কিন্তু অন্তরের ন্যায়বিচার খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

হে মানুষ!
তুমি কি আল্লাহর আইনকে ছেড়ে মানুষের বানানো হুকুম মানছ না?

“যে কিছুর মাধ্যমে আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন তা অনুযায়ী বিচার না করে, তারা-ই কাফের।”
(সুরা মায়েদা 5:44)

তুমি দাড়ি-জুব্বা-টুপি পরা শেখা মৌলভীর কথা মানো,
কিন্তু কুরআনের স্পষ্ট বাণী উপেক্ষা করো।
তুমি মানুষের বানানো ফতোয়া আঁকড়ে ধরো,
কিন্তু রব্বুল আলামিনের আয়াত উপেক্ষা করো।

আল্লাহ বলেন—
“তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম।”
(সুরা আ’রাফ 7:26)

তুমি কি তাকওয়ার পোশাক পরেছ?
নাকি রঙিন কাপড় আর লম্বা দাড়িকে ঈমানের মাপকাঠি বানিয়েছ?
তুমি কি অন্যের গীবত বন্ধ করেছ?
তুমি কি মিথ্যা ত্যাগ করেছ?
তুমি কি সততা বরণ করেছ?

সেদিন দাড়ি থাকবে, টুপি থাকবে, জুব্বা থাকবে—
কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে লাগবে না!

“যেদিন ধনসম্পদ ও সন্তান কিছুই উপকারে আসবে না,
শুধু তাকওয়াবান হৃদয় নিয়ে আসা ব্যক্তি ছাড়া।”
(সুরা শু’আরা 26:88-89)

হে মানুষ!
আজই অন্তরের তাকওয়া গড়ে তোলো—
যাতে সেদিন লজ্জায় মুখ ঢাকতে না হয়!

হে আমার শত্রু নয়, ভাই!
তুমি বাহ্যিকতার খাঁচা ছেড়ে সত্যের মুক্ত আকাশে এসো।
“এটি সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি তাকওয়াবানদের জন্য পথপ্রদর্শক।”
(সুরা বাকারা 2:2)

তুমি কুরআন খুলো, পড়ো, বোঝো, মানো।
তুমি দাড়ি রাখো—রাখো, কিন্তু তাকওয়া রেখো আগে।
তুমি টুপি পরো—পরো, কিন্তু ন্যায়বিচার পরো অন্তরে।
তুমি জুব্বা পরো—পরো, কিন্তু সততা মুড়ে নাও হৃদয়ে।

আমি বিদ্রোহ করছি তোমার বিরুদ্ধে নয়,
তোমার অন্তরের অন্ধতার বিরুদ্ধে!
আমি তলোয়ার তুলেছি শয়তানের ফিসফিসানি কেটে ফেলার জন্য,
যে তোমাকে বাহ্যিক সাজের আড়ালে বন্দী করেছে।

“শয়তান তোমাদের দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়;
অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা ও প্রাচুর্যের প্রতিশ্রুতি দেন।”
(সুরা বাকারা 2:268)

শয়তান তোমাকে সাজিয়েছে, কিন্তু ঈমান কেড়ে নিয়েছে।
তুমি কি বুঝবে না?

তুমি যদি আজ বাহ্যিকতার মোহে অন্ধ থাকো,
আগামীকাল আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে—
আর সেদিন অজুহাত কাজ করবে না।

“সে দিন মানুষকে তাদের কর্ম দেখানো হবে,
যার ওজন কণামাত্র হলেও।”
(সুরা যিলযাল 99:7-8)

তুমি কুরআনের আইন ছেড়ে বাহ্যিক সাজ গুনেছ—
এটা কী জবাব দেবে?

হে বাহ্যিকতার পূজারি!
আমি বলি—দাড়ির প্যাঁচ ছেড়ে দাও, জুব্বার ছায়া থেকে বের হও,
টুপির ভেতরের মাথা খুলো কুরআনের আলোয়!
তুমি গীবত ছাড়ো, মিথ্যা ছাড়ো,
ন্যায়বিচার গ্রহণ করো, তাকওয়া ধারণ করো।

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন সম্পূর্ণ করলাম,
তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম,
এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”
(সুরা মায়েদা 5:3)

দ্বীন সম্পূর্ণ—আর বাহ্যিক সাজ তার কেন্দ্র নয়।
কেন্দ্র তাকওয়া, সত্য, সৎকর্ম, ন্যায়।

তুমি যদি কুরআনের পথে না ফেরো—
তাহলে তুমি কুরআনের সতর্কবার্তায় পড়বে:

“এবং যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে,
তার জন্য সংকীর্ণ জীবন,
এবং কিয়ামতের দিনে আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাব।”
(সুরা ত্বা-হা 20:124)

আমি তোমাকে সতর্ক করলাম—
এবার পথ বেছে নাও!

হে দাড়ির প্যাঁচে আটকে থাকা মানুষ,
তুমি যদি সত্যিই মুসলিম হতে চাও—
তাহলে কুরআনের আয়নায় নিজেকে দেখো,
বাহ্যিক আয়নায় নয়।
তুমি যদি আল্লাহর কাছে সম্মানিত হতে চাও—
তাহলে তাকওয়াকে অলংকার বানাও,
জুব্বা নয়।
তুমি যদি জান্নাত চাও—
তাহলে গীবত ত্যাগ করো,
মিথ্যা ত্যাগ করো,
ন্যায়বিচার গ্রহণ করো,
সৎকর্মে জীবন সাজাও।

এটাই শক্তি—
এটাই মুক্তি—
এটাই কুরআনের ডাক।

Post a Comment

0 Comments