Subscribe Us

আপনার আকিদা কি ঠিক? নাকি ভ্যাজাইল্লা?

 


আপনার আকিদা কি ঠিক? নাকি ভ্যাজাইল্লা? (মুুহাম্মাাদ মাহাতাব আকন্দ)

আক্বীদা মানে শুধু মুখে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নয়। আক্বীদা হলো অন্তরের সেই বিশ্বাস, যা আমাদের চিন্তা, মনোভাব, কাজ ও সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি মুখে তাওহীদের কথা বল, অথচ অন্তরে তুমি, সমাজ, নেতা, পীর, কিতাব, রেওয়াজ কিংবা হাদীসের ব্যাখ্যাকে আল্লাহর চাইতেও বড় মনে কর—তাহলে তোমার আক্বীদা নষ্ট। এটা হলো অদৃশ্য শিরক, যা মানুষ টেরই পায় না, অথচ আল্লাহর দৃষ্টিতে সেটা ভয়াবহ পাপ।

বন্ধুগণ!
আমরা অনেকে বলি—“আমার আক্বীদা তো ঠিকই আছে।”
কিন্তু আপনি জানেন কি, আক্বীদা কোনো নির্দিষ্ট সময় শিখে রাখা জিনিস না।
আক্বীদা হচ্ছে এমন এক চর্চা, যা প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে নিজেকে যাচাই করে নিতে হয়।
কারণ শয়তান প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে, আপনার আক্বীদা নষ্ট করতে।
কখনো ভয় দিয়ে, কখনো লোভ দেখিয়ে, কখনো হাদীস ও ফতোয়ার নামে আক্বীদাকে বিকৃত করে।

সম্মানিত ভাই,
আজ চারদিকে তাকালে দেখতে পাবেন "আকিদার দোকানদারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একেক দল একেক আকিদা প্রচার করছে। সুন্নি বলছে শিয়াদের আকিদা অত্যান্ত খারাপ, আবার শীয়ারা বলছে সুন্নিদের আকিদা শিরকে ভড়া। হানাফিরা বলছে আহলে হাদিসগণ কাদিয়ানী আকিদা লালণ করে, আর আহলে হাদিসগণ বলেন কাদিয়ানীরা মুসলমানই নয়।
জামায়াতে ইসলাম বলে তাবলীগিদের আকিদা খারাপ।
তাবলিগীরা বলে জামাতের আকিদা ধারণ করলে মুশরিক হয়ে যাবে।
দারুন চলছে আকিদার বাজার, একেক দোকানের পন্য একেক রকম। সবাই যার যার পন্যের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার লাইফটাইম গ্যারান্টিও দিচ্ছে।
বাজারে এসব আকিদার ছড়াছড়ি, তাই ক্রেতাও বেশি। কেউ কেউ ব্যাগ ভর্তি করে কিনছে।
কেউ কেউ আবার টানাটানিতে পরে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে।
কারো আকিদা কারো সাথে মিলছেনা। কারণ আকিদাগুলো কুরআনের আলোকে যাচাইকৃত নয়। এগুলো তৈরী হয়েছে যার যার দলের ভাব ও আবেগ দিয়ে তৈরী। এগুলো তৈরী হয়েছে বিভিন্ন হাদিসের ভুল ব্যাক্ষা ও যার যার দলীয়গুরুদের দ্বারা।
এসব আকিদার সমস্যা দুর হবেনা যতক্ষণ না পবিত্র কুরআন দারা সংশোধীত না হয়।

বন্ধুগণ!
আল্লাহ বলেন—
وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহতে ঈমান আনে, কিন্তু শিরকও করে।” (সূরা ইউসুফ: ১০৬)
এই আয়াত আমাদের জন্য চরম সতর্কবার্তা।
এমন অনেক মানুষ আছে, যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে ঠিকই, কিন্তু সেই বিশ্বাসের সাথে মিশিয়ে নেয় মানুষের বানানো বিধান, নবীর নামে বানানো মিথ্যা হাদিস, ভণ্ড পীরদের কথাবার্তা, সমাজের রেওয়াজ, দলীয় চিন্তা।
ফলে তারা বুঝতে পারে না—তারা শিরকের মাঝেই পড়ে গেছে।

বন্ধুগণ!
আক্বীদা ঠিক রাখতে হলে কুরআনের গভীরে যেতে হবে।
আল্লাহর গুণাবলির সাথে কাউকে মিলাবো না।
কারো কথাকে, কোনো কিতাবকে, কোনো দলের নীতিকে আল্লাহর হুকুমের সমতুল্য মনে করব না।
এমনকি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসও আমরা কুরআনের আলোকে বুঝব।
কারণ রাসুল নিজে কখনো কুরআনের বিরোধী কথা বলেননি।
যদি কেউ হাদীসের নামে কুরআনের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে সেটা রাসুলের নয়, সেটা মানুষ বানিয়েছে।

বন্ধুগণ!
আমরা যখন কোনো পীর, মাওলানা, হুজুর, স্কলার বা নেতা সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করি—
“ওনার ভুলও সঠিক”,
“তিনি যেটা বলেন, সেটাই আমার দ্বীন”,
“তিনি যা বলেন, তা যাচাই করার দরকার নাই”—
তখন আসলে আমরা তাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেলি।
এই চিন্তাই আমাদের আক্বীদাকে ধ্বংস করে দেয়।
আল্লাহ বলেন—
“তারা তাদের আলেম ও পাদ্রীদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছিল।” (সূরা তাওবা: ৩১)
তাফসীরে এসেছে—তারা ওই আলেমদের ‘হালাল-হারাম নির্ধারকের’ জায়গায় বসিয়েছিল। এটাই আক্বীদার সবচেয়ে ভয়ংকর বিকৃতি।

বন্ধুগণ!
আক্বীদা ঠিক রাখতে চাইলে আমাদের তাওহীদের শিক্ষা কুরআনের ভিতর থেকেই নিতে হবে।
কোনো গ্রন্থ, ফতোয়া, দল, মতবাদ আমাদের মাপকাঠি হবে না।
কুরআনের বিপরীতে যেটাই যাবে, সেটা বাতিল—চাই তা যেকোনো হাদীসই হোক না কেন, যত বড় আলেমের ফতোয়াই হোক না কেন।

বন্ধুগণ!
আক্বীদা পরিশুদ্ধ করার অর্থ হচ্ছে—আমার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা ছাড়া কিছুই থাকবে না।
আমার চিন্তা, আমার বিচার, আমার বিশ্বাস—সবকিছু শুধু কুরআন ও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হবে।
আমি কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করব না।
আমি বারবার নিজের বিশ্বাস যাচাই করব—আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে এগোচ্ছি নাকি সমাজের, দলের, বা লোকচক্ষুর ভয়ে অন্য পথে চলছি?

বন্ধুগণ!
আজকের দিনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে আত্মসমালোচনা।
আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, আমি রোজা রাখি, আমি হজ করেছি—এইসব বাহ্যিক আমলের আগে প্রয়োজন আক্বীদার বিশুদ্ধতা।
কারণ হাদীসে এসেছে—
“যার আক্বীদা ঠিক নয়, তার আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৫ অনুযায়ী)

বন্ধুগণ!
এই জন্যই আমরা প্রতিদিন বলি—
""ইয়্যাকা না'বুদু ওয় ইয়্যাকা নাসতাইন"" আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য চাই”
এটা মুখে বলার বিষয় না, এটা আক্বীদা ভিত্তিক জীবনের ঘোষণা।

Post a Comment

0 Comments