ইসলামে দলীয় নামকরণের ফিতনা ও বিভাজনের পরিণতি
(মাহাতাব আকন্দ)
সম্মানিত ভাই,
ইসলাম আমাদের এমন একটি পরিচয় দিয়েছে যা পৃথিবীর অন্য যেকোনো পরিচয় থেকে শ্রেষ্ঠ, সম্মানজনক এবং ঐশী। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, হুয়া সাম্মাকুমুল মুসলিমিন “তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।” (সূরা হজ্ব ২২:৭৮)। এই পরিচয়ে রয়েছে ঐক্যের আহ্বান, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং অহঙ্কারহীন একত্ববোধ। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আজ মুসলিম সমাজে এই পরিচয়ের পরিবর্তে অন্য নামগুলো ছড়িয়ে পড়েছে—কেউ নিজেকে বলে হানাফি, কেউ সালাফি, কেউ আহলে হাদীস, কেউ আবার নিজেকে সুন্নি, শিয়া, মারকাযী ইত্যাদি পরিচয়ে অনেক খুশি। অথচ মহান প্রভু আমাদেরকে কেবল একটিই পরিচয় দিয়েছেন—“মুসলিম”।
বন্ধুগণ,
নবী মুহাম্মদ ﷺ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন তিনি কোনো দল, মাজহাব বা ইমামের নাম প্রচার করেননি। তিনি বলেননি, “আমি হানাফি,” “আমি সালাফি,” কিংবা “আমি আহলে হাদীস”। বরং তিনি সোজাসুজি বললেন, “আমি মুসলিম।” তাঁর সাহাবাগণও এভাবেই নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। সাহাবিদের কেউ বলেননি “আমি শাফি,” “আমি হাম্বলি,” কিংবা “আমি আহলে হাদীস।” তাঁরা সবাই ছিলেন আল্লাহর বান্দা, রাসূলের অনুসারী, এবং মুসলিম পরিচয়ে গর্বিত।
বন্ধুগণ,
ইসলামের প্রথম যুগে কোনো দলীয় বিভক্তি ছিল না। ইসলাম একটি ঐক্যের নাম, একটি ভ্রাতৃত্বের নাম। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মানুষের চিন্তার ভিন্নতা, ব্যাখ্যার পার্থক্য, রাজনৈতিক চাপ ও ভূগোলগত প্রভাব মুসলিম সমাজে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে। এই মতপার্থক্য থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন মাজহাব — যেমন হানাফি, শাফি, মালেকি, হাম্বলি। এগুলো মূলত কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যায় পার্থক্য। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ এই মাজহাবগুলোকেই নিজের পরিচয় বানিয়ে ফেলেছে। কেউ এখন বলে, “আমি হানাফি মুসলিম”— অথচ ইসলাম এমন কোনো দ্বৈত পরিচয়কে অনুমোদন দেয়নি।
বন্ধুগণ,
এই বিভক্তির ফল কতটা ভয়াবহ তা আমরা ইতিহাসে বারবার দেখেছি। আমরা দেখি, বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা কেবল নামের কারণে একে অপরকে অপমান করে, ঘৃণা করে, এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে। আজও অনেকে বলে, “তুমি হানাফি হলে আমার মসজিদে ইমামতি করতে পারো না,” “তুমি সালাফি হলে আমার জানাযায় আসো না।” এসব দৃষ্টান্ত এই কথার প্রমাণ যে দলীয় নামকরণ ইসলামে এক চরম ফিতনা ও বিভাজনের সূচনা করেছে।
বন্ধুগণ,
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কুরআনে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন:
"وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا"
“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে।”
— (সূরা রূম ৩০:৩১-৩২)
এই আয়াতে আল্লাহ এমন লোকদেরকে ‘মুশরিকদের’ সাদৃশ্য দিয়েছেন যারা দীনকে ভাগ করে দিচ্ছে—এটা কি কম সতর্কবার্তা? দলীয় নাম, বিভক্ত দল—এসব আল্লাহর কাছে কতটা অপছন্দনীয়, তা এই আয়াতেই স্পষ্ট।
বন্ধুগণ,
নবী করিম ﷺ-ও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে তাঁর উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। তিনি বলেন:
“আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩টি দলে, তার মধ্যে একটিই জান্নাতে যাবে।”
সাহাবারা বললেন, “ওই জান্নাতি দল কোনটি?”
নবী বললেন, “যারা আমার এবং আমার সাহাবীদের পথ অনুসরণ করবে।”
— (তিরমিজি: ২৬৪১)
দেখুন, নবী কোনো নাম বলেননি, কোনো দলীয় পরিচয় দেননি। তিনি বলেননি, “হানাফিরা বাঁচবে,” “সালাফিরা জান্নাতে যাবে।” বরং তিনি একটি পথের কথা বলেছেন—"আমার এবং আমার সাহাবীদের পথ।” অর্থাৎ, পরিচয়ে নয়, আমলে পরিচয় দিতে হবে। নবী এবং সাহাবাদের পথ ধরতে হবে। নবী এবং সাহাবাদের পথ হলো ইসলাম।
বন্ধুগণ,
এখানে প্রশ্ন জাগে—নবী কি সালাফি ছিলেন? সাহাবারা কি আহলে হাদীস ছিলেন? তারা কি কোনো মাজহাবের অনুসারী ছিলেন? না, তারা মুসলিম ছিলেন। তারা ছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী। তাই আজ যদি কেউ নিজেকে “মুসলিম” না বলে নিজেকে “সালাফি” বা “হানাফি” বলে পরিচয় দেয়, তবে সে কীভাবে সাহাবীদের পথ অনুসরণ করছে?
আপনি বলছেন, সালাফী নামটি পুর্ববর্তী অর্থ বুঝায়।
বন্ধুগণ,
এই দলীয় নামকরণ কেবল নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিণতি ভয়াবহ। এটি উম্মাহকে বিভক্ত করে ফেলে। এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাফির, বিদআতী, মুশরিক, বা দলচ্যুত বলে গালি দেয়। কেউ কারো জানাযায় যায় না, কেউ কারো ইমামতিতে নামাজ পড়ে না, কেউ কাউকে সালাম দেয় না—এসবের শিকড় রয়েছে সেই দলীয় বিভক্তিতে, যার মূল শুরু হয় নাম থেকে।
বন্ধুগণ,
আল্লাহ বলেছেন:
"তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জু অর্থাত আল্লাহর কিতাব আকড়ে ধরে থাকো, বিভক্ত হয়ো না।"
এটি সরাসরি নির্দেশ, কোনো পরামর্শ নয়। ইসলামে বিভক্তি নিষিদ্ধ, আর ঐক্য ফরজ। কিন্তু আমরা আজ ঠিক উল্টোটা করছি—ঐক্যের জায়গায় বিভাজন, সহনশীলতার জায়গায় বিদ্বেষ, এবং ইসলামের নামেই বিভক্তির সংস্কৃতি চালু করেছি।
বন্ধুগণ,
ইসলামের দৃষ্টিতে হকপন্থী হওয়ার মানদণ্ড কোন দল নয়, বরং কুরআনের ও ওপর প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। যার কথা, কাজ, আকিদা ও আমল কুরআন ভিত্তিক হয় —সে-ই হকপন্থী। নাম দিয়ে নয়, বরং জীবন দিয়ে সেটা প্রমাণ করতে হয়।
বন্ধুগণ,
আলেমগণের ইজতিহাদ থেকে উপকৃত হওয়া ভিন্ন বিষয়। ফিকহ বোঝার জন্য ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফি, ইমাম আহমাদ—তাঁদের ব্যাখ্যা নেওয়া, তাদের সম্মান করতে বাধা নেই। কিন্তু তাঁদের নামকে নিজের পরিচয় বানিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বন্ধুগণ,
একজন প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় এই যে, সে সত্যকে গ্রহণ করে, তা যে-ই বলুক না কেন। আল্লাহ বলেন:
"الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ"
“তারা বাক্য শোনে এবং তার মধ্য থেকে উত্তমটিকে গ্রহণ করে।”
— (সূরা যুমার: ১৮)
এটাই এক মুসলমানের বৈশিষ্ট্য—সে দল দেখে না, দালিল দেখে। সে নাম দেখে না, সত্য দেখে।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে অনেক মানুষ এমন মানসিকতা পোষণ করে—"আমি হানাফি, তাই আহলে হাদীসের কিছুই শুনবো না", বা "আমি সালাফি, তাই অন্য মাজহাব মানি না।" এই মানসিকতা ইসলামের ঐক্যকে চূর্ণ করে দেয়। ইসলাম কোনো দলকে নয়, সত্যকে অনুসরণ করার শিক্ষা দেয়। মেপে দেখ কুরআন দিয়ে, ওজনে মিললে গ্রহণ কর না মিললে ছুড়ে ফেল।
বন্ধুগণ,
আসুন, আমরা নিজেদের মধ্যে এই বিভাজন, দলবাজি এবং লেবেলিং-এর কুপ্রথা থেকে বের হয়ে আসি। নিজেদের পরিচয়ে শুধু “মুসলিম” হই। মাজহাবের ব্যাখ্যা শুনুন, কিন্তু তাকে ঈমানের শর্ত বানাবেন না।
বন্ধুগণ,
এমন এক সমাজ গড়ুন যেখানে মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি থাকবে না, সালাম বিনিময় বন্ধ থাকবে না, নামাজে কাঁধে কাঁধ মিলবে—নামে নয়, আকিদায় ঐক্য হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হোক আমাদের লক্ষ্য, আর রাসূলের পথ হোক আমাদের দিকনির্দেশনা।
বন্ধুগণ,
আমাদের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তির পরিণাম কতটা ভয়াবহ ছিল, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে অতীতের দিকে—যখন শিয়া-সুন্নি বিভক্তি মুসলিম শক্তিকে দুর্বল করেছিল, যখন এক মুসলমান অপর মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে কেবল ‘নাম’-এর ভিত্তিতে।
বন্ধুগণ,
আন্দালুসে মুসলমানদের পতনের বড় কারণ ছিল দলাদলি, মাজহাবি বিদ্বেষ ও একে অপরকে অবিশ্বাস করা। তুরস্কের উসমানী খেলাফতের পতনের ক্ষেত্রেও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, দলীয় স্বার্থ ও মাজহাবি শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার ভূমিকা রেখেছে। এর পরেও আমরা শিখিনি, বরং সেই ফাঁদে বারবার পা দিচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আজও এই উম্মাহ বিভক্ত—যেখানে এক হানাফি অপর মাজহাবকে তুচ্ছ করে, এক সালাফি অন্যদের বিদআতী বলায় ব্যস্ত। একজন শিয়া সুন্নিদের কাফির মনে করে, আর সুন্নিরা শিয়াদের সাথে কথা বলতেও দ্বিধা করে। এক মসজিদের মুসলমান অন্য মসজিদে নামাজ পড়তে চায় না। এটা কি রাসূল ﷺ-এর উম্মতের চিত্র?
বন্ধুগণ,
এই দলাদলি কেবল আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় ক্ষতির কারণ নয়, বরং এর রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতিও ভয়াবহ। একটি বিভক্ত উম্মাহ কখনোই বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে পারে না। আল্লাহ বলেন:
"وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ"
“তোমরা বিবাদে জড়িয়ো না, তা না হলে তোমরা ব্যর্থ হবে এবং তোমাদের শক্তি চলে যাবে।”
— (সূরা আনফাল: ৪৬)
বন্ধুগণ,
আমরা কি ব্যর্থ হয়ে যাইনি? আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণে মুসলমানরা নির্যাতিত—কখনও ফিলিস্তিনে, কখনও চীনের শিনজিয়াং-এ, কখনও কাশ্মীরে, কখনও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মাঝে। এর পেছনে কেবল বাহ্যিক শত্রু নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিও অন্যতম কারণ।
বন্ধুগণ,
তাহলে সমাধান কোথায়? সমাধান একটাই—ফিরে যেতে হবে ইসলামের মূল পরিচয়ে। সেই পরিচয় যা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন—“মুসলিম”। মাজহাব সম্মান করা যাবে, আলেমদের মত গ্রহণ করা যাবে, তবে পরিচয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না।
বন্ধুগণ,
আসুন কিছু বাস্তব উদাহরণ দেখি। এমন বহু পরিবার রয়েছে যেখানে বাবা হানাফি, ছেলে সালাফি—ফলে ঘরে বিভেদ। এক ভাই আহলে হাদীস, অন্য ভাই তাবলিগ—ফলে ঘরেই দ্বন্দ্ব। কোথায় গেল ইসলামি ভ্রাতৃত্ব?
যে কুরআন বলেছে,
"إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ"
“নিশ্চয়ই মুসলমানরা একে অপরের ভাই।”
— (সূরা হুজুরাত: ১০)
বন্ধুগণ,
আমরা মুসলিম হয়েও নিজেদেরকে গোঁড়া হানাফি, কট্টর সালাফি, চূড়ান্ত আহলে হাদীস বানিয়ে একে অপরকে অপমান করছি, গালি দিচ্ছি, পর্যন্ত কুফরি বলছি। অথচ কুরআন ও হাদীস অনুসরণকারী সকলেই যদি মূল বিশ্বাসে একমত হয়—আল্লাহর একত্ব, রাসূলের নবুয়ত, কুরআনের প্রামাণ্যতা, কিয়ামতের বিশ্বাস—তবে তারা সবাই ভাই ভাই।
বন্ধুগণ,
ইমাম মালিক (রহ.) একবার বলেছিলেন:
"সব মানুষ আমার কথা মানবে এমন দাবি আমি করি না, কিন্তু কেউ আমার কথার বিপরীতে সহীহ হাদীস পেলে, সে যেন সেই হাদীস অনুসরণ করে।"
এই ছিল আলেমদের বিনয়! আজ মানুষ ইমামের চেয়েও বড় হয়ে গেছে—কারও কথা শুনতেই চায় না। নিজ দল বা মাজহাব ব্যতীত সব কিছু বাতিল বলে মনে করে। এটা কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা নয়।
বন্ধুগণ,
রাসূল ﷺ-এর সময় কোনো দল ছিল না। সাহাবীদের মধ্যে পারস্পরিক মতভেদ ছিল, কিন্তু সেটা ছিল শ্রদ্ধাবোধ ও একত্ববোধের সাথে। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেননি, একে অপরকে দলচ্যুত করেননি। আমরা কেন করছি?
বন্ধুগণ,
আপনার পরিচয় হোক "আমি মুসলিম, কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী"। আপনি যেই ব্যাখ্যা অনুসরণ করেন, তা করুন—কিন্তু সেই ব্যাখ্যাকে দীন নয়, ব্যাখ্যা হিসেবে রাখুন। আপনি শাফি বা হানাফির মত পছন্দ করতে পারেন, কিন্তু আপনি "শাফি মুসলিম" বা "হানাফি মুসলিম" বললে, আপনি নিজের মুসলিম পরিচয়কে গৌণ করে ফেলছেন।
বন্ধুগণ,
আল্লাহ কুরআনে কেবল “মুসলিম” পরিচয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সাহাবারা সেই পরিচয়েই ছিলেন গর্বিত। কেউ বলেননি “আমি আবু বকরী”, “আমি উমরী”, “আমি উসমানী” বা “আলীভক্ত।” তাঁরা ছিলেন মুসলিম, কুরআনের অনুসারী, রাসূলের প্রেমিক।
বন্ধুগণ,
আজ আমাদের নতুন করে এই পরিচয় ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের মসজিদে, মাদরাসায়, পরিবারে, দাওয়াতে, খুতবায় বারবার বলতে হবে—“আমরা মুসলিম”, কোনো দলের না, কোনো নামের না। আমাদের দীন আল্লাহর দেওয়া, নামও আল্লাহর দেওয়া।
বন্ধুগণ,
ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে:
১. দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐক্য গড়ে তোলা।
২. বিভিন্ন মাজহাবকে সম্মান করা, কিন্তু গোঁড়ামি না করা।
৩. ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও উদারতার চর্চা বাড়ানো।
৪. তথ্যভিত্তিক আলোচনা এবং অন্ধ অনুসরণ থেকে দূরে থাকা।
৫. নিজেকে সর্বপ্রথম ও সর্বশেষে ‘মুসলিম’ হিসেবে উপস্থাপন করা।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি সত্যিকার অর্থে উম্মাহর ঐক্য চাই, আল্লাহর সাহায্য চাই, তাহলে দলাদলি ত্যাগ করতে হবে।
যে কুরআন বলেছে,
"إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ"
“নিশ্চয়ই মুসলমানরা একে অপরের ভাই।”
— (সূরা হুজুরাত: ১০)
নবী ﷺ বলেন:
"মুসলমান মুসলমানের ভাই; সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে ছোট করে না।"
— (মুসলিম: ২৫৬৪)
আজ আমরা ভাইয়ের ওপর দল, মত ও মাজহাবের নামে জুলুম করছি। ছোট করছি। অবজ্ঞা করছি। এটা কি রাসূলের উম্মত হওয়ার পরিচয়?
বন্ধুগণ,
আজ আমাদের সমাজে একটা ভুল প্রচলিত আছে—"আমি যদি হানাফি না হই, তবে আমি পথভ্রষ্ট," বা "আমি যদি সালাফি না হই, তবে আমি আহলে সুন্নাত নই।" অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে সত্যের মানদণ্ড হচ্ছে— কুরআন। “কে কুরআন-অনুসরণ করছে?” নাকি যে সে কোন ব্যানারে চলছে।
বন্ধুগণ,
এখন সময় এসেছে—ফিরে আসার। ইসলামের শুদ্ধতম পরিচয়ে ফিরে যাওয়ার। এখন সময় আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ কে গর্বের সাথে ধারণ করার। আমাদের আকাশে, বাতাসে, ঘরে, সমাজে, হাটে-মাঠে এই ঘোষণা ধ্বনিত হোক—"আমি মুসলিম, কেবল মুসলিম!"
বন্ধুগণ,
এই দাওয়াত সহজ নয়। আপনি বললেই সবাই মানবে না। আপনি ‘মুসলিম’ বললেই লোকজন দলবাজি ছাড়বে না। কিন্তু আল্লাহর রাসূলও একাই শুরু করেছিলেন। আপনার দাওয়াত, আপনার আলোচনায় যদি একজনেরও চিন্তার পরিবর্তন হয়—তা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ।
বন্ধুগণ,
চলুন, আমরা এই চেতনা ছড়িয়ে দেই—মসজিদের মিম্বার থেকে, খুতবার ভাষায়, ইউটিউবের ভিডিওতে, সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাসে, পারিবারিক আলোচনায়, স্কুল-কলেজের পাঠে। ইসলাম এক, রাসূল এক, কুরআন এক, নামও হোক এক—“মুসলিম”।
বন্ধুগণ,
আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেদায়তের পথ দেখান, দলাদলি থেকে রক্ষা করেন, সত্য গ্রহণ করার তাওফিক দেন। আমরা যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হই—যারা নবী ﷺ এবং তাঁর সাহাবীদের পথে চলে, পরিচয়ে শুধু “মুসলিম”।
0 Comments