Subscribe Us

ঈদের সালাত ফরয নয় – একটি কুরআনভিত্তিক প্রতিবাদ


 

ঈদের সালাত ফরয নয় – একটি কুরআনভিত্তিক প্রতিবাদ


বন্ধুগণ,
সালামুন আলাইকুম। আজ আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আজকের আমার আলোচনার বিষয় — ঈদের নামাজ ফরয কি? এক হুজুরের একটি ফেসবুক পোস্টে আমি দেখলাম তিনি লিখেছেন, “প্রত্যেক নারী পুরুষের উপর ঈদের সালাত আদায় করা ফরয। জামাতে না পারলে একাকী হলেও পড়া ফরয।” আমি বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং চিন্তিত! কারণ, এই কথা কেবল ভ্রান্ত নয়, বরং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একটি স্পষ্ট প্রচারণা!

বন্ধুগণ,
আসুন আমরা সরাসরি কুরআনের দিকে তাকাই। কুরআনই একমাত্র আল্লাহর সংরক্ষিত গ্রন্থ, যেখানে ইসলাম ধর্মের সমস্ত বিধান স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো, ৬২৩৬টি আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সালাত, রোজা, হজ্জ, যাকাত—এসব স্পষ্টভাবে ফরয হিসেবে আদেশ করেছেন। কিন্তু কোথাও কি তিনি বলেছেন ঈদের সালাত ফরয? একটিও আয়াতেও নেই!

বন্ধুগণ,
আসুন আমরা কয়েকটি উদাহরণ দিই—
আল্লাহ বলেন:
> "إن الصلاة كانت على المؤمنين كتابا موقوتا"
— অর্থাৎ, "নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরয করা হয়েছে।"
(সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)



এই আয়াতে আল্লাহ ফরয সালাতের কথা বলছেন। কিন্তু কিসের কথা? ঈদের সালাতের? না! এখানে সালাতের কথা বলা হয়েছে, যেটা সময়সীমা দিয়ে নির্ধারিত। ঈদের সালাত এমন নয়।

কোনো আয়াতে কি বলা হয়েছে যে,
"ওহে ঈমানদারগণ! ঈদের দিন নামাজ পড়া তোমাদের উপর ফরয"?
না! কোনো আয়াতে ঈদের নামাজ নিয়ে আদেশ নাই।

বন্ধুগণ,
যে কোনো আমল ফরয হতে হলে তার জন্য কুরআনে পরিষ্কার নির্দেশ থাকা দরকার। উদাহরণস্বরূপ:
রোজার ফরযত্ব এসেছে সূরা বাকারা ২:১৮৩ এ,
হজ্জের ফরযত্ব এসেছে সূরা আল ইমরান ৩:৯৭ এ,
যাকাতের ফরযত্ব অসংখ্য আয়াতে।
কিন্তু ঈদের সালাত? কোথাও নয়।

বন্ধুগণ,
তাহলে প্রশ্ন আসে: কুরআনে যদি ঈদের সালাত ফরয বলা না হয়, তবে হুজুর সাহেব কিসের ভিত্তিতে বলছেন এটা ফরয? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায়, তারা হাদীসের দিকে রেফার করে থাকেন। কিছু হাদীসে ঈদের সালাতের বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু কেউ একজন কোনো কাজ করেছেন—তা দিয়ে সেটাকে ফরয প্রমাণ করা যায় না।

উদাহরণস্বরূপ, রাসূল (সা.) ঈদের দিনে নামাজ আদায় করতেন, এটা একটি প্রথা বা সুন্নাহ হতে পারে—কিন্তু আল্লাহ যদি সেটা ফরয না করেন, তাহলে আপনি কিভাবে সেটা ফরয বলে চালিয়ে দেন?

বন্ধুগণ, চিন্তা করুন!
রাসূল (সা.) অনেক কাজই করতেন, যেমন তিনি জুতা পায়ে নামাজ পড়েছেন, তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন, তিনি উটে চড়ে নামাজ পড়েছেন—তাহলে কি আমরা বলব এসব ফরয? না, কখনোই না।

আমরা বলি:
> “শরিয়তের উৎস একটাই—আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কুরআন।”
এটাই কুরআনের বারবার ঘোষণা। আল্লাহ বলেন:
> "اتبعوا ما أنزل إليكم من ربكم"
— "তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যেটা নাজিল করা হয়েছে, সেটাই অনুসরণ করো" (সূরা আরাফ: ৩)

এখানে কি বলা হয়েছে: “রাসূল যা করেছে, চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করো”?
না! বরং অনুসরণ করতে বলা হয়েছে সেই বিধান যা আল্লাহ নাজিল করেছেন। আর সেটাই কুরআন।

বন্ধুগণ,
এখন আসুন ঐ হুজুরের বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশের দিকে তাকাই—তিনি বলেছেন: “জামাতে না পারলে একাকী হলেও ঈদের সালাত পড়া ফরয।”
আমি বলতে চাই—এটা কি কখনোও ইসলামের কথা হতে পারে?

ঈদের সালাত একটি বিশেষ ধরনের উৎসবের নামাজ, যা কেবলমাত্র জামাতে হয়। হাদীসে (যদি কেউ হাদীস মানে) এমনও বলা আছে যে ঈদের সালাতের সময় মসজিদ নয়, খোলা ময়দানে গমন করাই ছিল রাসূলের অভ্যাস। সেখানেই একত্রে সবাই জামাতে নামাজ পড়তেন। কিন্তু একাকী ঘরে বসে ঈদের সালাত? এটা কোথায়? কুরআনে নেই, সুন্নাহতেও নেই। শুধু অনুমান আর বানানো ফতোয়ার মাধ্যমে মানুষকে শৃঙ্খলিত করে রাখা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, এটা কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ! এটা ইসলামের নামে ধোঁকা!

আপনি যদি বলেন এটা “ফরয”, তাহলে আপনি আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছেন। কারণ আল্লাহ তা বলেননি। অথচ আল্লাহ বলেন:
> "ومن أظلم ممن افترى على الله كذبا"
— “তাদের চাইতে বড় যালিম আর কে, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে?” (সূরা আনআম: ২১)

বন্ধুগণ,
এটা এখন সময়—আমরা যেন চোখ খুলে দেখি। ইসলাম একমাত্র আল্লাহর দীন, এবং তার বিধান কেবল কুরআনে সংরক্ষিত। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন:
> "ونزلنا عليك الكتاب تبيانا لكل شيء"
— “আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি যাতে প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকে।” (সূরা নাহল: ৮৯)

তাহলে ঈদের সালাত যদি ফরয হতো, কুরআনে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতো। না থাকলে, সেটা ফরয নয়। সহজ কথা।
বন্ধুগণ, এখন একটি মৌলিক প্রশ্ন আপনাদের কাছে:
আপনি যদি ঈদের নামাজ না পড়েন, তাহলে কি আপনি গুনাহগার হবেন?

আমার উত্তর: না। কারণ আল্লাহ কোনো আদেশ দেননি। যেটার আদেশ নাই, সেটার অবাধ্যতাও নেই।
কিন্তু যদি কেউ আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ এসেছে বলে ভুয়া দাবি করে, তাহলে সে অবশ্যই গুনাহগার। সে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছে, শরিয়তে অতিরিক্ত বিধান তৈরি করছে। এই কাজকে কুরআনে বলা হয়েছে "ইন ইত্তাবিউনা ইল্লা যান্না"—“তারা অনুসরণ করে শুধু ধারণা ও কল্পনা” (সূরা আনআম: ১১৬)

বন্ধুগণ, আজ ইসলামকে ফিরিয়ে আনতে হবে তার মূল উৎসে—শুধু কুরআনে। হাদীস বা ফতোয়া দিয়ে শরিয়ত বানানো চলবে না। আমাদের নবী ছিলেন কুরআনের অনুসারী, কুরআনের বাহক। কুরআনের বাইরে কোনো ফরয সৃষ্টি করা তার কাজ নয়।

শেষ কথা বলি,
হুজুর যদি বলেন: "ঈদের সালাত পড়া উত্তম, প্রথা, সুন্নাহ বা উৎসবের অংশ"—তা হলেও কিছুটা মানা যেত। কিন্তু তিনি যখন বলেন: "ফরয", তখন তিনি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলছেন। আর সেটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ।
> আল্লাহ বলেন:
"وأن تقولوا على الله ما لا تعلمون" — “এবং আল্লাহর নামে এমন কিছু বলো না, যা তোমরা জানো না।” (সূরা আরাফ: ৩৩)

বন্ধুগণ, আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ কখনোই বরদাশতযোগ্য নয়। আমরা যেন এসব ভ্রান্ত দাবিকে চ্যালেঞ্জ করি, মানুষকে সজাগ করি এবং কুরআনকেই একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করি।

আসুন কুরআনের দিকে ফিরে যাই।
আসুন সত্যের পক্ষে দাঁড়াই।
আসুন ধর্মব্যবসায়ী হুজুরদের নয়, আল্লাহর কুরআনের কথা শুনি।
ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

إرسال تعليق

0 تعليقات