Subscribe Us

রজম ইহুদী বিধান। ইসলামি বিধান নয়।

 


রজম নয়, কুরআনের আইন মানো —
বন্ধুরা!
আজ আমি যা বলব, তা হয়তো অনেকের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধবে, অনেক ‘হুজুর’ গাত্রদাহে কষ্ট পাবেন, কিন্তু সত্য বলাতো আমাদের দ্বীন। আজ আমি সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্য উচ্চারণ করব—যা বলা মানে ‘ফিতনা’, অথচ তা আসলে ফিতনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। রজম অর্থাৎ পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান ইসলামে নেই, এটা ইহুদি শরিয়তের বংশানুক্রমিক চুরি, যা কুরআনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুরা!
তোমরা জানো? আজও অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করে, ব্যভিচারের শাস্তি হলো বিবাহিত হলে পাথর ছুড়ে হত্যা, অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত। অথচ কুরআনের কোথাও আল্লাহ এই বিভাজন করেননি। কুরআন বলেনি, "হে প্রিয় হুজুর! আপনি হাদীসের মাধ্যমে এই শাস্তিকে দু’ভাগে ভাগ করে দাও।" বরং কুরআন ঘোষণা দিয়েছে, “ব্যভিচারকারী নারী ও পুরুষ, উভয়কে ১০০ বেত্রাঘাত দাও।” (সূরা নূর: ২)।

বন্ধুরা!
কুরআনে সূরা আন-নাহল এর ৮৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ কি এটা বলেননি? “এই কিতাব আমি বিস্তারিত করে দিয়েছি, সুস্পষ্ট করেছি, যাতে তোমরা বুঝে নিতে পার।” । তাহলে হুজুররাযে ‘রজমের বিধান ঢুকালো’ কিসের ভিত্তিতে? কার আদেশে তারা আল্লাহর আইনকে উপেক্ষা করে, ইহুদি ‘মিডিয়েভাল জাস্টিস’ চালু করে দিল?

বন্ধুরা!
এই রজম তো আসলে ইহুদি রাবাইদের উদ্ভাবিত শাস্তির বিধান। বাইবেল ওল্ড টেষ্টামেন্টের লেভিটিকাস বইয়ের ২০ অধ্যায়ের ১০ অনুচ্ছেদে এই রজম বিধান রয়েছে। কেউ ব্যভিচার করলে তাকে হত্যা করতে হতো। ডিউটেরনমি ২২ এর ২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “তোমরা উভয়কে পাথর মেরে মেরে মেরে হত্যা করো।” ইনজিলে জনের ৮ অধ্যায়ের ৩ থেকে ১১ অনুচ্ছেদে দেখা যায়, ব্যভিচারে ধরা এক নারীকে পাথর ছুড়ে মারতে চায় ইহুদি জনতা। ঈসা (আঃ) তাদের জবাব দেন, “তোমাদের মধ্যে যে কখনো পাপ করেনি, যার কোন পাপ সে-ই আগে পাথর মারুক।
একথা শুনে কেউ পাথর ছোঁড়ে না। সবাই চলে যায়। ঈসা (আঃ) বলেন, “যাও, আর পাপ করো না।” — এটি ছিল এক বিশাল প্রতিবাদ, যেখানে আল্লাহর নবী এই ‘রজম ফতোয়া’ কে অমানবিক বলে বাতিল করে দেন।

বন্ধুরা!
তাহলে প্রশ্ন জাগে — আল্লাহর রাসূল সালামুন আলা মুহাম্মদ কেন কিছু ইহুদিকে রজম করলেন? হাদীসে বর্ণিত আছে, সহীহ বুখারী (৬৮১৯)-এ, এক ইহুদি পুরুষ ও নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে, নবী (সা.) তাদের রজম করেন। কিন্তু এটি কিসের আলোকে? নবী কেন রজম করলেন? এটি কি কুরআনের আলোকে? না। বরং ইহুদি ধর্মের বিধান অনুযায়ী। নবী তাদের ধর্মের রেফারেন্স চাইলেন, তারা তওরাতে রজমের বিধান দেখাল। তখনই নবী (সা.) বলেন, “তোমাদের ধর্ম অনুযায়ী তোমাদের শাস্তি হবে।” এটা ছিল ইহুদি শরিয়তের ভিত্তিতে শাস্তি প্রয়োগ, ইসলামী শরিয়তের নয়।

বন্ধুরা!
তাহলে কেন ইসলামিক শরিয়াহর নামে এই ‘রজমের ফতোয়া’ চালু হলো? হাদীসগ্রন্থে পাওয়া যায় কিছু তথাকথিত ‘সংখ্যায় কম কিন্তু প্রভাবে তীব্র’ বর্ণনা, যা কুরআনের বিপরীতে যায়। তারা বলে — “এই আয়াত নাকি রহিত!” রহিত? কার দ্বারা? আল্লাহ কি বলেছেন, “হে হুজুরগণ, তোমরা আমার কুরআনের আয়াত রহিত করো?” বরং আল্লাহ সুরা কাহাফের ২৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন  “আমার কথাকে কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।

বন্ধুরা!
আরেকটা যুক্তির গলা টিপে ধরতে হবে। তারা বলে — “হাদীসে আছে, রজমের বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল, পরে তা নাকি মানসুখ হয়ে গেছে।” কিন্তু দুনিয়ায় এমন কোনো দলিল নেই যেখানে কুরআনের এই ‘রজমের আয়াত’ বিদ্যমান। তারা শুধু কল্পকাহিনি বানিয়েছে — "রজমের আয়াত নাকি এক সময় ছিল, ছাগলে নাকি খেয়ে ফেলেছে" — (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৯৪৪)। আল্লাহর কিতাব এমন নাকি? ছাগলের পেটেই চলে গেল?

বন্ধুগণ!
তোমরা কি জানো? সূরা নিসা:২৫ আয়াতে এক ভয়ংকর প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে: “যদি কোনো দাসী বিবাহিত হওয়ার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তার শাস্তি হবে স্বাধীন নারীর অর্ধেক।” এখন হুজুররা যদি বলেন — বিবাহিতদের শাস্তি রজম — তাহলে প্রশ্ন আসে:

১। রজমের অর্ধেক কীভাবে হবে?
২। কি, পাথর কম ছুঁড়বে? আধমরা রেখে দেবেন?
৩। এটা কি কুরআনের সঙ্গে রসিকতা নয়?

বন্ধুগণ!
এই আয়াত কুরআনের শক্তিশালী যুক্তি হয়ে উঠেছে। যেহেতু দাসী ও স্বাধীন নারীর মধ্যে তুলনা করা হয়েছে, এবং রজমের কোনো অর্ধেক হয় না — তাই আসল শাস্তি রজম নয়, বরং বেত্রাঘাত — ১০০ বেত্রাঘাত।

বন্ধুগণ!
হুজুর শ্রেণি আবার একটি শব্দ খোঁজে — ‘মুহসান’ অর্থ বিবাহিত, আর তাই তারা সূরা নূরের আয়াতকে অবিবাহিতদের জন্য ঘোষণা করে। অথচ কুরআনে এই আয়াতে কোনো বিবাহিত বা অবিবাহিতের ভেদাভেদ নেই। আর ‘মুহসান’ মানেই শুধু বিবাহিত নয়, বরং নিরাপদ, রক্ষিত, সম্মানিত—বিধায় দাসী মুহসানা নয়। কিন্তু এটা থেকে রজম প্রমাণ করা, মানে ‘চিঠিতে হাদিয়া’ লিখে ব্যাংকে টাকা নিতে যাওয়া!

বন্ধুগণ!
কোনো কোনো শরিয়াহ বইয়ে লেখা — “ইজমা বা সম্মিলিত মত অনুযায়ী রজম প্রমাণিত।” আমি তাদের বলি — ইজমা কি আল্লাহর চেয়েও বড়? কুরআনের ভাষায়, “তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ করো, তবে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট করবে।” (সূরা আনআম: ১১৬)।

বন্ধুরা!
এই হুজুর শ্রেণি মোল্লারদল ধর্মযাযক প্রতিটি যুগে নবীদের বিরুদ্ধেই ছিল। ঈসা (আঃ) যখন ইনজিল আনলেন, যাজক শ্রেণিই ছিল সবচেয়ে বড় বিরোধী। মূসা (আঃ) যখন তওরাত আনলেন, হাবরাই ছিল তাঁর দুশমন। রাসূল মুহাম্মদ (সা.) যখন কুরআন আনলেন, মক্কার আলিম-ওলামা, কোরাইশর ধর্মব্যবসায়ীরাইতো তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ বলেছিল।

বন্ধুগণ!
আমাদেরও আজ বিদ্রোহ করতে হবে, কিন্তু মসজিদ জ্বালিয়ে নয়, হুজুর গালি দিয়ে নয় — কুরআন দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, চিন্তা দিয়ে। এই ‘রজম ফতোয়া’ একটি মহাফাঁদা, যেটা কুরআনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইসলামকে বর্বর ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করে। অথচ আল্লাহ নিজেই বললেন, “আমার রহমত সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে।” (সূরা আরাফ: ১৫৬)

বন্ধুগণ!
আজকাল অনেকে ‘মদীনার সংবিধান’ বলে রজমকে জায়েজ করে। অথচ মদীনায় যেটি ঘটেছিল, সেটা ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী ইহুদিদের নিজেদের শাস্তি ছিল — ইসলামি শরিয়তের নয়। রাসূল (সা.) কুরআনের বিধান কার্যকর করতেন — যেখানে ব্যভিচারের একমাত্র শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত। আর মিথ্যা অপবাদ দিলে — ৮০ বেত্রাঘাত।

বন্ধুগণ!
এটা ভুলে গেলে চলবে না — ব্যভিচার প্রমাণ করতে চারজন সাক্ষী চাই, প্রত্যেকেই ঘটনার পুরো প্রক্রিয়া নিজ চোখে দেখবে। কেউ যদি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তাহলে সে ‘কাজ্জাব’ ঘোষণা পায়। (সূরা নূর: ৪)। এটা এমন একটা নিয়ম, যার মাধ্যমে রজম নয়, বরং ব্যভিচার প্রমাণ করাই প্রায় অসম্ভব

বন্ধুগণ!
এই রজম আজ একটা ভয়ংকর হুমকি — আফগানিস্তান, ইরান, নাইজেরিয়া ইত্যাদি দেশে ‘ইসলামের আইন’ বলে যারা নারীকে পাথর ছুড়ে মারে — তারা আসলে ইসলাম নয়, বর্বর ইহুদি রীতিকে জীবিত করছে। এবং এই অপপ্রচারেই ইসলামকে বিশ্বজুড়ে ‘সন্ত্রাসী ধর্ম’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়।

বন্ধুগণ!
তোমরা যারা এখনো বলেন, “হাদীস না মানলে ইসলাম থাকবে না”— তাদের বলব, হাদীস কুরআনের দাস, মালিক নয়। কুরআন নিজেই জানায় — “এই কিতাবেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে।” (সূরা ইউসুফ: ১১১)। তাহলে আল্লাহর কিতাবের বদলে ‘ইমাম তিরমিজির’ বা ‘ইমাম মালেকের’ মতকেই মাপকাঠি বানানো কি শিরক নয়?

বন্ধুগণ!
রজম একটি মিথ্যা বাতিল শাস্তি, যেটি কুরআনের ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করে। এটি আল্লাহর ঘোষিত ন্যায়ের শত্রু। মুসলমান যদি সত্যিই কুরআন মানে, তবে তাকে এই পাথর যুগের শাস্তি রুখতে হবে।

বন্ধুগণ!
শেষ কথা — আমরা কুরআনের উম্মত, হুজুরের দল নয়। কুরআনই হবে শেষ সিদ্ধান্ত। আল্লাহ বলেন, “তোমরা যদি বিরোধে পড়, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: ৫৯)। কিন্তু আজ উল্টো — হুজুরের মুখে কিছু শুনলেই “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলে ধামাধাম অনুসরণ, অথচ কুরআনের আয়াত শুনলে কেউ বলে না “সামিয়ানা ও আত্বানা”।

إرسال تعليق

0 تعليقات