নবী হাদিস লিখতে নিষেধ করলেন কেন? এর ক্ষতি কি?
উত্তর প্রদানে- মাহাতাব আকন্দ
বন্ধুগণ!
কখনো কি ভেবেছো, কেন তোমার প্রিয় নবী সালামুন আলা মুহাম্মদ বারবার বলেছিলেন —
«لَا تَكْتُبُوا عَنِّي، وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ»
"আমার কাছ থেকে কিছু লিখো না। যে কুরআন ছাড়া আমার থেকে কিছু লিখেছে, সে যেন তা মুছে ফেলে।"
📚 (সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যুহদ, হাদিস নং ৩০০৪)
বন্ধুগণ!
এই শব্দগুলো হাওয়ায় উচ্চারিত কোনো কবিতা নয়,
এগুলো এক মহাসমুদ্রের মতো ভারী হুকুম।
যার বুকে আল্লাহর কসম ভাসছে,
যেখানে রয়েছে কুরআনের সম্মান রক্ষার সুর।
বন্ধুগণ!
কিন্তু আফসোস, আমরা কুরআনকে লিখেছি, হিফজ করেছি, মুখস্থ করেছি,
তবুও পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হইনি।
আমরা চাইলাম নবীর মুখের সব কথাও লিপিবদ্ধ করতে,
কিন্তু ভুলে গেলাম —
নবী ﷺ নিজেই তো বলেছিলেন,
«وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»
"যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা বলবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন ঠিক করে নেয়।"
📚 (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইলম, হাদিস নং ১০৭; সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমা, হাদিস নং ৩)
বন্ধুগণ!
তোমরা কি জানো হাদিস লিখতে গিয়ে কি হলো?
মহাদেশ-জোড়া মুসলিম জাতি ভাগ হয়ে গেল,
কারো হাদিস শাফিইর কাছে প্রিয়,
কারো কাছে হানাফির হাদিস বেশি পবিত্র,
কারো কাছে আহলে হাদিসের রেওয়ায়েতই শেষ কথা।
ফলে এক উম্মাহ হয়ে গেল হাজারো দলে,
এক কুরআনের ভিত্তিতে গড়া উম্মাহ হয়ে পড়লো দ্বিধা-বিভক্ত।
বন্ধুগণ!
যখন হাদিস লেখা হলো, তখন হাজারো লোক নিজের মতো করে লিখল,
কেউ লিখল মক্কায় বসে, কেউ লিখল বসরায়, কেউ লিখলো কুফায় বসে, কেউ আবার মিশরে, আবার কেউ দামেস্কে বসে।
তাদের কারো মনের ভেতর ভয় ছিল,
আবার কারো ভেতর ছিল গোঁড়ামি, গোষ্ঠী, মাজহাব ও দল প্রীতি।
ফলে জন্ম নিল বিরাট বিরাট “সাহিহ” আর “দৈফ” এর জাল।
হাজার হাজার কথার মধ্যে কোনটা নবীর, কোনটা নবীর নয় —
এটা নির্ণয় করতে গিয়ে কোরআন-নির্ভর ঈমানী হৃদয়গুলো বিভ্রান্ত হলো।
কোনটা সহীহ আর কোনটা জাল এটা বের করতেই উম্মাহর শেষ হচ্ছে মহা কাল। জাতি কুরবন নিয়ে সামান্য গবেষনা করার সময়ও পাচ্ছেনা।
বন্ধুগণ!
এভাবে হাদিসের নামে লিখতে লিখতে মুসলিম জাতি এমন এক মেঘে ঢেকে গেল,
যেখানে কুরআনের দীপ্তিময় সূর্যও আর দেখা যায় না!
তারা কুরআনের সরল, শাশ্বত আহ্বান ভুলে গিয়ে
শুরু করল “ফেকাহ”, “মাযহাব”, “সনদ”, “মতনের” “ইখতিলাফি” বিতর্ক।
বন্ধুগণ!
একবার ভেবে দেখো, যদি এই সব হাদিস না লিখে
মুখে মুখে শুধু প্রচলিত থাকতো — তাহলে প্রজন্মের মানুষ ভাবতো:
“আমরা জানি, কুরআনই আল্লাহর বাণী।
আর নবী আমাদের সেই কুরআনের জীবন্ত মডেল।
আমরা তার নীতি, তার শিষ্টাচার, তার তাকওয়া গ্রহণ করবো —
কিন্তু লিখিত হাদিসের নামে দলীয় চূড়া গড়ব না।”
তাহলে কি উম্মাহ এভাবে ছিন্নভিন্ন হতো?
তাহলে কি কেউ বলতো — “আমার মাজহাব তোমার থেকে আলাদা!”
তাহলে কি কেউ বলতো — “আমার ইমাম তোমার ইমামের শ্রেষ্ঠ!”
আহা বন্ধুগণ! কুরআনের এক উম্মাহ ভেঙে গিয়ে হাজারো খণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল।
বন্ধুগণ!
আরবের এক মরুভূমির প্রান্তে যখন নবীর নিকট হাদিস লিখে রাখার অনুমতি চেয়েছিলে তখন নবী এর অনুমতি দেননি। বরং তিনি বলেছিন
«لَا تَكْتُبُوا عَنِّي…»
"আমার কাছ থেকে কিছু লিখো না…"
📚 (সুনান আত-তিরমিযী, কিতাবুল ইলম, হাদিস নং ২৬৬৫, মুসলিম হাঃ ৩০০৪)
তিনি জানতেন এ উম্মাহর ভবিষ্যৎ কী।
তিনি জানতেন, তার ওফাতের পর উম্মাহ এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে।
তোমরা তার সেই হুশিয়ারি শোনলে না কেন?
বন্ধুগণ!
হাদিস লিখে রাখায় কি সমস্যা হয়েছে, জানো কি?
মুসলিম সমাজে ঢুকে পড়েছে অমুসলিম চিন্তা,
মুনাফিকি ও জালিয়াতদের বানানো হাদিসে পরিপূর্ণ হয়েছে আমাদের কিতাবের কিতাব।
কেউ লিখল — “নবী নাকি বলেছিলেন, রাজা তার প্রজাদের প্রতি যতই জুলুম করুক, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করনা।”
কেউ লিখল — “নারীরাই নাকি অশুভের মূল।”
কেউ লিখল — “গান শোনা হারাম, কিন্তু দাসীর নাচ দেখা জায়েজ!”
আল্লাহর কসম! এসব কথা কি কুরআনের সাথে মিলে?
বন্ধুগণ!
এই সব বানোয়াট হাদিস যখন কাগজে উঠানো হল,
তখন মুসলিম সমাজের মগজেও ঢুকে গেল।
এক এক করে তৈরি হলো শিরকী আচার আচরণ,
মাজারে শুয়ে থাকা মৃত মানুষ থেকে নেওয়া হলো চাওয়া-পাওয়া,
কারণ হাদিসে লেখা হয়েছিল, যে লিখেছিল সে বলেছিল — “ওমুক অলির কবর থেকে নেয়া যাবে রোগমুক্তি!”
হায়! কোথায় হারিয়ে গেলো কুরআনের সরল তাওহীদ?
বন্ধুগণ!
হাদিস লিখতে গিয়ে আরেকটা বড় বিপদ হলো —
সত্য মিথ্যা একাকার হয়ে গেল।
কারণ নবী তো বারবার বলেছিলেন,
«مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»
"যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা বলবে, সে জাহান্নামে নিজের জায়গা নিজেই ঠিক করে নিবে।"
📚 (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১০৭, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩)
কিন্তু লিখকরাতো ইচ্ছাকৃত না হোক, ভুলক্রমেও প্রচুর মিথ্যা লিখে ফেলল।
মুহাদ্দিসদের জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধই ছিল —
এই লিখিত হাদিস থেকে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তা আলাদা করা।
তাদের স্বীকৃত বইয়ে তারা নিজেরাই লিখেছে —
"জাল জয়িফ হাদিসের সংখ্যা সহীহ হাদিসের তুলনায় অনেক বেশি।"
আজ এই লিখিত হাদিসের স্তুপে কুরআন চাপা পড়ে গেছে।
বন্ধুগণ!
যদি নবীর সেই মৌলিক হুকুম মেনে চলতাম —
«لَا تَكْتُبُوا عَنِّي»
"আমার থেকে কিছু লিখো না।"
📚 (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ১০৮৪৯)
তাহলে কি এমন বিভ্রান্তি ছড়াত?
তাহলে কি আল্লাহর এককত্ব, কুরআনের তাওহীদ এত বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ত?
বন্ধুগণ
নবী হাদিস লিখতে নিষেধ করেছিলেন, একথা সহীহ হাদিস দিয়েই প্রমানিত। তারপরেও তোমরা দেখতে পাবে হাদিস অস্বীকার কারীরা এই হাদিসগুলো ছুড়ে ফেলে দেবে। নবী হাদিস লিখতে নিষেধ করেছেন এই হাদিস তারা সীকার করবেইনা। এরাই হলো হাদিস অসীকার কারী শয়তানের দল। তারা তাদের দলের অধীনের হাদিসগুলোকে সহীহ আখ্যাদিয়ে মানবে, আর অন্যদলের হাদিসগুলোকে দুর্বল ট্যাগ লাগিয়ে মানতে অসীকার করবে। এরাই হল প্রকৃত হাদিস অসীকারকারী।
এই সমস্ত ফাসাদকারীদের কড়া ভাষায় জানিয়ে দাও, তোমাদের দলীয় শায়েখ ও পীরের কথায় কোন হাদিস জাল ও যইফ হয়ে যাবেনা। জাল, জয়ীফ নির্বাচিত আল্লাহর কিতাবের মানদন্ডে।
বন্ধুগণ!
আজ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো —
নবীর হুকুমের দিকে ফিরে যাওয়া। নবীর চরীত্রে চরীত্রবান হওয়া, নবীর আদর্শে আদর্শবান হওয়া।
নবীর চরীত্র ছিলো কুরআন, তিনি ছিলেন কুরআনেরই প্রতিচ্ছবি।
বন্ধুগণ
ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক করে একমত হোন। যদি মনে করেন কুরআনের এই কথাগুলো আপনার বন্ধুরাও জানুক তাহলে এখনি শেয়ার করুন। আর যদ কোন দিধা থাকে তাহলে এখনি কমেন্ট করুন। দেখা হবে ফের অন্য ভিডিওতে ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ সবাইকে। সালামুন আলাইকুম
0 Comments