Subscribe Us

কুরবাণী? আত্মত্যাগ নাকি কসাইকর্ম?

 


কুরবাণী? আত্মত্যাগ নাকি কসাইকর্ম?

বন্ধুগণ,
কোরবানির নাম করে যারা শুধু গরুর গলা কাটে, তারা নিজের গলায় জমে থাকা পাপের রক্ত দেখেনি।
যারা ঈদের আগে পশুর দড়ি কেনে, তারা কি কখনো বিবেকের রশিতে নিজের নফসকে বেঁধেছে?
কে বলে গরু জবাই করলেই কোরবানি হয়?
যার মনের ভেতর পশু ঘুমিয়ে আছে, সে কী দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে?

বন্ধুগণ,
আজ কোরবানির নামে চলছে এক প্রহসন।
দেখো চারদিকে—
হাটে কোটি কোটি টাকার পশু,
আর মসজিদের পেছনের গলিতে অনাহারে দিন কাটানো শিশু।
একদল হেলান দিয়ে গরুর গায়ে মেহেদি লাগায়,
অন্যদল আল্লাহর রাস্তায় ত্যাগের শিক্ষা ভুলে
সেলফি তোলে রক্তাক্ত গরুর পাশেই!

বন্ধুগণ,
আল্লাহ কি চেয়েছিলেন এই রক্ত?
না কি তিনি চেয়েছিলেন ভেতরের পশুটার জবাই?
তোমার ঈমানের পরীক্ষায় গরু কাটতে বলেছিলেন? নাকি
বলেছিলেন ত্যাগ করো নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।
ইব্রাহিম (আঃ) তার ছেলেকে আল্লাহর পথে উৎসর্গে প্রস্তুত ছিলেন,
আর তুমি— এক পশু কাটার মধ্যেই ইবাদতের শেষ দেখে ফেললে?

বন্ধুগণ,
গরু কেটে যদি জান্নাত মিলত,
তাহলে কসাইরা হতো বেহেশতের প্রথম সারির লোক!
তাদের হাতে তো রক্ত শুকায় না,
তাদের জন্য কি আলাদা কোনো বেহেশত বরাদ্দ?

না, বন্ধুগণ!
আল্লাহ দেখেন হৃদয়ের তাকওয়া,
তোমার পশুর ওজন নয়, দাম নয়,
তোমার ভিতরের আত্মত্যাগ, তাওবা, আর অনুশোচনার অশ্রু—
এইগুলোই হয় তাঁর দরবারে কোরবানির কোরবানী।

বন্ধুগণ,
আজ কোরবানির নাম করে লোক দেখানো প্রতিযোগিতা।
কে কত দামি গরু আনলো—
এই নিয়ে আলোচনা মসজিদের বাইরে, চায়ের দোকানে, ফেসবুকের লাইভে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো— কে কত বড় ত্যাগ করলো তার গোপন পাপ থেকে?
কে ফেলে দিল ঘুষ খাওয়া টাকা?
কে কোরবানি করল নিজের অহংকার,
হিংসা, লোভ আর চোখের কামনা?

বন্ধুগণ,
এই যে তোমার মসজিদের প্রথম কাতারে নামাজ,
এই যে তোমার কণ্ঠে সুরেলা কোরআনের তেলাওয়াত,
এই যে তুমি হজে গেলে দু’বার, তিনবার—
এসব আল্লাহর দরবারে তখনই গৃহীত হবে
যখন তুমি কোরবানি দিবে নিজের মনের কুকুরটাকে।
যে কুকুর কামনা করে,
যে কুকুর লোভে ভোঁ ভোঁ করে,
যে কুকুর তাকওয়ার ঘরে ঢুকে ঘেউ ঘেউ করে।

বন্ধুগণ,
আজ কোরবানির ময়দানে নেই হৃদয়ের জবাই।
আছে ফ্যাশন, প্রতিযোগিতা, ফেসবুক পোস্ট।
আছে পশুর বাহারী নাম— রাজা, বাদশা, টাইটান, দানব, আগুন।
কিন্তু নেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সেই আগুন!
নেই বুকের ভেতরে ঈমানের সেই দাবানল
যা ইব্রাহিম (আঃ)-কে বানিয়েছিল যুগের শ্রেষ্ঠ ত্যাগী।

বন্ধুগণ,
মোল্লার দল আজ গলা চিরে বলে,
“কোরবানির পশু আল্লাহর বিধান।”
হ্যাঁ, ঠিক বলেছো!
কিন্তু বলো তো,
তোমরা কবে কোরবানি দিয়েছো সেই জাহেলি চেতনার
যা মজলুমের রক্তে ভিজে গিয়েছে শতাব্দী ধরে?

তোমাদের কোরবানি কি শুধু কসাইয়ের ছুড়ি পর্যন্ত?
না কি আরশের মালিকের কাছে আত্মত্যাগের অঙ্গীকার?

পরিত্যাগ যেখানে নিছক প্রদর্শনী নয়
বন্ধুগণ,
কুরবানির উদ্দেশ্য কখনও ছিল না লোক দেখানো আয়োজন।
এটা ছিল নিজেকে বদলানোর দিন,
নিজের ‘নফস’ নামের পশুকে জবাই করার মহাসময়।
কিন্তু আজ কী দেখি?
তুমি ত্যাগের নাম দিয়ে আয়োজন করো ভোজের,
ঈমানের পরীক্ষায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে হাসো গরুর রক্তের পাশে।
এই কি কুরবানি?

বন্ধুগণ,
আল্লাহ বলেন, “তোমাদের পশুর রক্ত বা মাংস আমার কাছে পৌঁছে না,
তোমাদের তাকওয়াই আমার কাছে পৌঁছে।”
তুমি কি তাকওয়া অর্জন করেছো,
না কি তাকওয়ার মুখোশ পরে আত্মপ্রচারের নাটক করছো?

বন্ধুগণ,
মনের পশু এখন তোমার ভেতরেই আছে—
লোভ, হিংসা, অহংকার, কাম, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা।
যখন সে গর্জন করে,
তুমি তার চুপ করানোর বদলে তাকে ঘি খাইয়ে বড় কর।

আল্লাহ কি বলেছিলেন এই পশুকে বড় করতে?
না, তিনি বলেছিলেন কোরবানি করো!
জবাই করো সেই পশুটিকে—
যে তোমাকে করে হিংস্র,
যে তোমাকে বানায় রক্তপিপাসু,
যে তোমাকে ঠেলে দেয় মজলুমের ঘাড়ে ছুরি চালাতে।

বন্ধুগণ,
এখনো সময় আছে—
তুমি জবাই করো তোমার ভেতরের ফেৎনা,
তুমি কোরবানি করো হালাল রুজির পথে ফিরতে গিয়ে হারাতে হতে পারে তোমার সেই ঘুষে বানানো কার-ফ্ল্যাট।
এটাই হবে প্রকৃত ত্যাগ।

বন্ধুগণ,
হজরত ইব্রাহিম (আঃ) নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন,
কারণ আল্লাহ তা চেয়েছিলেন।
তিনি প্রিয় সন্তানকে নয়,
আসলে নিজের ‘চাওয়া’কে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
আর তুমি?

তুমি নিজের বিলাসিতা কোরবানি দিতে পারো না,
তুমি একবেলা দামী মেনু বাদ দিতে পারো না,
তুমি এতটাই ব্যস্ত নিজের প্রদর্শনীতে
যে কুরবানির শিক্ষা তোমার ছুঁয়েও যায় না।

বন্ধুগণ,
তোমার কোরবানির গরু যদি পাশের দরিদ্র শিশুটির মুখে হাসি আনতে না পারে,
তবে সে গরু শুধু মাংস, কোরবানি নয়।
তোমার ছাগল যদি তোমার নিজের হিংস্রতা কমাতে না পারে,
তবে সে ছাগল শুধুই ভোজের অজুহাত।

বন্ধুগণ,
তুমি রোজা রাখো— কিন্তু গীবত ছাড়ো না।
তুমি নামাজ পড়ো— কিন্তু দুর্নীতি ছাড়ো না।
তুমি হজ করো— কিন্তু ফিরে এসে ব্যবসায় দালালি করো।
তুমি কুরবানি করো— কিন্তু নিজের নফসটাকে যত্নে রাখো যেন সে আবার লাফিয়ে উঠতে পারে ঈদের পরদিন!

এমন কোরবানি আল্লাহ চেয়েছেন?
না, বন্ধুগণ।
তিনি চেয়েছেন বদল।
তিনি চেয়েছেন এমন এক ঈমান
যা হালাল-হারামের পার্থক্য করে,
যা অন্তরে তাকওয়ার ভয় ঢেলে দেয়,
যা চোখকে নাজর থেকে, কানে গান থেকে, আর মুখকে মিথ্যা থেকে ফিরিয়ে আনে।

বন্ধুগণ,
আজকে আমাদের সমাজে জুলুমই কোরবানি চায়।
এই যে শিশুদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে কর্পোরেট পিশাচ,
এই যে নারীদের ভোগ্য পণ্যে রূপান্তর করে দিয়েছে মিডিয়া—
এই জুলুমের বিরুদ্ধে আজ যদি তুমি কোরবানি না দেও তোমার ভয়, তোমার স্বার্থপরতা, তোমার চুপচাপ থাকা—
তবে তোমার কোরবানির কোনো দাম নেই!

বন্ধুগণ,
যখন অন্যায় দেখেও চুপ থাক,
তখন তো তুমি নিজের বিবেকেরই গলা কাট।
আল্লাহ কি এমন কোরবানি চেয়েছেন—
যেখানে তুমি পশু জবাই কর, কিন্তু প্রতিবাদের আওয়াজ জবাই কর নিজে?

বন্ধুগণ,

তুমি আজ দাড়ি রেখেছো,
জোব্বা পরেছো,
পাঞ্জাবি গায়ে, মাথায় টুপি—
কিন্তু ভেতরে যে পশু বাস করে,
সে এখনও নষ্ট, নাফরমান, উগ্র, অহংকারী।
তাকে ছাড়ো,
তাকে কাটো,
তাকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করো।

বন্ধুগণ,
কুরবানির দিন আসলে হলো জবাইয়ের দিন—
তোমার মনের অন্ধকার,
তোমার গোপন পাপ,
তোমার অজুহাত,
তোমার আলসেমি,
তোমার দীনতা—
সব কিছুকে জবাই করো এই ঈদে।

বন্ধুগণ,
আজ মসজিদের সামনে কোরবানির মাংস পড়ে থাকে,
আর পেছনে মানুষের মন পড়ে থাকে ‘কত মাংস পেলাম’ তার হিসেব কষে।
এই কি কোরবানির শিক্ষা?

তোমার নফসকে না কাটলে,
তোমার জীবনের কোনো বদল না এলে,
তোমার চারিত্রিক দাগ মুছতে না পারলে—
তোমার কোরবানির রক্ত ধুয়ে দেবে না তোমার গুনাহ।

বন্ধুগণ,
এবার দাঁড়াও আয়নার সামনে।
জিজ্ঞেস করো নিজেকে—
এই কোরবানি কি আল্লাহর জন্য?
নাকি লোক দেখানোর জন্য?
তোমার প্রতিটি খরচ, পোস্ট, আয়োজন—
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কি না,
তোমার হৃদয় জানে।

বন্ধুগণ,
কোরবানির দিনে আল্লাহ আমাদের কাছে রক্ত চান না, মাংস চান না—
তিনি চান ত্যাগ।
তিনি চান, তাঁর বান্দা যেন পশু জবাইয়ের পাশাপাশি নিজের নফসের ত্যাগও করে।
এ যেন এক আত্মশুদ্ধির ঘোষণা—
যেখানে ত্যাগ আছে, ধৈর্য আছে, পরিবর্তন আছে।

এবারের কোরবানি হোক ভেতর থেকে।
এবারের কোরবানি হোক আসল কোরবানি—
যা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে,
আর আমাদের বদলে দেবে।


নিচে ৩০০০ শব্দের একটি গদ্য-কবিতার ঢংয়ে লেখা বক্তব্য উপস্থাপন করা হলো, যা কুরবানির প্রকৃত মর্ম, তাকওয়া, আত্মত্যাগ, অহংকার ভাঙা, সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ইখলাসের বাস্তবতা তুলে ধরে। প্রতিটি অনুচ্ছেদে কুরআনের আয়াতের বক্তব্যের প্রতিফলন থাকবে—তবে এবার ভাষা হবে আরও দৃঢ়, আরও প্রভাবশালী।

إرسال تعليق

0 تعليقات