“বন্ধুতা, বিভ্রান্তি ও কুরআন বর্জনের করুণ পরিণতি”
“হায়! আমি যদি রাসূলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করতাম!”— এক ভয়ঙ্কর আত্মদহন
আল্লাহ বলেন:
"وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا"
“সেদিন জালিম ব্যক্তি নিজের হাত কামড়ে বলবে, ‘হায়! আমি যদি রাসূলের সঙ্গে এক পথ অবলম্বন করতাম!’”
(সূরা আল-ফুরকান: ২৭)
“হায়! আমি যদি রাসূলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করতাম!”— এক ভয়ঙ্কর আত্মদহন
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের চোখের সামনে কেয়ামতের দিনের এক ভয়ংকর দৃশ্য তুলে ধরেছেন—যেখানে একজন জালিম ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে নিজের হাত কামড়ে কাঁদছে, আফসোস করছে, আর্তনাদ করছে। কিন্তু সে অনুশোচনার কোনো মূল্য থাকবে না। সময় তখন শেষ।
প্রশ্ন হলো—এই ‘জালিম’ কে?
এবং রাসূলের সাথে পথ অবলম্বন করা মানে কী?
১. “জালিম” কে?
জালিম মানে কেবল মানুষ হত্যা, সম্পদ লুণ্ঠন, বা অন্যের উপর অত্যাচার করা নয়। এই আয়াতে জালিম বলা হয়েছে তাকে, যে আল্লাহর কিতাব কুরআনকে বর্জন করেছে, অস্বীকার করেছে, অবজ্ঞা করেছে।
সে কুরআনের হুকুম মানেনি, কুরআনের আহকামকে তুচ্ছ করেছে, কুরআনের আলোকে জীবন গঠন করেনি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا"
“আর কে বেশি জালিম তার চেয়ে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াত দ্বারা উপদেশ দেওয়া হয়েছে, আর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?”
(সূরা সাজদাহ: ২২)
অতএব, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে না, বুঝে না, মানে না, জীবনের নীতিমালা হিসেবে গ্রহণ করে না—সে-ই প্রকৃত জালিম। সে-ই হবে কিয়ামতের দিনে সেই হতভাগা, যে নিজের হাত কামড়ে বলবে: “হায়! আমি যদি...”
২. রাসূলের সঙ্গে এক পথ মানে কী?
অনেকেই ভাবে রাসূলের পথ মানে হয়তো শুধু দাঁড়ি রাখা, জোব্বা পরা, আর সকাল বেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খাওয়া, এমন কিছু বাহ্যিক আমল। আবার কেউ কেউ মনে করেন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযির মত হাদিসের কিতাবগুলো মেনে চলা। কিন্তু বাস্তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসের অনুসরণ করতেন? তিনি কোন পথে চলতেন? তার চলার পথ কোনটি ছিল?
তিনি ছিলেন কুরআনের জীবন্ত নমুনা।
আয়িশা (রাঃ) যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো রাসূলুল্লাহর চরিত্র কেমন ছিল, তিনি বলেছিলেন:
"كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ" – “তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন।” (সহিহ মুসলিম)
অর্থাৎ, রাসূলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করার মানেই হচ্ছে কুরআনের পথ অবলম্বন করা।
যে ব্যক্তি কুরআনকে জীবনের মূলনীতি বানাবে না, সে রাসূলের পথে নেই। সে রাসুলের অনুসরণকারী নয়। রাসুলের অনুসরণ মানে হল রাসুল যে পথে চলেছেন সেই পথে চলা। আর রাসুল চলেছেন কুরআনের পথে।
❤️❤️❤️
৩. আজকের সমাজ: জালিমে ভরা
আসুন আমরা বাস্তবের দিকে তাকাই।
• আজ মুসলমান পরিচয় নিয়ে লাখো মানুষ আছে, যাদের কুরআনের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
• বাড়িতে কুরআন আছে, কিন্তু তা পাঠ করার মানুষ নাই, বুঝা তো দূরের কথা।
• অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানকে ইংরেজি শেখায়, কম্পিউটার শেখায়, কিন্তু কুরআন শেখাতে চায় না।
• অনেক যুবক সিনেমার ডায়ালগ মুখস্থ রাখে, কিন্তু কুরআনের একটি আয়াতও মুখস্থ করে না।
এই মানুষগুলোই সেই জালিম, যারা কুরআনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের জন্য কেয়ামতের দিন অনুশোচনার কোনো সুযোগ থাকবে না। তারা হাত কামড়ে বলবে, “হায়! আমি যদি রাসুলের সাথে কুরআনের পথ ধরতাম!”
৪. কুরআন বর্জনের ভয়াবহতা
কুরআনকে বর্জন মানে হচ্ছে—আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, তাঁর দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করা, এবং নিজের মনগড়া জীবন বেছে নেওয়া।
যখন কোনো মুসলমান কুরআন বর্জন করে, তখন তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। তার হৃদয় হয় কাঠের মতো কঠিন।
আল্লাহ বলেন:
"وَمَنْ يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَـٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَـٰنًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ"
“যে ব্যক্তি দয়াময়ের স্মরণ (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করি, সে-ই তার সঙ্গী হয়।”
(সূরা যুখরুফ: ৩৬)
অতএব, কুরআন বর্জনের ফলাফল হলো—শয়তানকে বন্ধু বানানো, ধ্বংসের পথ বেছে নেওয়া।
৫. রাসূলের অনুসরণ = কুরআনের অনুসরণ
আল্লাহর রাসূল সালামুন আলা মুহাম্মদ কুরআন ছাড়া এক কদমও চলতেন না। তাঁর প্রতিটি কাজ ছিল কুরআনের ব্যাখ্যা।
তাই যে ব্যাক্তি কুরআনের অনুসরণ করে না, তিনি রাসূলেরও অনুসরণ করছে না।
আল্লাহ বলেন:
"فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ"
“তোমরা আমার (রাসূলের) অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।”
(সূরা আলে ইমরান: ৩১)
যারা আজ রাসূলের নাম নেয়, কিন্তু কুরআন মানে না—তারা মিথ্যাবাদী। তারা মুখে রাসূলকে ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু তাঁর প্রকৃত জীবনদর্শনকে অস্বীকার করে।
৬. ভয়াবহ অনুশোচনা: বাস্তবতা ও পরিণতি
একদিন সেই সময় আসবে, যখন সময় ফুরিয়ে যাবে।
যখন দুনিয়ার মোহ, ক্ষমতা, অর্থ, ভোগ—সব শেষ হবে।
তখন জালিমরা হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলবে:
"হায়! আমি যদি রাসূলের সঙ্গে পথ অবলম্বন করতাম!"
কিন্তু তখন তারা দেখতে পাবে:
• তাদের জীবনের সব কাজ বাতিল হয়ে গেছে।
• কুরআনের কোনো আমল তাদের খাতায় নেই।
• রাসূলের পথ আল কুরআন তারা মান্য করেনি।
• তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শুধু আজাব অপেক্ষা করছে।
তাদের এই অনুশোচনার কোনো মূল্য থাকবে না। এই আর্তনাদ আর শোনা হবে না।
❤️❤️🔴🔴
৭. এখনই ফিরে আসার সময়
ভাই ও বোনেরা!
এই আয়াত আমাদের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কতা।
যারা আজ কুরআন ছাড়বে, কাল কিয়ামতের দিন তারা হাত কামড়াবে।
যারা আজ কুরআন বুকে নেবে, কাল তারা জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামতে ডুবে থাকবে।
এখনও সময় আছে:
• কুরআনকে জীবনের গাইড বানাও
• কুরআনের হুকুম মানো
• কুরআন শেখো, পড়ো, বোঝো, আমল করো
• কুরআনের আলোয় জীবন সাজাও
কারণ রাসূলের পথ মানেই কুরআনের পথ।
আর কুরআনের পথ মানেই মুক্তির পথ।
৮. সমাপ্তি: ফিরে আসো, হারিয়ে যাওয়ার আগে
আল্লাহর দয়া এখনো প্রবাহমান।
তাঁর দরজা এখনো খোলা।
তাঁর কিতাব এখনো তোমার সামনে।
তুমি কি এখনো মুখ ফিরিয়ে নেবে?
তুমি কি চাও হাশরের মাঠে আফসোস করতে? নিজের হাত দংশন করতে? আর এভাবে দুঃখ প্রকাস করতে? , “হায়! আমি যদি কুরআনের পথ ধরতাম!”?
না, নিশ্চয়ই এটা কেউ চায় না।
তবে আজই প্রতিজ্ঞা করো—আমি কুরআনের পথে চলব।
আমি রাসূলের সত্যিকার অনুসারী হব।
আমি সেই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব না, যারা কুরআনকে বর্জন করে।
এর পরের দুটি আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَا وَيْلَتَىٰ لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا
“হায় আফসোস! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!” (ফুরকান ২৮)
لَّقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي
“সে তো অবশ্যই আমাকে উপদেশ (কুরআন) আসার পর পথভ্রষ্ট করেছিল।” (ফুরকান ২৯)
এই আয়াত দুটি কিয়ামতের দিনের এক ভয়ংকর দৃশ্য তুলে ধরে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকবে, চুল ছিঁড়বে, বুকে আঘাত করবে, চোখ দিয়ে আগুনের মতো অশ্রু ঝরবে, আর চিৎকার করে বলবে—
“হায়! যদি আমি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধু না বানাতাম! সে-ই তো আমাকে কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল!”
প্রশ্ন হলো, এই “অমুক” কে?
সে হলো সেই ‘আলেম’, সেই বক্তা, সেই নেতা, সেই ‘পীর’, যাকে আমরা অন্ধভাবে অনুসরণ করেছিলাম। যার কথার উপর বিশ্বাস করে কুরআন পড়া বন্ধ করেছিলাম। যে বলেছিল:
“তোমার মতো সাধারণ মানুষ কুরআন বুঝতে পারবে না।”
“সে বলেছিলো কুরআন বুঝা, এটা আলেমদের কাজ।”
“সে বলেছিলো কুরআন বুঝতে ১৬ বছর কওমি মাদরাসায় পড়া লাগে।”
“সে বলেছিলো তাফসীর না জেনে কুরআন পড়া হারাম।”
“সে বলেছিলো কুরআন পড়লে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাবে, তাই আমার কথা মানো, দলের কথা মানো, মাদ্রাসার কথা মানো।”
এভাবে বলে এই বন্ধু আমাকে কুরআন থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছিলো। আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলো তাদের লিখিত বই, তাদের দল, তাদের মাজহাব, অসংখ্য ফেকা ও হাদিসের কিতাব।
"হায়! তাকে যদি বন্ধু না বানাতাম, তাকে যদি বিশ্বাস না করতাম"
আর আমরা কী করেছি?
আমরা কুরআন নামক আসমানী চিঠি ফেলে রেখে সেই লোকের কথায় আস্থা রেখেছি,
যার শরীরে এক ফোঁটা ‘ওহী’ নেই,
যে নিজের ব্যাখ্যাকে আল্লাহর বাণীর উপরে তুলে দিয়েছে।
অথচ আল্লাহ আগেই সতর্ক করে বলেছেন।
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ
“আমি তো কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। আছে কি কেউ উপদেশ গ্রহণকারী?” (সূরা ক্বামার – বারবার)
আল্লাহ যখন বলেন, “আমি সহজ করে দিয়েছি”, তখন কোন মুখে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে বলে:
“না, এটা কঠিন। আগে আরবি শিখো, ফিকহ পড়ো, ১৬ বছর মাদ্রাসায় পড়, এক গাদা হাদিসের কিতাব পড়, তারপর বুঝবে।”?
এটা কি কুরআনের বিপরীতে অবস্থান নয়? এটা কি আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা নয়?
এইসব ‘অমুক নামের’ বন্ধুরা আসলে কারা?
তারা এমন এক শ্রেণির মানুষ—
যারা ইসলামের ব্যানারে ব্যবসা করে,
মানুষকে কুরআন থেকে সরিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্ব, মতবাদ, মাজহাব বা দলীয় মতের দিকে ডাকে।
তারা চায় না মানুষ সরাসরি কুরআনের আলোয় আলোকিত হোক।
তারা জানে, একবার যদি সাধারণ মানুষ কুরআন বুঝতে শুরু করে,
তাহলে তাদের মনগড়া ফতোয়া আর চলবে না, তাদের দালালি ধরাশায়ী হয়ে যাবে।
তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কুরআন মুখস্ত করতে হয়, কিন্তু বুঝতে দেওয়া হয় না।
তারা হাদীস পড়ে, কিন্তু জীবন গঠন করে কিতাবের বাইরে।
তারা আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
তারা বলে, “পীর ছাড়া হেদায়াত নেই।”
তারা বলে, “আমার উস্তাদের উস্তাদ যা বলেন, সেটাই হক।”
তারা বলে, কুরআন নিজেরমত বুঝলে হবেনা।
তারা বলে, “আমরা যেভাবে বুঝি, সেভাবে বুঝতে হবে, সেটাই সত্য। অন্য কিছু বললে ফিতনা।”
আল্লাহর রাসুল (সালামুন আলা মুহাম্মাদ) কি এসব বলেছিলেন?
না! তিনি তো বলতেন:
"তোমাদের কাছে ১টি জিনিস রেখে যাচ্ছি: তা যদি দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব" (সহীহ মুসলিম)
রাসুল আমাদের কুরআনের দিকে ডাকতেন,
আর এই ‘অমুক নামের’ বন্ধুরা আমাদের কুরআন থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
কিয়ামতের দিন আফসোস করবে
সেই লোক, যে রাসুলের পথ ছেড়ে অন্যের পথ ধরেছিল।
সেই লোক, যে কুরআনকে বর্জন করে হুজুর, শায়েখ, পীর, বক্তা, দল ও মাজহাবের কথা শুনেছিল।
সে কিয়ামতের ময়দানে দাঁড়িয়ে বলবে—
“হায় আফসোস! যদি আমি অমুককে বন্ধু না বানাতাম।”
“সে-ই তো কুরআন আসার পর আমাকে কুরআন থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।”
“সে-ই বলেছিল—তুমি বুঝবে না।”
“সে-ই বলেছিল—তাফসীর ছাড়া পড়া হারাম।”
“সে-ই কুরআনকে আমার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল।”
বন্ধুরা! তবে কি দায় শুধু তাদেরি?
না! দায় তোমারও আছে, হে নামধারী মুসলিম!
তুমি কেন আল্লাহর কিতাব ছেড়ে মানুষের কথায় বিশ্বাস করলে?
তুমি কেন ভাবনি যে আল্লাহ তোমাকে কুরআনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন?
তোমার ঘরে কুরআন ছিল, তুমি খুলে দেখনি কেন?
বন্ধু! তোমাকেই বলছি,
১. কুরআনের কাছে ফিরে আসো।
২. নিজে পড়ে, বুঝে, চিন্তা করে আল্লাহর পথ ধরো।
৩. কারও কথায় কুরআনকে ত্যাগ করো না।
৪. ‘ফুলান’দের ভ্রান্ত ব্যাখ্যার বদলে কুরআনের সরল কথা বিশ্বাস করো।
আজ যারা কুরআন থেকে তোমাকে সরিয়ে রেখেছে,
তারা কিয়ামতের দিন তোমার কোনো উপকার করবে না।
তারা বলবে—“আমরা তো শুধু বলেছিলাম, তুমিতো নিজে বুঝে চলতে পারতে!”
আর তখন তোমার দাঁড়িয়ে শুধু একটাই কথাই বলার থাকবে—
“হায়! যদি আমি অমুককে বন্ধু না বানাতাম!”
তুমি কি চাও সেই আফসোসের মানুষ হতে? নাকি আজই ফিরে আসবে আল্লাহর কিতাবে?
সিদ্ধান্ত আজ তোমার হাতে। সিদ্ধান্ত তোমাকে আজকেই নিতে হবে। হাশরের দিন তোমার কোন সুযোগ থাকবে না।
হাশরের দিন রাসুল নিজেই তোমার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করবেন।
আল্লাহ বলেন:
وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَـٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا
“রাসূল বলবেন, হে আমার রব! আমার কওম এই কুরআনকে বর্জন করেছিল।” (ফুরকান ৩০)
কিয়ামতের দিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, মানবতার মুক্তির দূত, যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন কুরআনের আলো নিয়ে—
তিনি নিজেই আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করবেন!
কাদের বিরুদ্ধে?
আমাদের বিরুদ্ধে!
যারা নিজেদের ‘উম্মতে মুহাম্মদী’ বলে দাবি করতাম, কিন্তু রাসুলের রেখে যাওয়া কুরআনকে বর্জন করেছিলাম।
আমরা কুরআনকে কীভাবে বর্জন করেছি?
১. কুরআন পড়িনি:
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কুরআনের কোনো আয়াত পড়িনি।
কবরের পাশে পাঠ করা ছাড়া কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই।
২. কুরআন বুঝিনি, বুঝতে চাইওনি:
বলেছি: “বুঝি না, জানি না, শেখার সময় নেই।”
কিন্তু সিরিয়াল, সিনেমা, রাজনীতি—এসব বুঝতে সময় আছে!
৩. কুরআনকে হুকুমদাতা মানিনি:
জীবনের সিদ্ধান্ত নেই দল, বক্তা বা পরিবেশ দেখে,
কিন্তু কুরআন কী বলে, তা যাচাই করার প্রয়োজনই মনে করিনি।
৪. কুরআনের পরিবর্তে বক্তাদের কথা বিশ্বাস করেছি:
‘অমুক হুজুর বলেছেন’—এই কথার ওজন বেশি,
‘আল্লাহ বলেছেন’—এটা যেন কেবল দেয়ালে ঝুলানো কালিগ্রাফি।
৫. কুরআনের নামে ব্যবসা করেছি:
তিলাওয়াত করেছি পুরস্কারের জন্য,
ব্যাখ্যা করেছি নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য।
❤️
রাসুল (সা.)-এর অভিযোগ।
তিনি বলবেন না—“আমার উম্মত নামাজ ছাড়ে দিয়েছে।”
তিনি বলবেন না—“তারা গান শোনে, তারা মদ খায়।”
তিনি বলবেন—“ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَـٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا ” – তারা কুরআনকে বর্জন করেছিল!”
এই অভিযোগ হলো এমন এক অভিযোগ—
যা কিয়ামতের ভয়ানক পরিবেশে, সকল ওজর নাকচ করার পর,
আল্লাহর প্রিয় রাসুল নিজেই আমাদের বিরুদ্ধে তুলবেন!
তুমি কি ভাবো না?
• তোমার বাসায় কুরআন আছে, কিন্তু প্রতিদিন ফেসবুক খুলো, কুরআন না।
• তুমি ইসলামিক বক্তার ভিডিও দেখো, কিন্তু আল্লাহর নিজের কথা শোনো না।
• তুমি সালাতে কুরআনের আয়াত পড়ো, কিন্তু বাইরে বের হয়ে কুরআনের বিপরীত কাজ করো।
• তুমি মনে করো, কুরআন বোঝা আলেমদের কাজ; তাই নিজে কোনো দায়িত্ব নেও না।
এটা কি কুরআন বর্জন নয়?
‘বর্জন’ (مهجورًا) মানে শুধু না পড়া নয়।
ইবনে কাসীর (রহ.) ব্যাখ্যা করেছেন:
এই আয়াতে “বর্জন” (مهجورًا) মানে—
• কুরআন না শোনা,
• কুরআন না বোঝা,
• কুরআনের নির্দেশ না মানা,
• কুরআনের বিধানকে সমাজ থেকে দূরে রাখা,
• কুরআনের বদলে মতবাদকে প্রাধান্য দেওয়া।
সুতরাং, কুরআনকে শুধুই তিলাওয়াত করলেও, যদি তার বিধান মানি না—
তাও কুরআন বর্জনের মধ্যে পড়ে!
এই অভিযোগ থেকে কী শিক্ষা নিচ্ছি আমরা?
১. কুরআন শুধু তিলাওয়াতের জন্য নয়, বরং হিদায়াতের জন্য।
২. আমরা যত দ্রুত সম্ভব কুরআনের কাছে ফিরে না যাই, এই অভিযোগ আমাদের গায়েই লাগবে।
৩. আমরা যদি ভিন্ন কিছু অনুসরণ করি—দল, মত, বক্তা, পীর, কৃষ্টি—কিন্তু কুরআন অনুসরণ না করি, তাহলে রাসুল আমাদের বিরুদ্ধেই সাক্ষী হয়ে যাবেন।
একটি বাস্তব শোন:
একজন মুসলিম ঘরে জন্ম নিলো, নাম রাখল ‘আব্দুল্লাহ’।
বড় হলো, দাড়ি রাখল, মসজিদে গেল, আজওয়া খেজুরো খেলো,
কিন্তু কুরআনের ভাষা বুঝল না, চেষ্টা করল না।
নানা বক্তার ব্যাখ্যা শুনল, মাদ্রাসার তাফসীর মুখস্থ করল,
কিন্তু কুরআনের নিজস্ব বক্তব্য জানল না।
সেদিন রাসুল (সা.)-এর সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখ কিভাবে দেখাবে সে?
তুমি কি এই অভিযোগের মানুষ হতে চাও?
যদি না চাও, তাহলে এখনই সিদ্ধান্ত নাও:
১. কুরআন পড়া শুরু করো।
২. প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট কুরআনের বাংলা অনুবাদ পড়ো।
৩. আয়াত বুঝে চিন্তা করো—আল্লাহ এখানে কী বার্তা দিয়েছেন?
৪. কুরআনকে জীবনযাপনের মানদণ্ড বানাও।
সব শেষে অনুরোধ করছি,
রাসুল (সা.) যেন আমাদের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের পক্ষে সাক্ষী হন।
তাঁর মুখ থেকে যেন এই কথাটি না বের হয়:
"ইন্না কওমিত্তাখাযু হাযাল কুরআনা মাহজূরা!"
তুমি কি চাও না, কিয়ামতের দিনে তিনি যেন বলেন:
“হে আমার রব! আমার কওম কুরআনের আলোকে চলেছিল!”?
তবে ফিরে এসো কুরআনের দিকে। আজই। এখনই।
0 Comments