Subscribe Us

f

কোরআন বিশ্বাসীদের ঐক্যের আহবান

 


কোরআন বিশ্বাসীদের ঐক্যের আহবান

লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَسَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَسَلَامٌ عَلَى مُحَمَّدٍ الَّذِي جَاءَ بِالْقُرْآنِ مُهَيْمِنًا
(অর্থ: হে আমার রব! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে। আর আমি তোমার কাছেই আশ্রয় চাই, হে আমার রব, যেন তারা আমার কাছে উপস্থিত না হয়। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। সালাম তাদের উপর, যারা হিদায়াত অনুসরণ করেছে; আর সালাম মুহাম্মদের উপর, যিনি কুরআনকে মহিমান্বিত করে এনেছেন।)

বন্ধুগণ!
আজ আমি যে কথাগুলো বলবো, তা কারও দলকে খুশি করার জন্য নয়। আজকের এই কথা কারও মাজারের ধূপকাঠির ধোঁয়া নয়, কারও সনদের লাল কালিতে লেখা দলিল নয়। আজ আমি যে কথা বলবো — তা কুরআনের ধ্বনি, কুরআনের আহ্বান, কুরআনের দাবী।
আজ আমি যে বক্তব্য দিব সেটা আমার বক্তব্য নয়, এটা তোমারি বক্তব্য- আমি শুধু কন্ঠ দিচ্ছি।
এটা তোমার মনের কথা- আমি ভাষায় প্রকাস করছি। এটা সবার চাওয়া আমি শুধু ঘোষকমাত্র।

চলুন বন্ধুগণ! শুরু করি।
আমরা কুরআনের সঙ্গীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। যারা কুরআনকে একমাত্র হিদায়াত বলি, আমরা নিজেরাই একা হয়ে গেছি। সত্য মেনে নিয়েও আমরা নিঃসঙ্গ। আর এই নিঃসঙ্গতাই আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। যখন তোমরা একা থাকো — সমাজ তোমাকে চাপা দিয়ে রাখে। পরিবার তোমাকে হেয় করে। মসজিদের ইমাম তোমাকে তিরস্কার করে। আর যারা দল বেঁধে সত্য প্রচার করতে পারে, তারা শক্তি পায়। এজন্য তোমরা ঐক্য গড়ে তোলো, সঙ্ঘবদ্ধ হও, বিশেষ করে বলছি - যখন সসঙ্ঘবদ্ধ হবে আমাকেও সাথে নিও। আমি হতে চাই কুরআনের সঙ্গী।

বন্ধুগণ!
একার সত্যে কণ্ঠ কেঁপে ওঠে —
কিন্তু ঐক্যের কণ্ঠ পর্বতও কাঁপিয়ে দেয়! কুরআন আমাদের ডাক দিয়েছে:
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।” (আলে ইমরান ৩:১০৩)

কোনো হাদিসের রশি নয়, কোনো মাযহাবের রশি নয়, কোনো পীরের পাগড়ির ফিতা নয় — আল্লাহর রশি মানে কুরআন!

বন্ধুগণ!
আমরা কি জানি না, কেন উম্মাহ আজ দুর্বল? — কারণ আমরা শত শত দলে বিভক্ত। কেউ বলে আমি আহলে হাদিস, কেউ বলে আমি হানাফি, কেউ বলে আমি শাফেয়ি, কেউ বলে আমি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, কেউ বলে আমি সুফি, কেউ বলে আমি সালাফি। অথচ আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا
“তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হলো ও মতভেদে পড়লো।” (আলে ইমরান ৩:১০৫)

তাহলে, যারা আজ কুরআনকে একমাত্র হিদায়াত মেনে ঐক্যের ডাক দেয়, তারা-ই আসলে নবীর আসল উত্তরসূরী।

বন্ধুগণ!
ভুলে গেলে চলবেনা! মনোযোগ দাও।।
ঐক্যের মানে দল বানানো নয়।
ঐক্যের মানে হলো — কুরআনের নিচে মাথা নত করা, মানুষের নিচে নয়। কুরআনকে সালিশ বানানো, আলেমদের নয়। আমাদের ঐক্য হবে নীতির উপর, ব্যক্তির উপর নয়। আমাদের মিলন হবে হকের উপর, দলের নামে নয়।

বন্ধুগণ!
আজ আমি সেই ভাইবোনদের সামনে আহ্বান ছুঁড়ে দিচ্ছি যারা কুরআনের রশি আকরে ধরেছ এবং যারা ধরতে চাও—
এসো, আমরা একত্রিত হই! কিন্তু প্রশ্ন হলো — কীভাবে?

১. একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য কী?
আমরা কোনো নতুন মাযহাব বানাতে চাই না। আমরা কোনো দলীয় লেবেল চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য —
• কুরআনের হিদায়াতকে কেন্দ্র করে একে অপরকে সহায়তা করা।
• সত্যের পথে দাঁড়িয়ে যারা নির্যাতিত, তাদের আশ্রয় দেওয়া।
• দাওয়াতের শক্তি বাড়ানো — এক কণ্ঠ নয়, বহু কণ্ঠ।
• নিজেদের ঈমানকে দৃঢ় করা — কারণ একা থাকলে দুর্বলতা আসে।

💠 . আমাদের করণীয় কী হবে?
১. কুরআনকে একমাত্র মানদণ্ড করা
কোনো ব্যাক্তির ব্যাখ্যা, কোনো ফিকহি মতবাদ নয় — সরাসরি কুরআনের আয়াতের আলোয় যাচাই। মতভেদ হলে বলবো — “চল কুরআনের সামনে দাঁড়াই!”

২. খোলা শূরা ও পরামর্শ সভা গঠন
আমরা গোপন বৈঠক নয় — উন্মুক্ত আলোচনা করবো। যে যার অবস্থান থেকে যুক্তি দেবে, কুরআনের আলোয় বিচার হবে। নেতৃত্ব হবে ঘুরন্ত — ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়।

৩. দাওয়াত ও মিডিয়া কাজ
আমরা কুরআনের মেসেজ পৌঁছে দেবো বই, পুস্তিকা, ইউটিউব, ফেসবুক, সরাসরি আলাপ — সব মাধ্যমে। কেউ লিখতে জানে, কেউ ভিডিও বানাতে জানে, কেউ যুক্তি দিতে জানে — সবার দক্ষতা কাজে লাগবে।

৪. সহযোগিতা নেটওয়ার্ক
যারা সত্য বলার কারণে চাকরি হারিয়েছে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে — তাদের পাশে দাঁড়ানো। অর্থ, আশ্রয়, পরামর্শ — সব দিকেই সহায়তার হাত বারিয়ে দেয়া।

৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
নিয়মিত কুরআন স্টাডি সার্কেল, আরবি শেখা, কুরআনিক লজিক শিখা।

বন্ধুগণ!
আমরা যদি ছড়িয়ে থাকি — আমাদের কণ্ঠ ডুবে যাবে। কিন্তু আমরা যদি একত্রিত হই — আমাদের কণ্ঠে ঢেউ উঠবে। ঢেউ যখন সমুদ্র হয়, তখন জাহাজও ডুবিয়ে দেয়।

বন্ধুগণ!
তুমি যদি সত্যি কুরআনের অনুসারী হও — তবে আজ সিদ্ধান্ত নাও! আরেকটু সময় চাইলে শয়তান তোমাকে দেরিতে ফেলবে। আল্লাহ বলেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
“তোমরা ন্যায় ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর।” (মায়িদা ৫:২)
আমাদের ঐক্য কোনো বিলাসিতা নয় — এটি ফরজ।


বন্ধুগণ!
তোমরা যদি কুরআনকে আঁকড়ে ধরে একত্রিত হতে চাও — শয়তান তোমাদের শত্রু হয়ে উঠবে। সমাজ তোমাদের দোষ দেবে, আলেমরা তোমাদের বিপক্ষে ফতোয়া দেবে, পরিবার বলবে — “তুমি গোমরাহ!” এটাই হবে তোমাদের প্রথম পরীক্ষা।

👉 বন্ধুগন তোমরা ঐক্যের পথে ৪ ধরণের শত্রু প্রায়ই দেখতে পাবে। তারা তোমাকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইবে।

১. ঐক্যের পথে সবচেয়ে বড় শত্রু — বিভক্তির প্রলোভন
বন্ধুগণ!
শয়তানের প্রথম কৌশল হবে বিভক্তি। সে বলবে — “তুমি কুরআন বোঝো না, আমি বুঝি।”
সে বলবে — “আমার ব্যাখ্যাই আসল।”
সে বলবে — “ওরা ভিন্ন মতের, ওদের বাদ দাও।”
কিন্তু কুরআন কী বলে?
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
“যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করেছে এবং দলে বিভক্ত হয়েছে — তুমি (হে নবী) তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখো না।” (আনআ’আম ৬:১৫৯)

তাহলে, বন্ধুগণ, যে দলীয় লেবেল নিয়ে লড়াই করে — সে নবীর অনুসারী নয়, সে শয়তানের খেলায় লিপ্ত।

২. ঐক্যের পথে দ্বিতীয় শত্রু — ব্যক্তিপূজা
বন্ধুগণ!
তুমি যদি কাউকে নেতা বানাও, সে মানুষ। মানুষ ভুল করে। মানুষ অহংকারী হয়। মানুষ ক্ষমতার নেশায় পড়ে। তাই কুরআন আমাদের মানুষকে নয়, নীতিকে অনুসরণ করতে বলেছে।
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ
“তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল হয়েছে তা অনুসরণ কর; তাঁর বাইরে অন্য অভিভাবক অনুসরণ করো না।” (আল-আ’রাফ ৭:৩)

আমাদের ঐক্য হবে কুরআনের ছায়ায়, কারও ব্যক্তিত্বের ছায়ায় নয়।

৩. ঐক্যের পথে তৃতীয় শত্রু — নামের মোহ
বন্ধুগণ!
নামই আজ উম্মাহকে বিভক্ত করেছে। আহলে হাদিস, আহলে কুরআন, সালাফি, সুন্নি, শিয়া — সব নামই আজ বিভেদের অস্ত্র। কুরআন আমাদের কোনো নাম দেয়নি — কুরআন শুধু বলেছে “মুসলিম”
هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ
“তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।” (হাজ্জ ২২:৭৮)
তাহলে নতুন নাম নয় — শুধু মুসলিম পরিচয়েই ঐক্য!

৪. ঐক্যের পথে চতুর্থ শত্রু — ভয় ও নিঃসঙ্গতা
বন্ধুগণ!
তুমি একা হলে ভয় পাবে। সমাজ বলবে — “তুমি গোমরাহ।” পরিবার বলবে — “তুমি নতুন ফিরকা।” ইমাম বলবে — “তুমি মুরতাদ।” তখন যদি তোমার পাশে কেউ না থাকে — তুমি ভেঙে পড়বে।
তাই কুরআনের সঙ্গীদের একত্রিত হওয়া অপরিহার্য, যাতে একে অপরকে শক্তি দেওয়া যায়।

আমরা কীভাবে এই বাধা পেরোব?
বন্ধুগণ! এই বাধা ৪টি উপায়ে পার হওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
১. কুরআনকেন্দ্রিক শূরা গঠন
• নিয়মিত মিটআপ: অনলাইন/অফলাইন আলোচনা।
• সিদ্ধান্ত কুরআনের আলোকে হবে — কেউ এককভাবে সিদ্ধান্ত দেবে না।

২. পারস্পরিক সহায়তা নেটওয়ার্ক
• যে ভাই চাকরি হারিয়েছে, তাকে সহযোগিতা।
• যে বোন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, তাকে সমর্থন।
• আর্থিক স্বচ্ছতা — সবাই জানবে কোথায় কী ব্যয় হচ্ছে।

৩. দাওয়াতের মিডিয়া যুদ্ধ
• বই, ছোট লিফলেট, ভিডিও বানানো।
• সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের কন্টেন্ট শেয়ার করা।
• সম্মিলিতভাবে সত্যের সুর ছড়িয়ে দেওয়া।

৪. অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি
• নিজের অহংকার দূর করা।
• ভিন্ন মত থাকলেও কুরআনের আলোয় যাচাই করা।
• পরস্পরের ভুল ধরতে গিয়ে গালি না দেওয়া — বরং কুরআনের আয়াত দিয়ে বুঝানো।

বন্ধুগণ! এখনি সময় এই কাজের।
আমরা যদি এখন একত্রিত না হই — কুরআনের সঙ্গীরা আরও ছড়িয়ে যাবে। সত্যের আওয়াজ হারিয়ে যাবে। মিথ্যার স্রোতে কুরআনের ডাক ডুবে যাবে।

আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন:
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।” (৩:১০৩)
এ আয়াত শুধু পড়ার জন্য নয় — বাস্তবায়নের জন্য!

শেষ আহ্বান
বন্ধুগণ!
আজ সিদ্ধান্ত নাও — আমরা কুরআনের সঙ্গীদের পরিবার হবো।
কেউ বলবে আমরা কম সংখ্যক। কুরআন বলছে —
وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
“আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞ।” (সাবা ৩৪:১৩)

অল্প জনের দলই নবীর আসল উত্তরসূরী।

বন্ধুগণ!
আমরা নতুন ফিরকা বানাতে আসিনি। আমরা পুরনো ইসলাম ফিরিয়ে আনতে এসেছি — সেই ইসলাম, যা ছিল কেবল কুরআনের ইসলাম

আজ থেকে আমাদের নাম কেবল “মুসলিম”। আমাদের নেতা কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। আমাদের আইন কেবল কুরআন

আমরা এক হবো —
শক্ত হবো —
আর কুরআনের আলোয় পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ করবো!

উপসংহার
এটাই কুরআনের সঙ্গীদের ঐক্যের রূপরেখা।
• দলীয় লেবেল ছাড়াই ঐক্য।
• কুরআনকেন্দ্রিক শূরা।
• পারস্পরিক সহায়তা।
• দাওয়াতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এটাই হিজরতের নতুন ধাপ — একা থেকে একত্রিত হওয়া।


Post a Comment

0 Comments