Subscribe Us

"গলায় পড়া শিকল ছিড়ে ফেল”

 


"গলায় পড়া শিকল ছিড়ে ফেল”

লিখকঃ- মাহাতাব আকন্দ।

বন্ধুগণ! আজ তোমাদের ছিড়তে বলবো সেই সব অদৃশ্য শিকল, যা তোমার গলায় লটকানো। সেই শিকল তুমি দেখতে পাচ্ছনা? এই শিকল তোমাকে কেউ জোড় করে পড়ায়নি, তোমরা নিজেরাই ইচ্ছা করে নিজের গলায় জড়িয়েছ। 

এই শিকল হলো তোমার বাপদাদার, সমাজের, মাজারের, মাদ্রাসার,

এই শিকল ইমামদের, মৌলবিদের, পীরদের।

তাদের কথাকে তোমরা বানিয়ে বসেছো

আল্লাহর কথার চেয়েও বড়।

তাদের কিতাবকে কুরআনের ওপরে স্থান দিয়েছো।

তুমি যদি সত্যিই বলো,

“আমার রব একজনই— আল্লাহ”

তাহলে কেন তোমার এত গুরু,

এত ফতোয়া,

এত ভন্ডামির দোকান?


বন্ধুগণ!

দেখো কেমন করে আল্লাহ বলেন,

“আমিই এই কুরআনকে সহজ করেছি বোঝার জন্য।”

(সূরা কামার ১৭, ২২, ৩২, ৪০ বারবার)

কিন্তু তুমি বলো—

“না হুজুর, আমরা আরবি জানি না,

আমরা বুঝব কিভাবে?

আমাদের জন্য হুজুরের মুখের কথাই শেষ কথা।” আমাদের পীর সাহেব যা বলবে তাই মানবো, আমাদের শায়েখ যা বলবে তাই করবো। 

এই কথা যে শয়তানের ফিসফিস,

তা কি বুঝতে পারছো না? তুমি যে অদৃশ্য শিকলে বন্দি হয়ে গেছ তাকি বুঝতে পারছনা?

যে আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন,

তিনি কি তোমার ভাষা বোঝেন না?

তিনি কি জানেন না, তুমি বাঙালি?

তিনি কি জানেন না, তুমি আরবি ভাষায় দুর্বল?

তাই তো তিনি বলেছেন—

“আমরা প্রত্যেক রাসূলকে তাদের স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি।” (সূরা ইব্রাহীম ৪)


বন্ধুগণ!

তোমরা বলো হাদিসের কথা, ফিকহের কথা,

মাজহাবের কথা,

তোমরা বলো ইজমা, কিয়াস, তাকলীদের কথা।

আচ্ছা বলো তো—

এগুলো কুরআনের কোন আয়াতে আছে?

যে কুরআন তোমার জন্য

পরিপূর্ণ জীবন বিধান (সূরা আনআম ৩৮),

যেখানে বলা হচ্ছে—

*আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম।*

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম।” (সূরা মায়েদা ৩)

তাহলে সেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের বাইরে

তোমাদের এই লাখ লাখ বিধান কোথা থেকে এলো?


বন্ধুগণ!

তোমরা এগুলো মুখস্থ করো, আবার বুক ফুলিয়ে বলো— “হাদিস আছে ৩৫ লাখ!”

তুমি কি কখনো ভাবো—

কেন এই হাদিসের পাহাড়?

কারা এই কারখানা চালাচ্ছে?

দুনিয়ার সেরা মুহাদ্দিসরাও তো বলেছেন

এই হাদিসের মধ্যে লাখ লাখ জাল।

কিন্তু কোনটা জাল আর কোনটা সহিহ

সেই প্রশ্নে তাদের মধ্যেই তো মিল নেই।

তোমরা বলো সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম—

দেখো ভালো করে,

সেখানেও কতো অসংগতি,

এক হাদিসে এক কথা,

অন্য হাদিসে ঠিক তার উল্টো কথা!


বন্ধুগণ!

আমি বলছি না হাদিস অস্বীকার করো,

আমি বলছি হাদিসকে যাচাই করো কুরআনের আলোকে।

কুরআন আমাদের শিখিয়েছে—

*ফা ইন তানাঝা'তুম ফি শাইয়িন ফারুদ্দুহু ইলাল্লাহি ওয়া রসুলিহি*

“যদি কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হয়,

তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা নিসা ৫৯)

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া মানে কি?

রাসূল তো আর আজ দুনিয়ায় নেই।

তাহলে কীভাবে ফিরিয়ে দিবে?

তাই আল্লাহ বলেছেন—

“এ কুরআন যাতে তুমি মানুষদের কাছে ব্যাখ্যা করো।”

(সূরা নাহল ৪৪)

রাসূলের ব্যাখ্যা মানেই কুরআনের ব্যাখ্যা।

রাসূল নিজের কোনো হুকুম দেয়নি,

সব কুরআনের ব্যাখ্যা।


বন্ধুগণ!

তোমরা বলছ, কুরআন সালাতের পদ্ধতি দেয়নি?

“তাই সাহাবায়ে আজমাইন ইজমা করেছেন।”

আচ্ছা সাহাবিদের সেই সম্মিলিত রেজুলেশন কই?

ইজমা মানে, অনেক সাহাবা এক জায়গায় হয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাহলে সেই নথি কই?

আসলে এগুলো সব শিকল পড়ানোর গল্প।

যেন আমাদের চিন্তার হাত-পা বেঁধে রাখা যায়। বিবেক বুদ্ধির গলায় শিকল বাধা যায়।


বন্ধুগণ!

তোমরা সালাত পড়ছো হানাফি ফিকহ মেনে,

কেউ শাফেয়ি, কেউ হাম্বলি।

আহলে হাদিসেরা পড়ছে আলবানীর ফতোয়া দেখে।

তাদের মধ্যে সাড়ে চারশো বিষয়ে মতবিরোধ।

এ কেমন দ্বীন?

এক আল্লাহ, এক রাসূল, এক কুরআন,

তবু তোমাদের হাজারো মাজহাব কেন?


বন্ধুগণ!

তোমরা যখন বলো

“হুজুর, দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া যাবে?”

তখন হুজুর মুখে ফেনা তুলে বলেন—

“না যাবে না, হাদিসে আছে হারাম।”

অথচ কুরআনে কোথাও নেই এমন কিছু।

আবার একজন বলবেন,

“হ্যাঁ যাবে, নবীজী কখনো দাঁড়িয়েও খেয়েছেন।”

তোমরা দ্বিধায় পড়ে যাবে।

আচ্ছা, এর জন্য এই বিশাল দ্বীন নাজিল হলো?

তাহলে কুরআনের আসল শিক্ষা কোথায় গেলো?


বন্ধুগণ!

কুরআন বলছে—

“যারা অন্ধভাবে অনুসরণ করে,

তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট কেউ নেই।”

(সূরা বাকারা ১৭১)

তোমরা কী করছো?

একজন আলেম বললেন—

“এই হাদিস জাল।”

মানে?

তিনি সেই হাদিস মানছেন না।

অন্য একজন বললেন—

“এই হাদিস সহিহ।”

মানে তিনি মানছেন।

সুতরাং সব মুসলিমই হাদিস ‘না মানা’য় লিপ্ত।

তুমি আমি সবাই হাদিস যাচাই করছি,

তবে নিজেরা নয়—

কেউ আবু হানিফার হাতে,

কেউ ইমাম শাফেয়ীর হাতে,

কেউ আলবানীর হাতে।


বন্ধুগণ!

তোমরা বলো—

“আমরা কুরআন বুঝি না, তাই আলেমদের পিছনে চলি।”

কিন্তু কুরআন কি বলছে?

কুরআন বারবার বলছে—

নিজের বুদ্ধি খাটাও।

যারা আকল ব্যবহার করে না,

তারা আল্লাহর চোখে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।


বন্ধুগণ!

তোমরা হেফজ করছো মুখে,

কিন্তু সংরক্ষণ করছো না হৃদয়ে।

হাফেজ মানে কি?

মুখস্থ করা?

না, হাফেজ মানে সংরক্ষণ করা।

তুমি কুরআন সংরক্ষণ করছো না।

তুমি কেবল কণ্ঠে বহন করছো,

বুকে নয়।


বন্ধুগণ!

আজ এই উপমহাদেশে লাখ লাখ আলেম,

লাখ লাখ মাদ্রাসা,

কোটি কোটি ওয়াজের অডিও, ভিডিও,

তবু মুসলিমরা বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জাতি।

কেন?

কারণ তারা ধর্ম নিয়ে পড়ে আছে,

কিন্তু দ্বীন নিয়ে নয়।

তারা ব্যস্ত আজওয়া খেজুরের ফজিলত নিয়ে,

তারা ব্যস্ত তারাবিহ ৮ না ২০ নিয়ে,

তারা ব্যস্ত দাড়ি কত লম্বা হবে তা নিয়ে,

তারা ব্যস্ত হিজাব-নিকাব কতখানি হবে তা নিয়ে,

কিন্তু কুরআনের নীতি, ন্যায়, মানবিকতা,

সামাজিক সুবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই—

এসব নেই তাদের জীবনে।


বন্ধুগণ!

তুমি কি কুরআনের সেই আয়াত পড়ো না—

“তোমরা দুনিয়াবি জীবনে মগ্ন থেকো না।”

(সূরা আনআম ৭০)

তুমি কি শোনো না সেই আহ্বান—

“ধর্মে বাড়াবাড়ি কোরো না।”

(সূরা নিসা ১৭১)

তবু তুমি বাড়াবাড়ি করছো,

দাড়ি-টুপি-হিজাব নিয়ে,

মাজারে মাজারে ঘুরে ঘুরে ফতোয়া কুড়াচ্ছো,

কিন্তু কুরআনের আসল নীতি বোঝো না।


বন্ধুগণ!

তোমরা বলো হাদিসে আছে,

“আজওয়া খেজুর খেলে বিষের প্রভাব হবে না।”

তুমি কি কুরআনের আয়াত দেখো না—

যেখানে আল্লাহ বলছেন সব রোগের শিফা কুরআনে?

(সূরা ইয়ুনুস ৫৭)

কখনো বলেছেন মধুতে? (সূরা নাহল ৬৯)

কিন্তু খেজুরে?

না।

তাহলে নবী কি কুরআনের বিরোধিতা করে কিছু বলেছেন?

এটা নবীর নামে অপবাদ।

নবী তো কুরআনের বাইরে কিছু বলেননি।


বন্ধুগণ!

আজ তোমাদের প্রয়োজন কুরআনের সেই নিড়ানি,

যা দিয়ে উপড়ে ফেলবে

এই ধর্মের আগাছা,মাজার-দরবারের জড়তা,

মাজহাবের বন্ধন,

আর ফিরবে আল্লাহর সরাসরি বাণীতে।

তাহলেই আল্লাহ তোমাদের জন্য দরজা খুলবেন।


বন্ধুগণ!

আজ থেকে সিদ্ধান্ত নাও।

কুরআন হবে তোমার দিকনির্দেশনা।

হাদিস হবে যাচাইয়ের আলোকে,

কুরআনের সাথে মিলিয়ে।

মাজহাব হবে কেবল সহায়ক,

কখনো প্রভু নয়।

তোমার রব একজনই— আল্লাহ।

তোমার রাসূল একজনই— মুহাম্মদ ﷺ।

তোমার জীবন বিধান একটাই— কুরআন।


বন্ধুগণ!

আজ কুরআনের সেই মশাল হাতে নাও,

দাও আগুন এই ভণ্ড ফতোয়ার পাহাড়ে,

পুড়িয়ে দাও সব মনগড়া গল্প,

সব শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসো।

দেখবে,

তোমার হৃদয় হবে হালকা,

তোমার চিন্তা হবে মুক্ত,

তোমার জীবন হবে পরিপূর্ণ,

এবং তখনই তুমি সত্যিকারের মুসলিম,

যে কুরআনের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেয় প্রতিটি নিঃশ্বাসে।

Post a Comment

0 Comments