Subscribe Us

নামাজ বিভাজনের ফাঁদে মুসলিম উম্মাহ! — আসলে কার নামাজ ঠিক?

 


নামাজ বিভাজনের ফাঁদে মুসলিম উম্মাহ! — আসলে কার নামাজ ঠিক?

লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ

বন্ধুগণ!
আজকের এই নামাজ নিয়ে আলোচনাটি খুবি গুরুত্বপুর্ণ হতে চলেছে। তাই আজকে সর্বোচ্চ শেয়ার দাবী করছি। চলুন শুরু করি।

বন্ধুগণ!
আমাদের অনেকেই এক ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন—
“তোমরা শুধু কুরআন কুরআন করো, বলো তো দেখি, নামাজের নিয়ম কুরআনে কোথায় আছে?”
“হাদিস ছাড়া তো নামাজ তো দূরের কথা, ওজু করাও সম্ভব না!”
“কুরআনে কি কখনো বলা আছে কত রাকাত পড়তে হবে?”
“তাহলে নামাজ কেমনে পড়ো কুরআন অনুসারে?”

বন্ধুগণ, এসব প্রশ্ন যারা করে, তারা হয়তো কুরআনের উদ্দেশ্যটাই এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।

✅ প্রথমে বুঝে নিন — কুরআন কীসের জন্য?
কুরআন কোনো মাদ্রাসার পাঠ্যবই নয়।
কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, জাতি বা এলাকার জন্য পাঠানো বিধান নয়।
এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য এক হিদায়াত, এক আলো, এক পথনির্দেশ।
যা সময়, জাতি, অঞ্চল ও প্রজন্মভেদে সকল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য।

এজন্য কুরআনের ভাষা গভীর, বিস্তৃত এবং মূলনীতিভিত্তিক।
কুরআন এসেছে জীবনের মূল সূত্র, মৌলিক কাঠামো ও নৈতিক দিকনির্দেশনা দিতে।

✅ নামাজের উদ্দেশ্য ও কাঠামো কুরআনে স্পষ্টভাবে আছে
কুরআন কোথাও “এভাবে রুকু করো, এভাবে সিজদা করো” — এইভাবে তালিকা করে পদ্ধতি দেয়নি।
কিন্তু কুরআন আমাদের বলে দিয়েছে সালাত কী, কেন পড়তে হবে, কখন পড়তে হবে, কাকে উদ্দেশ্য করে পড়তে হবে, সালাতের অন্তরসার কী হওয়া উচিত।

কুরআন আমাদের বলে—
সালাত স্থাপন করো (আকিমুস সালাহ)
রুকু করো, সিজদা করো, দাঁড়াও (সূরা হজ: ৭৭, সূরা মুজাম্মিল: ২০)
সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে (সূরা আনকাবুত: ৪৫)
সালাতে আল্লাহর স্মরণ থাকবে (সূরা ত্বাহা: ১৪)
সালাত নির্ধারিত সময়ে ফরজ (সূরা নিসা: ১০৩)
সালাত একমাত্র আল্লাহর জন্য (সূরা আল আনআম: ১৬২)

এগুলো হলো সালাতের মৌলিক দিকনির্দেশনা।
নামাজের উদ্দেশ্য, গভীরতা ও অভ্যন্তরীণ ভাব, আরকান আহকাম — সবই কুরআনেই আছে।

✅ আর হাদিস?
হ্যাঁ, হাদিসে অনেক কিছু এসেছে।
কিন্তু হাদিস একটি মহাসাগর —
এই সাগরে আছে সাদা মাছ, কালো মাছ,
লাল-নীল-হলুদ সব রঙের মাছ...
আরো আছে বিষাক্ত মাছ!

কোনটা খাবেন, কোনটা খাবেন না —
তা বাছাই করতে গেলে আপনাকে হতে হবে মহাদার্শনিক, মুহাদ্দিস, মুজতাহিদ।
আর আপনি যদি সাধারণ মানুষ হন—
তাহলে আপনি যেটা খাবেন, সেটা আপনার এলাকার, মাজহাবের হুজুর বেছে দেবে,
আর হুজুর তার ইমাম বা দলের হুজুরের উপর ভরসা করবেন।
এভাবেই নবীর সালাত হয়ে উঠেছে নানা হুজুরের সালাত।

✅ আপনি হাদিস দিয়ে নির্দিষ্ট করবেন কীভাবে?
একই হাদিস গ্রন্থে একেক রকম কথা!
জোরে আমিন বলার হাদিস আছে
আস্তে বলারও হাদিস আছে
বুকের ওপর হাত বাঁধার হাদিস আছে
নাভির নিচে বাঁধার হাদিসও আছে
এমনকি হাত না বাঁধার হাদিসও আছে!

এখন প্রশ্ন হলো— আপনি কোনটা নিবেন?
কোনটায় নবী স. নামাজ পড়েছেন?
সবই তো “সহীহ” হাদিস হিসেবে দাবি করা হয়!

তাহলে আপনি হাদিস দিয়ে সঠিক একটা নির্দিষ্ট সালাতের পদ্ধতি দাঁড় করাতে পারবেন কি?

অসম্ভব। এক কথায়, অসম্ভব!
এই দ্বন্দ্ব থেকেই তো তৈরি হয়েছে হানাফি, শাফেয়ি, আহলে হাদিস, শিয়া, সুফি, আহমদিয়া, ইবাদি, হেযবুত তাওহীদ, আহলে কুরআন — নামাজের ১২টি ভিন্ন ধারা!
সবাই নবী (সা.)-এর নামেই নামাজ পড়ছে, কিন্তু কেউ কারোটা মানছে না।

আপনি কি জানেন, আজকের দুনিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে কত রকমের নামাজ চালু আছে?
শুনে অবাক হবেন— এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ১২ প্রকার বা তার চেয়েও বেশি পদ্ধতিতে মুসলমানেরা নামাজ আদায় করছে!
১/ হানাফি নামাজ। ২/ শাফেয়ী নামাজ।
৩/ মালেকি নামাজ। ৪/ হাম্বলী নামাজ। ৫/ আহলে হাদিস নামাজ।
৬/ শিয়া নামাজ। ৭/ আহমদি নামাজ। ৮/ সুফি নামাজ।
৯/ বহরী নামাজ। ১০/ ইবাদি নামাজ। ১১/- হেযবুত তাওহীদ নামাজ। ১২/ আহলে কুরআনদের নামাজ।

আর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো—
প্রত্যেক পদ্ধতির অনুসারীরা নিজেদের পদ্ধতিকেই একমাত্র সহীহ দাবি করে, বাকি সবাইকে বলে গোমরাহ বা ভুল।

এদের সবার মুখে একই হাদিসের বুলি:
"সাল্লু কামা রাইতুমুনি উসল্লী"
অর্থাৎ, “তোমরা এমনভাবে নামাজ পড়ো, যেমনভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছ।”

এ হাদিসকে সামনে রেখে তারা একেকজন একেকভাবে দাঁড়ায়, একেকরকম রুকু করে, সিজদা দেয়, আঙুল নাড়ায়, পা জোড়া রাখে বা ফাঁকা রাখে—
আর কেউ ভিন্ন কিছু করলে বলে, “তোমার নামাজ হবেনা! এটা বিদআত!”

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি নবীর নামাজ শিখলেন কোথা থেকে?
সবারই মুখে এক কথা:
“নবীর নামাজ শিখেছি হাদিস পড়ে।”

তখন যদি প্রশ্ন করি — “আপনি স্বয়ং হাদিস পড়েছেন?”
তখন তারা বলেন,
“না না ভাই! আমরা আমাদের বড় হুজুরের লেখা নামাজ শিক্ষা বই পড়ে শিখেছি। উনিই হাদিস দেখে আমাদের জন্য বই লিখেছেন।”

তাহলে দিন শেস হিসাবটা কোথায় দাঁড়াল? —
আপনি নামাজ শিখলেন হাদিস থেকে নয়, বরং আপনার হুজুরের ব্যাখ্যা করা হাদিস থেকে।
আপনার ঈমান হাদিসে নয়, আপনার হুজুরের উপর!
কারণ আপনি হাদিস পড়েননি, পড়েছেন সেই হুজুরের নামাজ শিক্ষা বই, যেটাকে আপনি ‘সহীহ’ ধরে নিয়েছেন, কারণ হুজুর হক্কানী, তাহকীকপ্রেমী, আপনার তারিকার মানুষ!

বন্ধুগণ
ভিন্ন ভিন্ন দল ভিন্ন ভিন্ন নামাজ ধরিয়ে দেয়
তাবলীগ জামাত বলে— নবীর নামাজ শিখতে “জাকারিয়া কাঁন্ধলভীর নামাজ শিক্ষা বই পড়ো।”
জামাআতে ইসলাম বলে— “মওদুদী, সাইদী বা গোলাম আজমের বই ধরো।”
আহলে হাদিস ধরিয়ে দেয়— “আলবানী সাহেবের ‘সিফাতুস সালাতুননাবী’।”
সালাফী ঘরানা বলে— “আঃ রাজ্জাক বিন ইউসুফই একমাত্র সঠিক, তার বই পড়।”
কওমী নূরানী ধারার লোকেরা দেয়— “নূরানী নামাজ শিক্ষা।”
আসাদুল্লাহ আল গালিব-এর অনুসারীরা বলবে— “সালাতুর রাসুলই প্রকৃত নামাজ শিক্ষা বই। তারা সেটা পড়ে।”
শিয়া, আহমদিয়া, সুফি, হেযবুত তাওহীদ— সবার আছে নিজেদের ‘নবীর নামে নামাজ শিক্ষা বই’।

অর্থাৎ সবাই নবীর নামাজ শেখানোর নামে
নিজ দলের বই ধরিয়ে দেয়।
এবং বলে:
“এইটাই আসল নামাজ! এর বাইরে নামাজ হবে না, শুদ্ধ হবে না, গোনাহ হবে!” বিদআত হবে।

বন্ধুগণ!
এখন বলুন, এগুলোর মধ্যে কোনটা আসল?
যদি সবাই বলে “আমরা সহীহ হাদিস অনুযায়ী নামাজ পড়ি”—
তবে প্রশ্ন হলো,
সহীহ হাদিস কি এত রকম?
একই নবীর নামাজ ১২ রকম হয় কিভাবে?

আসলে সত্যটা অনেক গভীর ও ভয়াবহ।
নবীর নামাজের নামে সবাই নিজ নিজ দলীয় মনগড়া ব্যাখ্যা চাপিয়ে দিয়েছে।
হাদিসের ছাঁকনির নামে হুজুরদের বানানো ফিল্টারে গলে
নবীর নামাজকে দলীয় রূপে রূপান্তর করা হয়েছে।

তাহলে নামাজের উদ্দেশ্য কী হারিয়ে গেল?
আজ নামাজ হয়ে গেছে
জোরে আমিন বনাম চুপ আমিন,
হাত নাভির নিচে না বুকের ওপর,
আঙুল নাড়ানো বনাম না নাড়ানো—
এসব নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিতর্ক, দলাদলি।

কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে—
আত্মনিবেদন, বিনয়, ভীতি, আল্লাহর সামনে নতি!
এগুলো হারয়ে গেছে।

কুরআন বলছে—
“নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত ৪৫)
কিন্তু আজ নামাজ পড়া লোকদের মাঝেই
বেশি হিংসা, দলাদলি, অহংকার, বিদ্বেষ দেখা যায়! কেন?

তাহলে সমাধান কোথায়?
সমাধান একটাই— নামাজে ফিরে আসুন কুরআনের আলোকে।
হ্যাঁ, রুকু, সিজদা, ক্বিয়াম, ক্বিরাত— সব ঠিক থাকলে,
ভঙ্গির কিছু পার্থক্যে আল্লাহর কিছু যায় আসে না।
আল্লাহ দেখেন আপনার মন কি বিণিত কিনা?,
আপনার চোখ কেঁদেছে কিনা,
আপনার অন্তর কি কাঁপে আল্লাহর সামনে?

কে আঙুল নাড়াল না নাড়াল, পা ফাঁকা রাখল না জোড়া করল—
এগুলো আল্লাহর কাছে বিচার্য নয়!
আল্লাহ বিচার করবেন— কে তাঁর সামনে দাঁড়ালো একান্ত বিনয়ে,
কে নামাজে আত্মাকে বিলিয়ে দিলো।

বন্ধুগন!
আপনি যে দলেরই হোন না কেন—
আপনার নামাজ যেন না হয় দলীয় হুজুরের অনুকরণ,
বরং হোক আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ী আত্মসমর্পণ!
নামাজ হোক আল্লাহর সঙ্গে সংযোগের নাম,
না যে হুজুরের ফতোয়া মেনে দলীয় চেতনাকে পালন করার নাম!

আসুন, আমরা ভিন্নতা নয়, অন্তরশুদ্ধি নিয়ে ভাবি।
আসুন, দল নয়, দিক ঠিক করি—
আল্লাহর পথে ফিরি।

বন্ধুগণ!
ভিডিও ভালো লাগলে লাইক দিবেন।
একমত হলে অথবা একমত নাহলেও কমেন্ট করুন।
ভিডিওটি উপকারী মনে হলে এখনি শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments